ঢাকা ১০:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক নদী কনভেনশন ও বাংলাদেশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫২:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৫
  • ১০২৬ বার

জাতিসঙ্ঘ আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশন UN Convention on Non-Navigation Uses of International Water Courses (UN Water Courses Convention) গৃহীত হয় ২১ মে ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদের সভায়। কনভেনশনের পক্ষে ১০৩টি দেশ ভোট দেয়। তিনটি দেশ এর বিরোধিতা করে। তবে পাকিস্তান ও ভারত ভোটদানে বিরত থাকে। চীন, তুরস্ক ও বুরুন্ডি এ কনভেনশনের বিরোধিতা করে। অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করতে সম্মতি জানায়নি। অথচ বাংলাদেশের জন্য এ চুক্তি অত্যন্ত জরুরি। কনভেনশনটি গৃহীত হওয়ার পর সদস্যরাষ্ট্রগুলো কর্তৃক এটি অনুসমর্থন, গ্রহণ, অনুমোদন বা সংযোজনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। ৩৫টি দেশ স্বাক্ষর করায় তা আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয়।
বিশ্ব ওয়াটার ফোরাম (WWF) সারা বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোকে ১৯৯৭ সালের কনভেনশন কার্যকর করার আহ্বান জানায়। নৌচলাচল ছাড়া পানিপ্রবাহ ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ আইন কার্যকর হয়। শতাধিক দেশ এই নীতি কার্যকরে মিলিত হয়। একটি নমনীয় ও কার্যকরী গ্লোবাল লিগ্যাল আইন করার জন্য তারা সম্মেলনে বসে। এর উদ্দেশ্য ছিল মূল ভিত্তির ওপর প্রয়োজনীয় আইন করা, যার ফলে আন্তর্জাতিক নদীর প্রবাহ থেকে দেশগুলো উপকৃত হয়। ওই নদীর রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার প্রবাহিত নদীর দেশগুলো দায়িত্ব নেয়। এই আইন ১৭ আগস্ট ২০১৪ কার্যকর হয়। ২০০৬ সালে বিশ্ব পানি ফোরাম এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া শুরু করে। বিশ্বব্যাপী নদীর পানি প্রবাহিত দেশগুলোতে পানি কিভাবে ব্যবহার হবে, সে ব্যাপারে গাইডলাইন তৈরি করে। এটি যাতে সারা বিশ্ব মেনে চলে তার জন্য রাষ্ট্রগুলোকে বিশেষভাবে অনুরোধ করে। জাতিসঙ্ঘ এ ব্যাপারে বেশ তৎপরতা দেখাতে থাকে। জাতিসঙ্ঘ উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন সরকারকে তা কার্যকর করার ব্যবস্থা করে। সরকার ও অন্য ব্যবহারকারীরা যৌথভাবে এটি প্রতিপালনের ব্যবস্থা করবে। এর দ্বারা মানুষের মধ্যে সচেতনতা, দক্ষতা বৃদ্ধিসহ আগ্রহী দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা বাড়ানোর চেষ্টা চলে।
বিশ্বের জনবসতির শতকরা ৪০ ভাগ লোক নদীতীর ও লেকের পাড়ে বাস করে। দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর বিচ্ছিন্ন এলাকায় শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ বাস করে। বর্তমান বিশ্বের ২৭৬টি আন্তর্জাতিক নদী ও লেক বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জমিজুড়ে আছে। ওই নদীগুলো বিশ্বের মোট পানিপ্রবাহের শতকরা ৬০ ভাগ মিঠা পানির জোগান দেয়।
১৪৮টি দেশের সীমানা ওই সব নদীর বেসিন (Basin) এলাকায় অবস্থিত এবং ২১টি দেশের পুরো এলাকাই নদীর বেসিন এলাকায় অবস্থিত। এ ছাড়া বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। এই জনবসতি ৩০০টি বিশ্বব্যাপী মাটির তলার পানি জোন (Aquifer) বাস করে। বিভিন্ন দেশের জনগণকে এই আন্তর্জাতিক বেসিন ও একুইফারে তাদের জীবনধারণেও আর্থিক সচলতার জন্য নির্ভর করতে হয়। সব আন্তর্জাতিক নদী, লেক হাইড্রোলজিক্যাল, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একটির সাথে আরেকটি অঙ্গাঙ্গি জড়িত। তারা অর্থনৈতিক উন্নতি, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও এর সাথে জড়িত।
তবে এসব কাজ তত সহজ নয়। নদীর পানি নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকে। তবে সৎ উদ্দেশ্য থাকলে সেসব বিরোধ মিটিয়ে ফেলা যায়। বিশ্বে এ রকম শত শত উদাহরণ আছে। আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান ও সহমর্মিতা থাকলে তা কোনো বাধা নয়। তবে এ রকম যেন না হয় যে ‘বিচার মানি তবে তালগাছটি আমার।’
আমরা আমাদের বক্তব্যে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে এই কনভেনশনের প্রাসঙ্গিকতা ও উপযোগিতা নিয়ে আলোকপাত করব। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা ছিল, সে চুক্তির বিষয়বস্তু রহস্যজনক কারণে আমাদের কাছে আজো অজ্ঞাত রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারে এতে রাখঢাকের কী আছে। সরকারের উচিত জনগণকে চুক্তির বিষয়গুলো অবহিত করা। ওই চুক্তি আমাদের পক্ষে আসবে কি না তা জনগণের জানার অধিকার আছে।
২০১১ সালের শুষ্ক মওসুমে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির গজলডোবা ব্যারাজ থেকে কোনো পানি অবমুক্ত করেনি। গজলডোবার ৭০ কিমি ভাটিতে পুনর্ভরণকৃত প্রবাহ থেকে যৎসামান্য পানি পাওয়া যাচ্ছে, যা তিস্তা সেচপ্রকল্পের চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তিস্তা একটি আন্তঃদেশীয় নদী। সে কারণে এর অববাহিকার জনগোষ্ঠী কর্তৃক এ নদীর পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু আন্তর্জাতিক রীতিনীতি আছে। এখানেই আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশনের প্রাসঙ্গিকতা। কনভেনশনের ধারা-২-এ বলা হয়েছে, (ধ) পানিপ্রবাহ মানে হলো যে পদ্ধতিতে ওপরের পানি ও ভূগর্ভস্থ পানি তাদের মধ্যে সম্বন্ধ সৃষ্টি করে প্রবাহিত হয় সে অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সর্বসাধারণের জন্য; (ন) আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ তাকে বলে যা একই নদী বিভিন্ন দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত।’
তিস্তা ভারত-বাংলাদেশের ৫৪টি আন্তঃদেশীয় নদীর মধ্যে অন্যতম। তিস্তার ভূ-উপরিস্থিত ভূগর্ভস্থ সামগ্রিক জলগুলোর মোট আয়তন ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার, এর মধ্যে ১০ হাজার বর্গকিমি ভারতের (সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ) এবং ২০ হাজার বর্গকিমি বাংলাদেশের। আমাদের বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানিসম্পদ এই তিস্তা বেসিনের অন্তর্গত।
কনভেনশনের ধারা ৫-এ বলা হয়েছে- ‘(র) পানি প্রবাহিত অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো তাদের সীমানায় আন্তর্জাতিক বিধিবিধান মেনে তার পানি ব্যবহার করবে। তাতে স্বচ্ছতা, সমতা অনুসরণ করে ব্যবহার করতে হবে। প্রাপ্য পানির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে। যেসব রাষ্ট্র প্রবাহিত নদীর পানি ব্যবহার করবে তারা ডেভেলপ করবে এবং সর্বোচ্চ পানির প্রবাহ নিশ্চিত করবে। পানির সদ্ব্যবহার হতে হবে। পানি ব্যবহারের সময় সব রাষ্ট্রের চাহিদার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনো রাষ্ট্রের স্বার্থের ক্ষুণœ করতে পারবে না।’
তাই এই কনভেনশন রাষ্ট্র নির্বিশেষে আন্তর্জাতিক নদী অববাহিকার জনগোষ্ঠীকে অধিকার দিচ্ছে নাব্যতা ও ক্ষমতার ভিত্তিতে এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে অভিন্ন নদীর পানিসম্পদ ব্যবহারের। ৭-এর ধারায় বলছে, ‘নদীটি প্রবাহিত রাষ্ট্রগুলোর আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহের ব্যবহারে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে, যাতে নদীর গতিপথের কোনো পরিবর্তন না হয় এবং অন্য রাষ্ট্রের প্রবাহিত বেসিনের কোনো ক্ষতি না হয়।’ অর্থাৎ এই জনসম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্য দেশের জনগোষ্ঠীর যেন কোনো প্রকারের প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি বা করুণার শিকার না হয়, সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। তাই কনভেনশনের এই ধারাটি একটি অভিন্ন নদীর প্রবাহের ওপরে ঐতিহাসিকভাবে নির্ভরশীল অববাহিকাবাসীর অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করে।
ভারত ইতোমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ ও গঙ্গা নদীর ওপরে বাঁধ-ব্যারাজ নির্মাণ করেছে। আরো অনেক বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণাধীন আছে। এসব কার্যক্রম নদীগুলোর আবহমান প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে ভিন্ন অববাহিকায় পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশে পরিবেশের ভারসাম্য বহুলাংশে নষ্ট হয়েছে এবং মরুময়তার আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
কনভেশন ধারার ৭-এর (২) বলা হয়েছে, কোনো রাষ্ট্রের একতরফা পানি ব্যবহারের ফলে অন্য রাষ্ট্রের ক্ষতি হলে তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো চুক্তি না থাকলে যার দ্বারা ক্ষতি হয়েছে তাকে এ ক্ষতির ন্যায্য হিস্যা বহন করতে হবে, আর এ ধরনের ক্ষতি যাতে ভবিষ্যতে না হয় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে ধারা ৫ ও ৬ এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাই বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার রয়েছে অভিন্ন নদীগুলোর ওপরে বাঁধ ব্যারাজের দ্বারা সৃষ্ট সামগ্রিক ক্ষতিপূরণের দাবি উত্থাপন করার।
পানির স্বল্পতা ও খরার কারণে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন, বৃদ্ধি পাচ্ছে জলসেচ খরচ, ধ্বংস হচ্ছে মিঠা পানির মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, লবণাক্ত পানি দেশের অভ্যন্তরে বাসাবাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন লবণাক্ত পানির কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নদীতে কাছের উৎপাদন লবণাক্ততার কারণে মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে। মানুষের খাদ্য-শৃঙ্খলের ক্ষতিসহ অনেক স্থল ও জলজ প্রাণীর আবাসভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের। জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, সর্বোপরি জনজীবনের ওপর এসব ক্ষতির সামগ্রিক পরিমাণ নিরূপণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
ভারত সব সময় বলে আসছে তারা এমন কোনো কাজ করবে না, যাতে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হয়। কিন্তু তাদের প্রকৃতিবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড অর্থাৎ বাঁধ ও ব্যারাজ বাংলাদেশের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে, অথচ তারা তাদের আপ্তবাক্য আওড়ে যাচ্ছে। ভারত কেবল অভিন্ন নদীগুলোর ওপর বাঁধই দিচ্ছে না, আন্তঃনদী সংযোগ অঞ্চলের মাধ্যমে তাদের পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে সব ক’টি হিমালয়বাহিত নদীর পানি প্রত্যাহার করছে। পরিবেশ ও প্রকৃতিবিরোধী এ প্রকল্প বাঁধ অববাহিকায় অদূরভবিষ্যতে মহা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও দুর্যোগ সৃষ্টি করবে।
কনভেশনের ধারা ১১তে বলা হয়েছে, “Water Course stator Shall exchange information and Consult each She and if necessary, negotiate on the possible effects of planned measures on the Condition of an intentional water course.” আমাদের যৌথ নদী কমিশন এ বিষয়ে কার্যকর কিছু করছে বলে মনে হয় না।
অভিন্ন নদী অববাহিকায় বসবাসকারী এবং জীবনযাত্রার জন্য নদীপ্রবাহের ওপর হাজার বছর ধরে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রকৃতিগত ও ঐতিহাসিক। কিন্তু সরকারগুলো উন্নয়নের নামে বা অন্যদের সুবিধা প্রদানের জন্য নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহের ওপর বাধা সৃষ্টি করে অববাহিকাবাসী জনগোষ্ঠীর নদীপ্রবাহের ওপর অধিকার খর্ব করে চলছে। তাই প্রকৃতির প্রতিশোধ তো অনিবার্য। দেশে দেশে আজ খরা, বন্যা, মরুময়, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি ঘটেই চলেছে। কনভেনশনের ১২ ধারায় বলা হয়েছে যে- ‘কোনো একটি পানিবাহিত রাষ্ট্র কোনো পরিকল্পনা কার্যকর করতে গেলে বা কাউকে কিছু কার্যকর করতে দিলে তাতে যদি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পানিপ্রবাহে উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি হয়, তবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্যাদি তাদেরকে অবহিত করতে হবে। এ ধরনের তথ্য প্রদানের সাথে কারিগরি ডাটা, তথ্যাবলিসহ পানি পরিবেশের ওপর তার প্রতিক্রিয়া বিস্তারিতভাবে অবহিত করবে, যাতে করে তথ্যপ্রাপ্ত দেশটি সময় মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে।’ কিন্তু ভারত কি তিস্তা ও টিপাইমুখ ড্যামের কোনো তথ্য বাংলাদেশকে দিয়েছে? জবাব একবাক্যে না।
ভূরাজনৈতিক, রাজনৈতিক ও বিবিধ কারণে বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান ভারত বেশ জটিল করে তুলেছে। তবে সমাধানের অযোগ্য নয়। প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বের মর্যাদা রক্ষার মনোভাব। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমাধানের প্রচেষ্টা অগ্রাধিকারযোগ্য। তবে বাংলাদেশের জন্য আলোচ্য কনভেশনে সম্মতি ও স্বাক্ষর প্রদান করে আন্তর্জাতিক আইনের সুযোগ গ্রহণ করে সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়া অধিকতর সুবিধাজনক ও যুক্তিযুক্ত।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

আন্তর্জাতিক নদী কনভেনশন ও বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ১১:৫২:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

জাতিসঙ্ঘ আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশন UN Convention on Non-Navigation Uses of International Water Courses (UN Water Courses Convention) গৃহীত হয় ২১ মে ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদের সভায়। কনভেনশনের পক্ষে ১০৩টি দেশ ভোট দেয়। তিনটি দেশ এর বিরোধিতা করে। তবে পাকিস্তান ও ভারত ভোটদানে বিরত থাকে। চীন, তুরস্ক ও বুরুন্ডি এ কনভেনশনের বিরোধিতা করে। অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করতে সম্মতি জানায়নি। অথচ বাংলাদেশের জন্য এ চুক্তি অত্যন্ত জরুরি। কনভেনশনটি গৃহীত হওয়ার পর সদস্যরাষ্ট্রগুলো কর্তৃক এটি অনুসমর্থন, গ্রহণ, অনুমোদন বা সংযোজনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। ৩৫টি দেশ স্বাক্ষর করায় তা আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয়।
বিশ্ব ওয়াটার ফোরাম (WWF) সারা বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোকে ১৯৯৭ সালের কনভেনশন কার্যকর করার আহ্বান জানায়। নৌচলাচল ছাড়া পানিপ্রবাহ ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ আইন কার্যকর হয়। শতাধিক দেশ এই নীতি কার্যকরে মিলিত হয়। একটি নমনীয় ও কার্যকরী গ্লোবাল লিগ্যাল আইন করার জন্য তারা সম্মেলনে বসে। এর উদ্দেশ্য ছিল মূল ভিত্তির ওপর প্রয়োজনীয় আইন করা, যার ফলে আন্তর্জাতিক নদীর প্রবাহ থেকে দেশগুলো উপকৃত হয়। ওই নদীর রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার প্রবাহিত নদীর দেশগুলো দায়িত্ব নেয়। এই আইন ১৭ আগস্ট ২০১৪ কার্যকর হয়। ২০০৬ সালে বিশ্ব পানি ফোরাম এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া শুরু করে। বিশ্বব্যাপী নদীর পানি প্রবাহিত দেশগুলোতে পানি কিভাবে ব্যবহার হবে, সে ব্যাপারে গাইডলাইন তৈরি করে। এটি যাতে সারা বিশ্ব মেনে চলে তার জন্য রাষ্ট্রগুলোকে বিশেষভাবে অনুরোধ করে। জাতিসঙ্ঘ এ ব্যাপারে বেশ তৎপরতা দেখাতে থাকে। জাতিসঙ্ঘ উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন সরকারকে তা কার্যকর করার ব্যবস্থা করে। সরকার ও অন্য ব্যবহারকারীরা যৌথভাবে এটি প্রতিপালনের ব্যবস্থা করবে। এর দ্বারা মানুষের মধ্যে সচেতনতা, দক্ষতা বৃদ্ধিসহ আগ্রহী দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা বাড়ানোর চেষ্টা চলে।
বিশ্বের জনবসতির শতকরা ৪০ ভাগ লোক নদীতীর ও লেকের পাড়ে বাস করে। দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর বিচ্ছিন্ন এলাকায় শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ বাস করে। বর্তমান বিশ্বের ২৭৬টি আন্তর্জাতিক নদী ও লেক বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জমিজুড়ে আছে। ওই নদীগুলো বিশ্বের মোট পানিপ্রবাহের শতকরা ৬০ ভাগ মিঠা পানির জোগান দেয়।
১৪৮টি দেশের সীমানা ওই সব নদীর বেসিন (Basin) এলাকায় অবস্থিত এবং ২১টি দেশের পুরো এলাকাই নদীর বেসিন এলাকায় অবস্থিত। এ ছাড়া বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। এই জনবসতি ৩০০টি বিশ্বব্যাপী মাটির তলার পানি জোন (Aquifer) বাস করে। বিভিন্ন দেশের জনগণকে এই আন্তর্জাতিক বেসিন ও একুইফারে তাদের জীবনধারণেও আর্থিক সচলতার জন্য নির্ভর করতে হয়। সব আন্তর্জাতিক নদী, লেক হাইড্রোলজিক্যাল, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একটির সাথে আরেকটি অঙ্গাঙ্গি জড়িত। তারা অর্থনৈতিক উন্নতি, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও এর সাথে জড়িত।
তবে এসব কাজ তত সহজ নয়। নদীর পানি নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকে। তবে সৎ উদ্দেশ্য থাকলে সেসব বিরোধ মিটিয়ে ফেলা যায়। বিশ্বে এ রকম শত শত উদাহরণ আছে। আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান ও সহমর্মিতা থাকলে তা কোনো বাধা নয়। তবে এ রকম যেন না হয় যে ‘বিচার মানি তবে তালগাছটি আমার।’
আমরা আমাদের বক্তব্যে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে এই কনভেনশনের প্রাসঙ্গিকতা ও উপযোগিতা নিয়ে আলোকপাত করব। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা ছিল, সে চুক্তির বিষয়বস্তু রহস্যজনক কারণে আমাদের কাছে আজো অজ্ঞাত রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারে এতে রাখঢাকের কী আছে। সরকারের উচিত জনগণকে চুক্তির বিষয়গুলো অবহিত করা। ওই চুক্তি আমাদের পক্ষে আসবে কি না তা জনগণের জানার অধিকার আছে।
২০১১ সালের শুষ্ক মওসুমে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির গজলডোবা ব্যারাজ থেকে কোনো পানি অবমুক্ত করেনি। গজলডোবার ৭০ কিমি ভাটিতে পুনর্ভরণকৃত প্রবাহ থেকে যৎসামান্য পানি পাওয়া যাচ্ছে, যা তিস্তা সেচপ্রকল্পের চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তিস্তা একটি আন্তঃদেশীয় নদী। সে কারণে এর অববাহিকার জনগোষ্ঠী কর্তৃক এ নদীর পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু আন্তর্জাতিক রীতিনীতি আছে। এখানেই আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশনের প্রাসঙ্গিকতা। কনভেনশনের ধারা-২-এ বলা হয়েছে, (ধ) পানিপ্রবাহ মানে হলো যে পদ্ধতিতে ওপরের পানি ও ভূগর্ভস্থ পানি তাদের মধ্যে সম্বন্ধ সৃষ্টি করে প্রবাহিত হয় সে অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সর্বসাধারণের জন্য; (ন) আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ তাকে বলে যা একই নদী বিভিন্ন দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত।’
তিস্তা ভারত-বাংলাদেশের ৫৪টি আন্তঃদেশীয় নদীর মধ্যে অন্যতম। তিস্তার ভূ-উপরিস্থিত ভূগর্ভস্থ সামগ্রিক জলগুলোর মোট আয়তন ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার, এর মধ্যে ১০ হাজার বর্গকিমি ভারতের (সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ) এবং ২০ হাজার বর্গকিমি বাংলাদেশের। আমাদের বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানিসম্পদ এই তিস্তা বেসিনের অন্তর্গত।
কনভেনশনের ধারা ৫-এ বলা হয়েছে- ‘(র) পানি প্রবাহিত অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো তাদের সীমানায় আন্তর্জাতিক বিধিবিধান মেনে তার পানি ব্যবহার করবে। তাতে স্বচ্ছতা, সমতা অনুসরণ করে ব্যবহার করতে হবে। প্রাপ্য পানির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে। যেসব রাষ্ট্র প্রবাহিত নদীর পানি ব্যবহার করবে তারা ডেভেলপ করবে এবং সর্বোচ্চ পানির প্রবাহ নিশ্চিত করবে। পানির সদ্ব্যবহার হতে হবে। পানি ব্যবহারের সময় সব রাষ্ট্রের চাহিদার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনো রাষ্ট্রের স্বার্থের ক্ষুণœ করতে পারবে না।’
তাই এই কনভেনশন রাষ্ট্র নির্বিশেষে আন্তর্জাতিক নদী অববাহিকার জনগোষ্ঠীকে অধিকার দিচ্ছে নাব্যতা ও ক্ষমতার ভিত্তিতে এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে অভিন্ন নদীর পানিসম্পদ ব্যবহারের। ৭-এর ধারায় বলছে, ‘নদীটি প্রবাহিত রাষ্ট্রগুলোর আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহের ব্যবহারে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে, যাতে নদীর গতিপথের কোনো পরিবর্তন না হয় এবং অন্য রাষ্ট্রের প্রবাহিত বেসিনের কোনো ক্ষতি না হয়।’ অর্থাৎ এই জনসম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্য দেশের জনগোষ্ঠীর যেন কোনো প্রকারের প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি বা করুণার শিকার না হয়, সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। তাই কনভেনশনের এই ধারাটি একটি অভিন্ন নদীর প্রবাহের ওপরে ঐতিহাসিকভাবে নির্ভরশীল অববাহিকাবাসীর অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করে।
ভারত ইতোমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ ও গঙ্গা নদীর ওপরে বাঁধ-ব্যারাজ নির্মাণ করেছে। আরো অনেক বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণাধীন আছে। এসব কার্যক্রম নদীগুলোর আবহমান প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে ভিন্ন অববাহিকায় পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশে পরিবেশের ভারসাম্য বহুলাংশে নষ্ট হয়েছে এবং মরুময়তার আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
কনভেশন ধারার ৭-এর (২) বলা হয়েছে, কোনো রাষ্ট্রের একতরফা পানি ব্যবহারের ফলে অন্য রাষ্ট্রের ক্ষতি হলে তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো চুক্তি না থাকলে যার দ্বারা ক্ষতি হয়েছে তাকে এ ক্ষতির ন্যায্য হিস্যা বহন করতে হবে, আর এ ধরনের ক্ষতি যাতে ভবিষ্যতে না হয় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে ধারা ৫ ও ৬ এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাই বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার রয়েছে অভিন্ন নদীগুলোর ওপরে বাঁধ ব্যারাজের দ্বারা সৃষ্ট সামগ্রিক ক্ষতিপূরণের দাবি উত্থাপন করার।
পানির স্বল্পতা ও খরার কারণে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন, বৃদ্ধি পাচ্ছে জলসেচ খরচ, ধ্বংস হচ্ছে মিঠা পানির মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, লবণাক্ত পানি দেশের অভ্যন্তরে বাসাবাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন লবণাক্ত পানির কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নদীতে কাছের উৎপাদন লবণাক্ততার কারণে মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে। মানুষের খাদ্য-শৃঙ্খলের ক্ষতিসহ অনেক স্থল ও জলজ প্রাণীর আবাসভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের। জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, সর্বোপরি জনজীবনের ওপর এসব ক্ষতির সামগ্রিক পরিমাণ নিরূপণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
ভারত সব সময় বলে আসছে তারা এমন কোনো কাজ করবে না, যাতে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হয়। কিন্তু তাদের প্রকৃতিবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড অর্থাৎ বাঁধ ও ব্যারাজ বাংলাদেশের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে, অথচ তারা তাদের আপ্তবাক্য আওড়ে যাচ্ছে। ভারত কেবল অভিন্ন নদীগুলোর ওপর বাঁধই দিচ্ছে না, আন্তঃনদী সংযোগ অঞ্চলের মাধ্যমে তাদের পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে সব ক’টি হিমালয়বাহিত নদীর পানি প্রত্যাহার করছে। পরিবেশ ও প্রকৃতিবিরোধী এ প্রকল্প বাঁধ অববাহিকায় অদূরভবিষ্যতে মহা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও দুর্যোগ সৃষ্টি করবে।
কনভেশনের ধারা ১১তে বলা হয়েছে, “Water Course stator Shall exchange information and Consult each She and if necessary, negotiate on the possible effects of planned measures on the Condition of an intentional water course.” আমাদের যৌথ নদী কমিশন এ বিষয়ে কার্যকর কিছু করছে বলে মনে হয় না।
অভিন্ন নদী অববাহিকায় বসবাসকারী এবং জীবনযাত্রার জন্য নদীপ্রবাহের ওপর হাজার বছর ধরে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রকৃতিগত ও ঐতিহাসিক। কিন্তু সরকারগুলো উন্নয়নের নামে বা অন্যদের সুবিধা প্রদানের জন্য নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহের ওপর বাধা সৃষ্টি করে অববাহিকাবাসী জনগোষ্ঠীর নদীপ্রবাহের ওপর অধিকার খর্ব করে চলছে। তাই প্রকৃতির প্রতিশোধ তো অনিবার্য। দেশে দেশে আজ খরা, বন্যা, মরুময়, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি ঘটেই চলেছে। কনভেনশনের ১২ ধারায় বলা হয়েছে যে- ‘কোনো একটি পানিবাহিত রাষ্ট্র কোনো পরিকল্পনা কার্যকর করতে গেলে বা কাউকে কিছু কার্যকর করতে দিলে তাতে যদি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পানিপ্রবাহে উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি হয়, তবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্যাদি তাদেরকে অবহিত করতে হবে। এ ধরনের তথ্য প্রদানের সাথে কারিগরি ডাটা, তথ্যাবলিসহ পানি পরিবেশের ওপর তার প্রতিক্রিয়া বিস্তারিতভাবে অবহিত করবে, যাতে করে তথ্যপ্রাপ্ত দেশটি সময় মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে।’ কিন্তু ভারত কি তিস্তা ও টিপাইমুখ ড্যামের কোনো তথ্য বাংলাদেশকে দিয়েছে? জবাব একবাক্যে না।
ভূরাজনৈতিক, রাজনৈতিক ও বিবিধ কারণে বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান ভারত বেশ জটিল করে তুলেছে। তবে সমাধানের অযোগ্য নয়। প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বের মর্যাদা রক্ষার মনোভাব। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমাধানের প্রচেষ্টা অগ্রাধিকারযোগ্য। তবে বাংলাদেশের জন্য আলোচ্য কনভেশনে সম্মতি ও স্বাক্ষর প্রদান করে আন্তর্জাতিক আইনের সুযোগ গ্রহণ করে সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়া অধিকতর সুবিধাজনক ও যুক্তিযুক্ত।