হাওর বার্তা ডেস্কঃ সূর্য উদয়ের পর দিনভর আলো ছড়িয়ে পশ্চিমে ডুবে যায়। সাথে চলে যায় একটি দিন। এমন একেকটি দিন যতোই যাচ্ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ততই বাড়ছে। সারাদেশে অনেকটা মহামারি আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। তবে এবারের ডেঙ্গুর প্রচলিত সংকেতগুলো প্রকাশের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু রোগীর শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
চিকিৎসকরাও বলছেন, এবারের ডেঙ্গু জ্বরের ধরন অন্য বছরের তুলনায় অনকেটাই ভিন্ন। এবার ভয়ংকর হচ্ছে তাদের জন্য যারা দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, গায়ে র্যাশ ও বমি বমি দেখা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণত ডেঙ্গু হলে সামান্য রোগীর হার্ট, কিডনি ও ব্রেইন তেমন আক্রান্ত হয় না। তবে এবার সামান্য জ্বরেই রোগীর হার্ট, কিডনি ও ব্রেইনসহ বিভিন্ন অর্গান আক্রান্ত হচ্ছে। যে কারণে রোগীর মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে অন্যান্য বছরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। একইসঙ্গে রোগী দ্রুত শকে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়েছে।
এছাড়া হেমোরেজিক শক সিন্ড্রোমের ফলে রক্তনালীগুলোর ছিদ্রোগুলো বড় হয়ে রক্তের জলীয় উপাদান রক্তনালী থেকে বের হয়ে ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে চলে যাচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু রোগীর হাত-পা ফুলে যাচ্ছে। যা মৃত্যু ঘটার অন্যতম কারণ।
এ কারণে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বলছেন, কেবল রোগীরা নন, চিকিৎসকরা ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্সের সহকারি পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার মেডিভয়েসকে বলেন, ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪ নামের ডেঙ্গুর চারটা ভ্যারাইটি রয়েছে। প্রথমবার যখন ডেন-১ বা ডেন-২ টেইপের মাধ্যমে একজন রোগীর ডেঙ্গু হচ্ছে তখন এটা মোটামুটি স্বাভাবিক থাকছে। তবে পরবর্তিতে যখন কেউ আক্রান্ত হচ্ছে তখন শুরুতেই তার শ্বাসকষ্ট, পেটে পানি জমা বা ফুসফুঁসে পানি জমতে থাকে। এটাই মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
ফলে ডেঙ্গুর ধরনের যে পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে সেটি দ্বিতীয়বার যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রেই বেশি লক্ষ্যনীয়। তবে এদরে সংখ্যা কম নয় বলে মনে করেন তিনি।
সারাদেশে ডেঙ্গু রোগের এমন ভয়াবহতা জাতীয় পর্যায়ে সকলকেই ভাবিয়ে তুলেছে। এমনকি আন্তর্জাতিকভাবেও ডেঙ্গু জ্বরের বিষয়কে উদ্বেগজনক উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) প্রতিনিধি ডা. এডউইন স্যালভাদর ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন। তবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয় বলে জানান তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের চার, পাঁচ, ছয়তলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। এখানেই শুধু ভর্তি ৮৩ জন। মিডফোর্ড হাসপাতালে ৩৮ জন রোগী। তবে গতকাল রোববার এই মিডফোর্ড হাসপাতালে ২ জন রোগী শক সিন্ড্রোমে ছিল।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সোমবার (২২ জুলাই) পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ১৭৯ জন। এরমধ্যে শুধু ঢাকাতেই ৭ হাজার ৯৮ জন আর বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৬৬৭ জন। আর মারা গেছেন ৫ জন; যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি এই হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি।
কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু রোগে গত জানুয়ারিতে ৩৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৯ জন, মার্চে ১৭ জন, এপ্রিলে ৫৮ জনের মধ্যে মারা গিয়েছিল ২ জন, মে মাসে ১৮৪ জন, জুনে ১ হাজার ৭৯৬ জনের মধ্যে মারা গিয়েছিল ২ জন এবং চলতি মাসের এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৫০ জন। এছাড়া চলতি মাসে মারা গেছে এক জন।
রোগ তত্ত্ব নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা মেডিভয়েসকে বলেন, ‘ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুর যে ধরন সেটি আগের মতোই আছে। এদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে না আসলেও চলে। তবে ডেঙ্গু জটিল হলে হাসপাতালে আসতে হচ্ছে। আগে হেমোরেজিক ফেভার একটু বেশি দেখা যেতো। এখন তুলনামূলকভাবে আমাদের ডাটা অনুযায়ী এবার ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমটাও অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।যদি কারো ক্ষেত্রে আগে থেকেই বড় কোনো সমস্যা থাকে যেমন যদি কারো কিডনি সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর তার কিডনি ফেইলর হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘মূলত ডেঙ্গুর কোনো চিকিৎসা নেই। যার যেমন অবস্থা সেটা দেখে বুঝে চিকিৎসা দেয়া হয়। সে হিসেবে কোন সংকেতগুলোর ক্ষেত্রে কি ধরনের চিকিৎসা দিতে হবে সেগুলো আমাদের চিকিৎসা নির্দেশিকায় বলা আছে। এছাড়া যখন প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তখন সব দিক বিবেচনা করেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যাতে যেকোনো অবস্থাতেই ব্যবস্থা নেয়া যায়। ফলে এই মুহূর্তে আলাদা করে চিকিৎসা নেয়ার কিছু নেই।’