আসন্ন শীতকে মাথায় নিয়ে ফ্যাশন সচেতনরা নেমে পড়েছেন রূপচর্চায়। হেমন্তের সঙ্গে সঙ্গে শীতের আমেজও শুরু হয়েছে। সবার আগে ত্বকই জানিয়ে দেয় এ কথা। এ সময় বরাবরের মতো বাড়তি যতেœর প্রয়োজন হয়ে ওঠে। জন্মগত রূপ নিয়ে চিন্তা-ভাবনার শেষ নেই। কীভাবে যত্ন নেব এই সময়ে অনেকেরই প্রশ্ন জাগে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সঠিক চর্চাটা কি হবে।
ত্বক : ত্বক হচ্ছে আমাদের শরীরের উপরিভাগের অংশবিশেষ। এই উপরিভাগের যত্নটাই মুখ্য বিষয় নয়। ভেতরের পুষ্টিটাই আসল। ভেতরের পুষ্টি যোগাতে খাবারের দিকে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় তাজা ফলমূল, শাক-সবজি, মাছ, ডিম, দুধ বা এ জাতীয় খাবারের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। ভিটামিনযুক্ত খাবার প্রতিদিন খেতে হবে। প্রতিদিন ১টি করে হলেও যেকোনো ফল খেতে হবে। ফ্রেস জুস, শরবত, স্যুপ জাতীয় খাবারগুলোর দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। খাবারের পাশাপাশি ত্বকের উপরিভাগের যতœ নিতে হবে। তাহলে সঠিক পরিচর্যায় আপনি লাবণ্যময় হয়ে উঠবেন। বাইরে থেকে ফিরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর প্যাক ব্যবহার করতে হবে আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী। ত্বক খুবই স্পর্শকাতর তাই ভালোমানের পণ্য ব্যবহার করতে হবে নিয়মিত। রূপচর্চায় কোনো ধরনের ব্যাঘাত হলে ত্বকে নানা রকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এ সময় ত্বকের পানি শুকিয়ে আসে। সে জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার সময় সঙ্গে পানি রাখতে হবে।
চুল : ত্বকের পাশাপাশি চুলের গুরুত্বও কম নয়। এ সময় মাথার ত্বকে নানা রকমের ফাংগাস, খুশকি বাসা বাঁধে। এ থেকে দূরে থাকতে চালিয়ে যেতে হবে পরিচর্যা। পরিচর্যা করতে হবে নিয়ম করে। তাহলে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা হলো রূপচর্চার প্রধান অংশ। তাই চুল পরিষ্কার রাখাটাও জরুরি অংশেই পড়ে থাকে। ১ দিন পর চুল শ্যাম্পু করতে হবে। শ্যাম্পু করার আগে চুলের গোড়ায় অবশ্যই তেল ম্যাসেজ করতে হবে। তেলের সঙ্গে আমলা বাটা ১ চামচ, মেথী বাটা, নিমপাতা বাটা ২ চামচ করে মিলিয়ে শ্যাম্পু করার ২ ঘণ্টা আগে ম্যাসেজ করে এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে এই জন্য যে, চুলের ঝলমলে ভাব ধরে রেখে যেন চুল সুস্থ রাখে। সেজন্য কন্ডিশনারের ব্যবহারটা শ্যাম্পুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
হাত ও পা : ত্বক, চুলের পাশাপাশি হাত-পায়ের যত্ন নিতে ভুলে গেলে চলবে না। কারণ সৌন্দর্যচর্চার একটি প্রয়োজনীয় অংশ জড়িয়ে আছে এর মধ্যে। তাই প্রতি সপ্তাহে সম্ভব না হলে মাসে ২বার হলেও ম্যানিকিউর ও প্যাডিকিউর করতে হবে। প্রয়োজনে ভালো চর্চার সুফল পেতে অভিজ্ঞদের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে বাড়িতে বসে ম্যানিকিওর ও প্যাডিকিওর করাটাই ভালো। এতে সঞ্চয়ের পাশাপাশি সময়ও বাঁচবে।
বাড়িতে ম্যানিকিওর ও প্যাডিকিওর করার নিয়ম
যা যা লাগবে : ১টি স্টোম, ১টি পাত্র, পরিমাণ মতো গরম পানি, ১টি ব্রাশ, ১টি স্টোন, ছোট টাওয়াল, নেইল ফাইল ১টি, ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম, ধরন অনুযায়ী প্যাক, সামান্য শ্যাম্পু।
যেভাবে ম্যানিকিওর প্যাডিকিওর করতে হবে : একটি পাত্রে গরম পানি নিন। এবার এতে শ্যাম্পু মিলিয়ে হাত-পা ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। এরপর পায়ের মরা কোষ তুলে ফেলুন স্টোন দিয়ে ঘষে। এখন নখ ফাইলিং করে নিন। এবার প্যাক লাগিয়ে আরো ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এখন ভালোভাবে ধুয়ে টাওয়াল দিয়ে মুছে ময়েশ্চারাইজার ম্যাসেজ করুন। যদি নখে নেইল পলিশ থাকে তা রিমুভার দিয়ে তুলার সাহায্যে স্টোন দিয়ে ঘষার আগেই তুলে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত করলে সৌন্দর্য চর্চায় আপনি এগিয়ে থাকবেন সবার শীর্ষে।
পরিশেষে বলা যায়, রূপচর্চার আসল সৌন্দর্য পরিচর্যায়। নিয়মিত পরিচর্যায় আপনি হতে পারেন সবার মধ্যমণি। সবার মাঝে নিজেকে সুন্দর করে রাখার প্রক্রিয়া জেনেবুঝে চর্চা চালিয়ে যান। তবে শীত আসার আগেই চর্চা চালাতে হবে। তাহলে আর দেরি কেন? আজই তৈরি হয়ে যান।