হাওর বার্তা ডেস্কঃ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কর্মকর্তাদের আবাসনের আসবাব কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত খতিয়ে দেখার জন্য গঠিত দুই তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩৪ জন কর্মকর্তার এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিটি। এদের মধ্যে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৬ জনকে বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
বুধবার (২৪ জুলাই) সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৩৪জন কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০জন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এবং চারজন বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিভাগের।
মন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত চারজনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের অধীনস্তদের মধ্যে অবসরে যাওয়া একজন ও এলপিআরএলে থাকা তিনজনের ব্যাপারে ভিন্ন রকম আইনগত ব্যবস্থা হবে।
যারা চাকরিতে আছেন তাদের মধ্যে ১৬ জনকে গুরুতর অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় সম্পৃক্ত যে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, তারা ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা অতিরিক্ত বিল নিয়েছেন, তা উদ্ধারে ব্যবস্থা নিয়েছি।
তাদের পেন্ডিং কিছু বিল আছে অন্য কাজে, সেখান থেকে এই টাকা কেটে রাখব। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যায় করলে ব্যবসা করা যাবে না। তাদের লাইসেন্স ব্লাকলিস্ট করা হবে।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীন্যস্ত দপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা এরইমধ্যে এলপিআর (অবসরোত্তর ছুটি) বা অবসরে গেছেন। একজন অবসরে আর তিনজন পিআরএলে রয়েছেন। তাঁদের ক্ষেত্রে ভিন্ন আইনি ব্যবস্থা হবে। যেহেতু তাঁরা দায়িত্বে নেই। এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
প্রসঙ্গত, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্রিনসিটি প্রকল্পের ২০ ও ১৬ তলা ভবনের ১১০টি ফ্ল্যাটের জন্য অস্বাভাবিক মূল্যে আসবাবপত্র কেনা ও তা ভবনে উঠানোর খরচ দেখানোর ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হবার পর বিষয়টি তদন্তের জন্য দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গত ১৬ মে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের থাকার জন্য গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীতে ২০ তলা ১১টি ও ১৬ তলা ৮টি ভবন হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০ তলা আটটি ও ১৬ তলা একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য একটি বৈদ্যুতিক চুলার দাম ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৭শ ৪৭ টাকা এবং তা ভবনে তুলতে খরচ ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৬শ ৫০ টাকা, একটি বালিশের দাম ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯ ম ৫৭ টাকা এবং তা ভবনে তুলতে খরচ ধরা হয়েছে ৭শ ৩০ টাকা। একটি বৈদ্যুতিক কেটলির দাম ৫ হাজার ৩শ ১৩ টাকা যা তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৯শ ৪৫ টাকা।
একটি টিভির দাম ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৯শ ৭০ টাকা তা ভবনে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭ হাজার ৬শ ৩৮ টাকা, এই টিভি রাখার কেবিনেটের দাম ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৩শ ৭৮ টাকা।
এরপর অনুসন্ধানে নামে দুদক। প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৩৬ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন-২) মো. মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে সাত সদস্যের এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মো. মঈনুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পায়।