হাওর বার্তা ডেস্কঃ বন্যার্ত মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র থাকলেও গবাদি পশুর জন্য তা নেই। মানুষের জন্য ত্রাণ দেওয়া হলেও গবাদি পশুর জন্য সে রকম কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এ অবস্থায় গবাদি পশুর অবস্থা কেমন হতে পারে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই সঙ্গে মহাবিপদের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে খামারিদের। উত্তরবঙ্গ কাঁদছে। চারপাশে থইথই পানি। মাঝখানে এক টুকরো উঁচু ভূমি। এখানেই গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ।
কিন্তু এলাকার গবাদিপশুদের দিকে তাকানোর মতো কেউ নেই। শরৎ বাবুর মহেশ গল্পের প্রধান চরিত্রের মতো এখানকার পশু মালিকের চোখে শ্রাবণের মেঘ। এ মেঘ কবে সরবে, তা তারা জানেন না। জানার চেষ্টাও করেন না। এ মুহূর্তে তাদের ভাবনা একটিই, তাদের পশুকে তারা বাঁচাতে পারবে তো!
গবাদিপশুর বড় জোগান আসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে। বন্যার কারণে এসব এলাকার কৃষক ও খামারিদের অনেকে পানির দরে গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কেননা, গরু রাখার মতো তাদের কোনো জায়গা নেই। পাশাপাশি রয়েছে খাবার সংকট। আরো ভয়াবহ চিত্র ছাগল লালন-পালনকারীদের। বন্যা বা জলাবদ্ধতার কবলে পড়লে ছাগল দ্রুত রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। কার্যকারণেই পালনকারীরা তাদের ছাগলও কম দামে বিক্রি করে সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন।
কেবল জামালপুর জেলায় প্রায় আড়াই হাজার গরু-ছাগলের খামার রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০ খামারে বন্যার পানি উঠেছে। ফলে এসব খামারের গরু উঁচু স্থানে সরিয়ে নিতে হচ্ছে। কোরবানির হাট শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত গরু রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই অনেক খামারির। বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া তাদের জন্য আর কোনো পথ খোলা নেই।
আমিষ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। গত বছর কোরবানির হাটে প্রায় ১০ লাখ গরু উদ্বৃত্ত ছিল। সম্ভবত এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। ফলে গরুর বাজারমূল্য ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছে একটা সহনশীল পর্যায়ে থাকত। বিক্রেতা অর্থাৎ উৎপাদনকারীদের হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হতো না। কিন্তু এবারের বন্যা আমিষ উপাদনকারীদের সে স্বপ্ন কোরবানির হাটে পৌঁছানোর আগেই শেষ হয়ে গেল। পানির দরে ছেড়ে দিতে হলো তাদের উৎপাদিত পণ্য।
আমরা মনে করি, এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান খুবই জরুরি। কেননা, বন্যা এখন এ দেশের জন্য একটা নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর এখানে বন্যা হবে। আর ফি বছরই কৃষক ও খামারিরা একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন; তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সর্বাগ্রে সরকারকেই বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের বিকল্প চিন্তা করতে হবে। খামারিদের পাশে ইতিবাচক ভূমিকায় সহায়তা দিতে হবে। পাশাপাশি খামারিদেরও পুরোনো ভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে। এজন্য বন্যার সময় গো-খাদ্যের যে ঘাটতি দেখা দেয়, তা পূরণের জন্য আগাম সংগ্রহ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কথা ভাবতে হবে।
আমরা আশা করতেই পারি, অন্য অনেক পণ্যের মতো এখানেও সরকারকে একটি বিশেষ আপাত অনুদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র উৎপাদনকারীরা যেন তাদের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারেন, এটি আপাত ব্যবস্থা হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, স্থায়ী সমাধানের পথই উৎকৃষ্ট পথ।