হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকার অধিবাসী মমতাজ শাহিন খান। তার পরিবারের একজন সদস্য ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন চিকিৎসাধীন আছেন।
তিনি বলছেন, তার বাসার সঙ্হে বাগানে কাজ করেছিলেন তার পরিবারের একজন সদস্য।
পরে হাসপাতালে নিয়ে নিশ্চিত হন যে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
“অনেক জ্বর এবং পরে মুখ দিয়ে রক্তও গেলো। আমরা কোনো ঝুঁকি নেইনি। হাসপাতালে ভর্তি করেছি।”
এই রোগীর মতো ঢাকায় ১২ই জুলাই পর্যন্ত আরও ৭৩ জন গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বলে শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
তবে গতকাল ২৩শে জুলাই ২৪ ঘণ্টায় ৪৭৩জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সাত হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এটি নিয়ে এখনো খুব বেশি উদ্বিগ্ন হতে রাজী নন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সাব্রিনা।
“কেস বেশি হচ্ছে, কিন্তু প্যানিক হওয়ার কিছু নেই। ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা সবাই এখন জানে। হাসপাতালগুলোতে নজরদারি আরও শক্তিশালী হয়েছে।
সেজন্যই ঢাকার বাইরের কেসগুলো জানা যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে মশা এখন ততটা উদ্বেগের বিষয় না।”
তবে পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সেজন্য এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের জন্য বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে সবার আরও সচেতনতার ওপর জোর দেন তিনি।
এডিস মশা বৃদ্ধির প্রধান দুটি কারণ
মশা নিয়ে গবেষণা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার।
তার মতে, এবার সচেতন হওয়া বেশি জরুরি কারণ কয়েকটি কারণে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
“এবার ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হয়েছে। এডিস মশার ডিম ছয়মাস পর্যন্ত শুকনো স্থানে থাকলে বেঁচে থাকতে পারে।
এবার আগে বৃষ্টির কারণে ও এখন থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ছে।”
আবার ঢাকাসহ সারাদেশে পানির স্বল্পতার কারণে মানুষ বালতি কিংবা ড্রামে পানি জমিয়ে রাখে।
আর বিভিন্ন ধরণের নির্মাণ কাজের সাইটগুলোতে চৌবাচ্চা, ড্রাম এডিস মশার বিস্তারে প্রধান ভূমিকা পালন করছে, বলে মনে করেন তিনি।
সে কারণেই দেশজুড়ে জেলা উপজেলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ বেড়ে যাওয়ায় মি. বাশার মনে করছেন নির্মাণ সাইটগুলোতে পানি জমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
কিন্তু ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ে প্রচার প্রচারণা কিছু চোখে পড়লেও ঢাকার বাইরে বিশেষ করে মফস্বল এলাকাগুলোতে এ নিয়ে তেমন কোন উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
কুষ্টিয়ার শিরিন সুলতানা বলছেন, তাদের এলাকায় প্রচুর মশা। কিন্তু মশা নিধনের কোনো ব্যবস্থা তিনি কখনো দেখেননি।
“স্প্রে বা কয়েল জ্বালানো ছাড়া টেকা যায়না কিন্তু আমি কখনো দেখিনি ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে কোনো কিছু করা হচ্ছে।”
তবে ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশন থেকে সতর্কতামূলক প্রচারের পাশাপাশি মশা মারতে ঔষধ দিতে দেখা যায় মাঝে মধ্যে।
দুটি কর্পোরেশন থেকেই বলা হচ্ছে ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলছেন, মশা প্রতিরোধে সবার সচেতনতাই একমাত্র উপায়।
তবে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করেছেন তারা।
“যে পরিস্থিতি এখন বিদ্যমান তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সারাদেশে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ঢাকা বা ঢাকার বাইরে যেখানেই কারও জ্বর হলেই বিলম্ব না করে হাসপাতালে যেতে হবে আর এটি করা হলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির ভয় বা আতংকের কিছু নেই।
সুত্র-বিবিসি