বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইলিয়াস বিন হেলালীর বিরুদ্ধে যদি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ কেউ করে থাকে তাহলে তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান।
বৃহস্পতিবার শরীয়তপুরের দুই জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ব্রিফিং করার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
আব্দুল হান্নান বলেন, তদন্ত সংস্থায় বিভিন্ন সময় অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। কখনো জেলা জজকোর্ট বা কোন ব্যক্তি অভিযোগ দিয়ে থাকে। তার ভিত্তিতে আমরা তদন্ত শুরু করার জন্য মামলার (আইও) তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেই। তবে আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন ওলামা লীগ নেতা ইলিয়াস বিন হেলালীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তার আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আমাদের সময় এবং বাংলা ট্রিবিউনসহ বিভিন্ন পত্রিকায় ইলিয়াস বিন হেলালী রাজাকার ছিলেন বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসা বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল্লামা ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী রাজাকার ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ইলিয়াস হেলালী একজন সক্রিয় রাজাকার ছিলেন। তার বাবা মাওলানা মনসুর আলী সিকদার ও তার চাচা আব্দুর রহমান সিকদারও ১৯৭১ সালে অস্ত্রধারী সক্রিয় রাজাকার ছিলেন। রাজাকারের তালিকায় তার বড় ভাই আবু সালেহ শিকদারের নামও আছে।
মোজাম্মেল হোসেন এমপি ছাড়াও প্রত্যয়ণপত্রের মাধ্যমে ইলিয়াস হেলালীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন মোরেলগঞ্জ থানা মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার মো. লিয়াকত আলী খান, ১০ নং হোগলাবুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মোকলেছুর রহমান, ১০ নং হোগলাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন এবং একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইয়াসিন সিকদার।
অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী ওলামা লীগ সভাপতি আল্লামা ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই। কোনো দপ্তর থেকে আমাকে তলবও করা হয়নি। যিনি এমন অভিযোগ করেছেন, খবর নিয়ে দেখেন, তিনি নিজেই খারাপ লোক। তা ছাড়া আমার জন্ম ১৯৬৯ সালের ১৬ এপ্রিল। তাহলে কী করে এমন অভিযোগ ওঠে? মানুষ বড় হয়ে উঠতে থাকলে কারও কারও চোখে বাজে, তাই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই কেউ কেউ এমন অভিযোগ তুলছেন। আমি মুক্তিযোদ্ধাও নই, রাজাকারও নই। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে সব সময় আমি কঠোর অবস্থানে থেকে কাজ করি।’
মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এমদাদুল হক এক প্রত্যয়ণপত্রে উল্লেখ করেন, ‘আমার জানামতে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তার বয়স ১৩/১৪ হলেও ইলিয়াস হেলালী স্বাধীনতাবিরোধী ভাবধারায় বড় হয়েছে।
১০ নং হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে আ. লীগের সভাপতি মো. ইয়াসিন সিকদার তার প্রত্যয়ণপত্রে জানান, ইলিয়াস হেলালীর দাদা ছিলেন শান্তি কমিটির সদস্য। তার বড় ভাই আবু সালেহ একজন সক্রিয় রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বর্তমানে মামলার আসামি। ইলিয়াস হেলালী তার ভাইসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীকে যুদ্ধাপরাধী মামলা থেকে ও জামায়াত-শিবিরকে রক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাসহ বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করছেন। প্রত্যয়ণপত্রে তিনি হেলালীর বিচারও দাবি করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম গণজামাত বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের অংশগ্রহণে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের পক্ষ থেকে অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান ইলিয়াস হোসাইন হেলালী।
গত বছর জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাওয়াহিরির ভিডিওবার্তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং তা বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজতের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আল-কায়েদা নেতার বক্তব্যের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে। জামায়াতের প্রচারিত ফুটেজ এবং আল-কায়েদার ভিডিও ফুটেজ একই। এতে প্রমাণিত হয়, বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত আর আল-কায়েদা একই সংগঠন। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলে এ ধরনের অসংখ্য বক্তব্য দিয়ে আলোচিত ও সমালোচিত হন আল্লামা ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী।