ঢাকা ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মশা নিধনে আড়াইগুণ বাজেট বাড়লেও মেলেনি কার্যকর ওষুধ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৬:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০১৯
  • ২৭৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরজুড়ে মশার ওষুধ ছিটালেও তেমন সুফল পায়নি নগরবাসী। গত পাঁচ বছরে দুই সিটি করপোরেশনে মশা নিধনে বাজেট বেড়েছে আড়াই গুণ। কিন্তু মশার যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পায়নি রাজধানীবাসী। আইসিডিডিআর-বি’র গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ তথ্য, ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশন মারতে এতদিন যে ওষুধ ব্যবহার করছে তা অকার্যকর অর্থাৎ ওই ওষুধে মশা মরছে না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার ভয়াবহভাবে বেড়েছে ডেঙ্গু। একের পর এক প্রাণহানি ঘটেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মশক নিধনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের বাজেট ছিল ২১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এই খাতে দুই সিটিতে অর্ধশত কোটি টাকা খরচ করা হয়। এ খাতে গত পাঁচ বছরে দুই সিটি করপোরেশনের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বরাদ্দ বেড়েছে ১৩৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বরাদ্দ বেড়েছে ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ। দুই সিটি করপোরেশন চলতি অর্থবছরের বাজেট এখন পর্যন্ত ঘোষণা করেনি । তবে এ বছর মশক নিধনে বাজেট আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে দেশে প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে সব ধরনের মশা। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হলেও মশা মরছে না। এমন তথ্য উঠে এসছে আইসিডিডিআরবি’র এক গবেষণায়। সম্প্রতি ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশনের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক যৌথ বৈঠকে এ গবেষণাতথ্য উপস্থাপন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল-সিডিসির অর্থায়নে রাজধানী ঢাকা শহরে এ গবেষণা পরিচালিত হয়।

অকার্যকর জেনেও পুরোনো ওষুধই ব্যবহার করেছে দুই সিটি করপোরেশন । ওষুধ অকার্যকর হওয়ার বিষয়টি গবেষকেরা ১৪ মাস আগেই জানিয়ে সতর্ক করেছিলেন যে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ছিটানো ওষুধে মশা মরছে না। গবেষণা থেকে পাওয়া সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকা স্বত্বেও কর্তৃপক্ষ মশা মারার ওষুধ পরিবর্তনে পদক্ষেপ নেয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ওষুধ অকার্যকর হওয়ার কথা সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছেন।

আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিকল্প ওষুধের সুপারিশ করেনি। তাই আগের ওষুধই ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারি দুই সংস্থার পরস্পরের কাঁদা ছোড়াছুড়িতে থেমে থাকেনি ডেঙ্গুর বিস্তার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবেই ৯ হাজার ৬৫৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, বেসরকারি হিসেবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। তবুও লোকদেখানো সেই অকার্যকর ওষুধেই মশা মারার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দুই সিটি কর্পোরেশন। মশার ওষুধ পরিবর্তন করে জরুরী ভিত্তিতে নতুন কার্যকরী ওষুধ আনার কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না নগর কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ওষুধ কেনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এখনও কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই প্রস্তাবিত কোনো ওষুধের নাম জানায়নি সংশ্লিষ্টরা। চলতি সপ্তাহেও যদি কোনো ওষুধের নাম এবং স্যাম্পল আসে, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ কিনতে কমপক্ষে চার মাস সময় লাগবে।

তবে তার আগেই ফুরিয়ে যাবে ডেঙ্গুর মৌসুম। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভুগতে হবে অসংখ্য মানুষকে। বাড়বে প্রাণহানির ঘটনাও। ডেঙ্গুর ভয়াল থাবায় এরই মধ্যে ঝরে পড়েছে শতাধিক প্রাণ। আগামীতে এই প্রাণহানির ঘটনা আরও বাড়বে।

শত মানুষের অকালে মৃত্যুর দায় সরকারি সংস্থাগুলো এড়াবে কী করে!

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মশা নিধনে আড়াইগুণ বাজেট বাড়লেও মেলেনি কার্যকর ওষুধ

আপডেট টাইম : ০৬:০৬:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরজুড়ে মশার ওষুধ ছিটালেও তেমন সুফল পায়নি নগরবাসী। গত পাঁচ বছরে দুই সিটি করপোরেশনে মশা নিধনে বাজেট বেড়েছে আড়াই গুণ। কিন্তু মশার যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পায়নি রাজধানীবাসী। আইসিডিডিআর-বি’র গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ তথ্য, ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশন মারতে এতদিন যে ওষুধ ব্যবহার করছে তা অকার্যকর অর্থাৎ ওই ওষুধে মশা মরছে না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার ভয়াবহভাবে বেড়েছে ডেঙ্গু। একের পর এক প্রাণহানি ঘটেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মশক নিধনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের বাজেট ছিল ২১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এই খাতে দুই সিটিতে অর্ধশত কোটি টাকা খরচ করা হয়। এ খাতে গত পাঁচ বছরে দুই সিটি করপোরেশনের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বরাদ্দ বেড়েছে ১৩৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বরাদ্দ বেড়েছে ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ। দুই সিটি করপোরেশন চলতি অর্থবছরের বাজেট এখন পর্যন্ত ঘোষণা করেনি । তবে এ বছর মশক নিধনে বাজেট আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে দেশে প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে সব ধরনের মশা। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হলেও মশা মরছে না। এমন তথ্য উঠে এসছে আইসিডিডিআরবি’র এক গবেষণায়। সম্প্রতি ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশনের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক যৌথ বৈঠকে এ গবেষণাতথ্য উপস্থাপন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল-সিডিসির অর্থায়নে রাজধানী ঢাকা শহরে এ গবেষণা পরিচালিত হয়।

অকার্যকর জেনেও পুরোনো ওষুধই ব্যবহার করেছে দুই সিটি করপোরেশন । ওষুধ অকার্যকর হওয়ার বিষয়টি গবেষকেরা ১৪ মাস আগেই জানিয়ে সতর্ক করেছিলেন যে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ছিটানো ওষুধে মশা মরছে না। গবেষণা থেকে পাওয়া সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকা স্বত্বেও কর্তৃপক্ষ মশা মারার ওষুধ পরিবর্তনে পদক্ষেপ নেয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ওষুধ অকার্যকর হওয়ার কথা সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছেন।

আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিকল্প ওষুধের সুপারিশ করেনি। তাই আগের ওষুধই ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারি দুই সংস্থার পরস্পরের কাঁদা ছোড়াছুড়িতে থেমে থাকেনি ডেঙ্গুর বিস্তার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবেই ৯ হাজার ৬৫৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, বেসরকারি হিসেবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। তবুও লোকদেখানো সেই অকার্যকর ওষুধেই মশা মারার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দুই সিটি কর্পোরেশন। মশার ওষুধ পরিবর্তন করে জরুরী ভিত্তিতে নতুন কার্যকরী ওষুধ আনার কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না নগর কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ওষুধ কেনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এখনও কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই প্রস্তাবিত কোনো ওষুধের নাম জানায়নি সংশ্লিষ্টরা। চলতি সপ্তাহেও যদি কোনো ওষুধের নাম এবং স্যাম্পল আসে, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ কিনতে কমপক্ষে চার মাস সময় লাগবে।

তবে তার আগেই ফুরিয়ে যাবে ডেঙ্গুর মৌসুম। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভুগতে হবে অসংখ্য মানুষকে। বাড়বে প্রাণহানির ঘটনাও। ডেঙ্গুর ভয়াল থাবায় এরই মধ্যে ঝরে পড়েছে শতাধিক প্রাণ। আগামীতে এই প্রাণহানির ঘটনা আরও বাড়বে।

শত মানুষের অকালে মৃত্যুর দায় সরকারি সংস্থাগুলো এড়াবে কী করে!