ঢাকা ০৬:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ড্রাগন ফল চাষে সফলতা পেয়েছেন পাকুন্দিয়া উপজেলার খুর্শিদ উদ্দিন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০১৯
  • ২৪০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অপরিচিত ড্রাগন ফল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন পাকুন্দিয়া উপজেলার কৃষক মো. খুর্শিদ উদ্দিন। উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের খামা গ্রামের এই কৃষকই প্রথম উপজেলায় সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। মাত্র এক বছরেই খুর্শিদ উদ্দিনের এই সাফল্য অনুপ্রাণিত করছে এলাকার অন্যান্য কৃষকদেরও।

অথচ এক বছর আগে তিনি যখন শুরু করেছিলেন, তাকে নিয়ে তখন সবাই হাসি ঠাট্টা করতো। কিন্তু যখন গাছে ফুল ও ফল এলো, এরপর সবার ভুল ভাঙলো। এক সময়ে যাকে নিয়ে লোকজন হাসি ঠাট্টা করতো, পরে তাকে নিয়েই মেতে থাকতে শুরু করে। সবার কাছে খুর্শিদ উদ্দিন এখন ড্রাগন ফল চাষি হিসেবেই পরিচিত। কৃষক মো. খুর্শিদ উদ্দিন এর নিজের কোন জমি নেই। অন্যের জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করেন। বছর খানেক আগে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা মো. হামিমুল হক সোহাগের পরামর্শে বাড়তি আয়ের আশায় ড্রাগন চাষের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

পরে ওই কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতায় ২০ শতক জমিতে ড্রাগন চাষের জন্য বাগান তৈরি করেন। ড্রাগনের গাছ সোজা রাখার জন্য জমিতে পিলার স্থাপন করেন। জমি জুড়ে এমন ৮০টি পিলার বসানো হয়। ৮০টি পিলারে ২৪০টি ড্রাগন গাছ লাগানো হয়। জমিতে এসব পিলার স্থাপন দেখে অনেকেই তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা শুরু করে।

কিন্তু খুর্শিদ উদ্দিন হাল ছাড়েননি। ড্রাগন গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করতে থাকেন। এর পাশাপাশি একই জমিতে তিনি সাথী ফসল হিসেবে হলুদ, আদাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ শুরু করেন। এতে ড্রাগন বাগানে তার যে টাকা খরচ হয়েছিল তা উঠে আসে।

কিছুদিন পর ড্রাগন গাছ পরিচর্যায় ফেলে দেয়া অংশ দিয়ে একই জমির এক পাশে কাটিং/চারা তৈরি করতে থাকেন। এসব কাটিং/চারা বিক্রি করে ৪০-৪৫ হাজার টাকা বাড়তি আয় করেন। এতে হাসি আসে খুর্শিদের মুখে।

প্রথম বছরে ড্রাগনের ফল আসার আগেই বিনিয়োগকৃত টাকা ও জমি ইজারার টাকা পুষিয়ে নিয়ে কাটিং বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা আনেন। প্রথম বছরে ফলও আসে বেশ। ফল দেখতে ও কিনতে ভিড় জমান এলাকাসহ দূর-দূরান্তের লোকজন। ফল বিক্রি করেও ভালো আয় করেন খুর্শিদ। গত বছরের তুলনায় এবছর ড্রাগন গাছে ফুল এসেছে অনেক বেশি। এতে ফলও আসবে দ্বিগুণ। তাই গত বছরের চেয়ে এবছর বেশি টাকা আয় হবে বলে জানান খুর্শিদ উদ্দিন।

ড্রাগন ফল চাষি মো. খুর্শিদ উদ্দিন বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহাগ ভাইয়ের পরামর্শে ড্রাগন ফল চাষ করে আমি এখন লাভবান। এ ফল চাষ করতে গিয়ে লোকজনের অনেক হাসি ঠাট্টা সহ্য করেছি। তবে এখন সবাই আমাকে মূল্যায়ন করে। ড্রাগন বাগান দেখতে ও ফল নিতে ভিড় করে। ড্রাগন কাছের কাটিং/চারা ও ফল বিক্রি করে আমার পরিবার এখন স্বচ্ছল। গতবারের চেয়ে এবার ফুল বেশি এসেছে, তাই এবছর ফলনও বেশি হবে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ড্রাগন একটি ক্যাকটাস গোত্রীয় ফল। ড্রাগন বিদেশি ফল হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে এর চাষাবাদ শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে এ ফলটির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

গাছের কাটিং বা পরিপক্ষ শাখা রোপনের এক বছরের মধ্যে ফুল-ফল ধরা আরম্ভ করে। মে মাস থেকে আরম্ভ হয়ে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে ফুল ও ফল ধরে। ফুল ফোঁটা থেকে শুরু করে পাকতে ৩০-৩৫ দিন সময় লাগে। ড্রাগন ফল অতিপুষ্টিকর ভিটামিনস ও মিনারেল্স সমৃদ্ধ।

বিশেষ করে এ ফলে ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও নিয়াসিনের পরিমাণ খুব বেশি রয়েছে। ফল সুস্বাদু যথেষ্ট মিষ্টি হলেও ডায়বেটিস রোগিদের জন্য খাবার উপযোগি। এ ফল অন্য খাবার হজমে সহায়তা করে, দেহের কমীনয়তা আনয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরার মত কার্যকর। এ ফলের তৈরী জুস অত্যন্ত শীতল ও তৃপ্তিদায়ক।

সালাত হিসেবেও ড্রাগন ফলের জুড়ি নেই। কচি ফল তরকারি হিসেবেও খাওয়া যায়। এ ফল দিয়ে জ্যাম-জেলি ইত্যাদি তৈরি করা যায়। শুকিয়ে বা প্রক্রিয়াজাত করে অসময়েও খাওয়া যায়। এমনকি রাতে আলো জ্বালিয়ে দিনের দৈর্ঘ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করে সারা বছর ফল ধরানো যায়। পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গা ও দোঁআশ মাটি এ ফল চাষের জন্য উপযুক্ত। এ বিবেচনায় বাংলাদেশে এ ফলটি চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হামিমুল হক সোহাগ বলেন, খুর্শিদের এ বাগান দেখে অত্র উপজেলায় আরো অনেকগুলো বাগান স্থাপন করা হয়েছে। খামা গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই লাগানো হয়েছে ড্রাগন ফলের গাছ। ড্রাগন এর ফুলটি প্রথমে লম্বাকৃতির হাতির শুঁড়ের মত থাকে। কিন্তুু সন্ধ্যার পর অন্ধকার নেমে আসলে তা গোলাকৃতির সাদা রঙের হয়ে ফোঁটে। মনোমুগ্ধকর ফুলের অপূর্ব বাহারি রঙ ও সুমিষ্ট গন্ধ কেবল রাতের বেলায় পাওয়া যায়।

সেজন্য এ এলাকার লোকজন ফুল দেখার জন্য সন্ধ্যার পর খুর্শিদ উদ্দিনের বাগানে ভিড় জমান। এটি উভয় লিঙ্গিক হলেও ফুলের গন্ধ ও মধু আহরণে আকৃষ্ট হয়ে রাতে বিচরণকারী অনেক পোকা এসে ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফুলটি তার সেই সৌন্দর্য্য হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে ফলে পরিণত হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ড্রাগন ফল চাষে সফলতা পেয়েছেন পাকুন্দিয়া উপজেলার খুর্শিদ উদ্দিন

আপডেট টাইম : ১১:২৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অপরিচিত ড্রাগন ফল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন পাকুন্দিয়া উপজেলার কৃষক মো. খুর্শিদ উদ্দিন। উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের খামা গ্রামের এই কৃষকই প্রথম উপজেলায় সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। মাত্র এক বছরেই খুর্শিদ উদ্দিনের এই সাফল্য অনুপ্রাণিত করছে এলাকার অন্যান্য কৃষকদেরও।

অথচ এক বছর আগে তিনি যখন শুরু করেছিলেন, তাকে নিয়ে তখন সবাই হাসি ঠাট্টা করতো। কিন্তু যখন গাছে ফুল ও ফল এলো, এরপর সবার ভুল ভাঙলো। এক সময়ে যাকে নিয়ে লোকজন হাসি ঠাট্টা করতো, পরে তাকে নিয়েই মেতে থাকতে শুরু করে। সবার কাছে খুর্শিদ উদ্দিন এখন ড্রাগন ফল চাষি হিসেবেই পরিচিত। কৃষক মো. খুর্শিদ উদ্দিন এর নিজের কোন জমি নেই। অন্যের জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করেন। বছর খানেক আগে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা মো. হামিমুল হক সোহাগের পরামর্শে বাড়তি আয়ের আশায় ড্রাগন চাষের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

পরে ওই কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতায় ২০ শতক জমিতে ড্রাগন চাষের জন্য বাগান তৈরি করেন। ড্রাগনের গাছ সোজা রাখার জন্য জমিতে পিলার স্থাপন করেন। জমি জুড়ে এমন ৮০টি পিলার বসানো হয়। ৮০টি পিলারে ২৪০টি ড্রাগন গাছ লাগানো হয়। জমিতে এসব পিলার স্থাপন দেখে অনেকেই তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা শুরু করে।

কিন্তু খুর্শিদ উদ্দিন হাল ছাড়েননি। ড্রাগন গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করতে থাকেন। এর পাশাপাশি একই জমিতে তিনি সাথী ফসল হিসেবে হলুদ, আদাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ শুরু করেন। এতে ড্রাগন বাগানে তার যে টাকা খরচ হয়েছিল তা উঠে আসে।

কিছুদিন পর ড্রাগন গাছ পরিচর্যায় ফেলে দেয়া অংশ দিয়ে একই জমির এক পাশে কাটিং/চারা তৈরি করতে থাকেন। এসব কাটিং/চারা বিক্রি করে ৪০-৪৫ হাজার টাকা বাড়তি আয় করেন। এতে হাসি আসে খুর্শিদের মুখে।

প্রথম বছরে ড্রাগনের ফল আসার আগেই বিনিয়োগকৃত টাকা ও জমি ইজারার টাকা পুষিয়ে নিয়ে কাটিং বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা আনেন। প্রথম বছরে ফলও আসে বেশ। ফল দেখতে ও কিনতে ভিড় জমান এলাকাসহ দূর-দূরান্তের লোকজন। ফল বিক্রি করেও ভালো আয় করেন খুর্শিদ। গত বছরের তুলনায় এবছর ড্রাগন গাছে ফুল এসেছে অনেক বেশি। এতে ফলও আসবে দ্বিগুণ। তাই গত বছরের চেয়ে এবছর বেশি টাকা আয় হবে বলে জানান খুর্শিদ উদ্দিন।

ড্রাগন ফল চাষি মো. খুর্শিদ উদ্দিন বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহাগ ভাইয়ের পরামর্শে ড্রাগন ফল চাষ করে আমি এখন লাভবান। এ ফল চাষ করতে গিয়ে লোকজনের অনেক হাসি ঠাট্টা সহ্য করেছি। তবে এখন সবাই আমাকে মূল্যায়ন করে। ড্রাগন বাগান দেখতে ও ফল নিতে ভিড় করে। ড্রাগন কাছের কাটিং/চারা ও ফল বিক্রি করে আমার পরিবার এখন স্বচ্ছল। গতবারের চেয়ে এবার ফুল বেশি এসেছে, তাই এবছর ফলনও বেশি হবে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ড্রাগন একটি ক্যাকটাস গোত্রীয় ফল। ড্রাগন বিদেশি ফল হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে এর চাষাবাদ শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে এ ফলটির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

গাছের কাটিং বা পরিপক্ষ শাখা রোপনের এক বছরের মধ্যে ফুল-ফল ধরা আরম্ভ করে। মে মাস থেকে আরম্ভ হয়ে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে ফুল ও ফল ধরে। ফুল ফোঁটা থেকে শুরু করে পাকতে ৩০-৩৫ দিন সময় লাগে। ড্রাগন ফল অতিপুষ্টিকর ভিটামিনস ও মিনারেল্স সমৃদ্ধ।

বিশেষ করে এ ফলে ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও নিয়াসিনের পরিমাণ খুব বেশি রয়েছে। ফল সুস্বাদু যথেষ্ট মিষ্টি হলেও ডায়বেটিস রোগিদের জন্য খাবার উপযোগি। এ ফল অন্য খাবার হজমে সহায়তা করে, দেহের কমীনয়তা আনয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরার মত কার্যকর। এ ফলের তৈরী জুস অত্যন্ত শীতল ও তৃপ্তিদায়ক।

সালাত হিসেবেও ড্রাগন ফলের জুড়ি নেই। কচি ফল তরকারি হিসেবেও খাওয়া যায়। এ ফল দিয়ে জ্যাম-জেলি ইত্যাদি তৈরি করা যায়। শুকিয়ে বা প্রক্রিয়াজাত করে অসময়েও খাওয়া যায়। এমনকি রাতে আলো জ্বালিয়ে দিনের দৈর্ঘ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করে সারা বছর ফল ধরানো যায়। পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গা ও দোঁআশ মাটি এ ফল চাষের জন্য উপযুক্ত। এ বিবেচনায় বাংলাদেশে এ ফলটি চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হামিমুল হক সোহাগ বলেন, খুর্শিদের এ বাগান দেখে অত্র উপজেলায় আরো অনেকগুলো বাগান স্থাপন করা হয়েছে। খামা গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই লাগানো হয়েছে ড্রাগন ফলের গাছ। ড্রাগন এর ফুলটি প্রথমে লম্বাকৃতির হাতির শুঁড়ের মত থাকে। কিন্তুু সন্ধ্যার পর অন্ধকার নেমে আসলে তা গোলাকৃতির সাদা রঙের হয়ে ফোঁটে। মনোমুগ্ধকর ফুলের অপূর্ব বাহারি রঙ ও সুমিষ্ট গন্ধ কেবল রাতের বেলায় পাওয়া যায়।

সেজন্য এ এলাকার লোকজন ফুল দেখার জন্য সন্ধ্যার পর খুর্শিদ উদ্দিনের বাগানে ভিড় জমান। এটি উভয় লিঙ্গিক হলেও ফুলের গন্ধ ও মধু আহরণে আকৃষ্ট হয়ে রাতে বিচরণকারী অনেক পোকা এসে ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফুলটি তার সেই সৌন্দর্য্য হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে ফলে পরিণত হয়।