হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্রষ্টার পর কেউ যদি জীবন বাঁচাতে পারেন, তিনি হলেন ডাক্তার। তাইতো রোগে-শোকে মানুষ শেষ আশ্রয় হিসেবে বেছে নেন হাসপাতালকে। রোগমুক্তির জন্য ধ্যান ধরে বসে থাকেন ডাক্তারের অপেক্ষায়। ডাক্তারের ছুরি-কাঁচি আর সন্ত্রাসীর ছুরি এক নয়। সন্ত্রাসীর ছুরি কেড়ে নেয় প্রাণ, আর ডাক্তারের ছুরি ফেরায় জান। তবে সেই ডাক্তারের ছুরিও এখন হয়ে উঠছে বিষধর।
ডাক্তাররা আজ তাদের আখের গোছানোর জন্য ব্যস্ত। তাইতো এখন রোগীরা পাচ্ছেন না সেবা। হাসপাতালের বেডে ডাক্তারের অপেক্ষায় থেকে কাতরাতে কাতরাতে চলে যাচ্ছে অনেকের জীবন। কারণ পর্যাপ্ত হাসপাতাল থাকলেও নেই পর্যাপ্ত ডাক্তার। যারাও আছেন তারাও ঠিকমতো চিকিৎসা দিচ্ছেন না রোগীদের। কারণ প্রায় সব সরকারি ডাক্তারের রয়েছে প্রাইভেট ক্লিনিক। তার ওপর রয়েছে যন্ত্রপাতির সংকট। সব মিলিয়ে রোগীরা আজ সেবা থেকে বঞ্চিত।
সাতক্ষীরা জেলার সদর হাসপাতালসহ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর চিত্রও একই। প্রচুর রোগী আছেন কিন্তু ডাক্তার নেই। আবার ডাক্তার আছেন তো যন্ত্রপাতি নেই। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো সরেজমিনে ঘুরে ডেইলি বাংলাদেশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকের পদ ২৭টি।
চার মধ্যে দায়িত্বে আছেন ১৩ জন। বাকি ১৪টি পদই খালি। সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অধিকাংশ ডাক্তারেরই দেখা মেলে না। যারা দায়িত্বে থাকেন তারাও নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। শহরে বিভিন্ন ক্লিনিকের মালিকানা থাকায় যেন সেদিকেই নজর বেশি তাদের। তার ওপর প্রাইভেট ক্লিনিকে প্র্যাকটিস।
খবর সংগ্রহের সময় সেখানে ১৩ জন চিকিৎসকদের মধ্যে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাক্তার আছাদুর জামান, ডাক্তার এহেছেন আরা এনা, ডাক্তার আফরোজা খাতুন, প্যাথলজিস্ট হাফিজা খাতুনকে পাওয়া গেলেও আর কারো দেখা পাওয়া যায়নি। ডাক্তার আব্দুস সালাম ও ডাক্তার সোমা রাণী দাস হাসপাতালটির সার্বিক দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও দিনে এক-দুই ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন রোগীরা।
সরকারিভাবে স্বল্প খরচে ভাল চিকিৎসা নিতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা আসেন এই হাসপাতালে। কিন্তু ডাক্তারদের গাফলতির কারণে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। শিশু চিকিৎসক, চক্ষু বিশেষজ্ঞ সার্জন, অর্থপেডিক্স সার্জন, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞও নেই। যারা ছিলেন তারা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে নিয়োগ নিয়ে চলে গেছেন। এদিকে হাসপাতালটির শিশু বিশেষজ্ঞ সামছুর রহমানের দিনে দুবার করে রাউন্ড দেয়ার কথা থাকলেও মাত্র একবার হাসপাতালে আসেন তিনি। আবার কোনো কোনো দিন হাসপাতালেই আসেন না। ফলে শিশু রোগীরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চিকিৎসকরা নিয়মিত অফিস না করার কারণ- প্রায় প্রত্যেকেরই নিজস্ব ক্লিনিক আছে। তারা রোগীদের ভাগিয়ে নিজেদের ক্লিনিকে পাঠিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। ডাক্তাররা রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট করাতে দিলে তারা যদি হাসপাতাল থেকে করায় তাহলে সে রিপোর্ট ভুল হয়েছে বলে বাহিরের ক্লিনিক থেকে নতুন করে টেস্ট করিয়ে আনতে বলেন।
এছাড়াও হাসপাতালের অধিকাংশ ডাক্তারের আউটডোর রুম বন্ধ থাকে। ১৭৮ জন নার্সের পদ থাকলেও আছে ১৭০ জন বাকি ৮টি পদ শুন্য রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি ২৮ জন, এর মধ্যে ২৩ জন আছে। বাকি ৫টি পদ শুন্য। চতুর্থ শ্রেণির ২৪ জন কর্মরত আছে। এছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে ১৩৪টি যন্ত্রপাতির মধ্যে ৬৮টি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
হাসপাতালে আসা রোগী বজলুর রহমান বলেন, আমি শ্বাসকষ্টের জন্য ডাক্তার সোমারাণির কাছে এসেছি। দেড় ঘন্টা হয়ে গেল এখনো তার খোঁজ পাইনি। স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোহাম্মাদ বলেন, এখানের ডাক্তাররা ঠিকমতো রোগী দেখেন না। ডাক্তারের জন্য অনেকটা সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। সকাল ১০ টায় একাবার এসে দেখে যায় আবার রাত ১০টায় আসে। আর নার্সদেরকে ডাকতে গেলে তারা মুখ কালো করে ফেলে।
রোগী খলিল হোসেন বলেন, আমরা সদরে আসি চিকিৎসা নিতে। কিন্তু এখানে ডাক্তার কখন আসে কখন যায় এটা কেউ বলতে পারি না। এখানের ডাক্তাররা সব ব্যবসা খুলে বসে আছে। আমরা গরিব মানুষ সদর হাসপাতালে আসি কয়টা টাকা বাঁচানোর জন্য। কিন্তু সেটা আর হয় না।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আকবার আলী বলেন, আমার পা একটা ভাঙ্গা। আমার যেরকম সেবা পাওয়ার কথা আমি সেরকম সেবা পাচ্ছি না। এমনকি ওষধও ঠিকমতো পাচ্ছি না।
সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক এ্যাডভোকেট ফাইমুল হক কিসলু বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকার স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যন্ত্রপাতি ও মালামাল ক্রয়ের জন্য প্রায় ১৩ কেটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু মালামাল ও যন্ত্রপাতি বুঝে না পাওয়া সত্ত্বেও সাতক্ষীরার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান, স্টোরকিপার এ কে ফজলুল হক ও হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেনসহ অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মচারি পারস্পরিক যোগসাজসে মালামাল বুঝে নেয়া হয়েছে মর্মে মিথ্যা প্রত্যায়ন দিয়ে সম্পূর্ণ অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে তুলে নিয়েছেন।
এভাবে যদি ডাক্তাররা গরীবের টাকা মেরে দেয় তাহলে আমাদের আশ্রয় কোথায়? সাতক্ষীরা জেলার সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালটি ১০০ বেডের হাসপাতাল। ১৯৫৭ সালে এটি ৫০ বেড থেকে ১০০ বেডে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ১০০ বেড করা হলেও এখানের চিকিৎসকদের পদ সেই ৫০ বেডেরই। শুধু কর্মচারিদের পদ ১০০ বেডের করা হয়েছে। তবে এখানে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জন।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালটিতে শুধুমাত্র মেডিসিন, গাইনি ও সার্জারি বিভাগের কনসালটেন্ট আছেন। আর অন্য কোনো বিভাগে কোনো কনসালটেন্ট নেই। যে কয়জন চিকিৎসক এখানে কর্মরত আছেন তারা নিয়মত আসেন। হয়তো অফিসটাইমে দুই একজনের এদিক সেদিক হয়। কিন্তু আমি চেষ্টা করছি, যে কয়জন এখানে কর্মরত আছেন তাদেরকে দিয়েই এই ১০০ বেডের হাসপাতালে যে ২০০ রোগী ভর্তি হয় তাদের সেবা দেয়ার। আমি আশা করি এখানে আরো নিয়োগ হলে রোগীরা যে পরিমাণ সেবা পাচ্ছে তার থেকে আরো বেশি সেবা পাবে।
এদিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খাতা কলমে ৭৮ জন ডাক্তার থাকলেও সেখানে দেখা যায়নি অধিকাংশ ডাক্তারদের। এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা চঞ্চল কুমার বলেন, আমি চোখের জন্য ডাক্তার দেখাতে এসেছি প্রায় ২ ঘন্টা হলো। কিন্তু এখনো ডাক্তারের দেখা পেলাম না। জানি না আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।
হাসপাতালের অধ্যক্ষ কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, যতজন ডাক্তার থাকার কথা ততজন ডাক্তার নেই। বিশেষ করে টেকনিশিয়ান ও ইনডোর মেডিকেল অফিসার নেই। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। এটা মিটলে আমরা সঠিকভাবে সেবা দিতে পারবো। এদিকে, কলারোয়া, কালিগঞ্জ ও তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও দেখা গিয়েছে একই চিত্র।
চিকিৎসক সংকট ও কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে প্রায় ৩ লাখ মানুষের সরকারি চিকিৎসার একমাত্র আশ্রয়স্থল কলারোয়ার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। হাসপাতালটিতে ৩৪ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও সর্বশেষ বিসিএস-এ উত্তীর্ণ হওয়া তিনজন চিকিৎসকসহ বর্তমানে মাত্র ৭ জন ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসাসেবা চলছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডাক্তার সংকট ও হাসপাতালের নানাবিধ সমস্যার কারণে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। বিষয়টি নতুন নয়, মাসের পর মাস এমন করুণ-বেহাল অবস্থা চললেও সমাধানের আলো দেখাই যাচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সহকারী সার্জন, মেডিকেল অফিসার, ডেন্টাল সার্জন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, গাইনি ও শিশু চিকিৎসক, ১২টি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসারসহ অন্যান্য বিভাগ মিলিয়ে মোট পদ রয়েছে ৩৪টি। এর মধ্যে চলতি মাসে নিয়োগ পাওয়া ৩ জনসহ বর্তমানে ৭ জন কর্মরত আছেন। এর মধ্যে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শফিকুল ইসলাম ও মেডিকেল অফিসার ডা. বেলাল হোসেন নিয়মিত আউটডোর চিকিৎসা, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা, জরুরী বিভাগসহ সামগ্রিক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
মাঝে মধ্যে আউটডোরে রোগীর সংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে পড়লে দু’জন ডাক্তারের পাশাপাশি টিএইচও’কেও আউটডোরে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে দেখা গেছে। তাদের (ডাক্তার) নিজেদের শারীরিক, পারিবারিক কিংবা অন্যকোনো সাময়িক সমস্যা বা বিশেষ কারণে ছুটিতে থাকলে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এদিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগটি এখন মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্টদের দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে। ডাক্তার সংকটের কারণে জরুরি ও মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা ও ব্যবস্থাপত্রও তারা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার পদায়ন করা এখন জরুরি হয়ে উঠেছে।
চিকিৎসক পদায়নের দাবি জানিয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক সংকটে রোগীরা যেমন বিড়ম্বনায় পড়েছেন ঠিক তেমনি নিজেরাও ভোগান্তিতে পড়েছি। এখানে ডাক্তার পদায়নের বিকল্প নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ডাক্তার ছাড়া আমরা চলতে পারছি না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাবে এখানকার ওটির কার্যক্রম এক প্রকার বন্ধ হয়ে আছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে এখানে ডাক্তার প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, ২৬টি নার্স পদের বিপরীতে ২৪ জন কর্মরত ও দুই জন প্রেষণে আছেন। তাদের দিয়েও ভর্তিকৃত রোগীদের প্রাথমিক সেবা অব্যাহত রাখা হচ্ছে। জরুরি বিভাগসহ অন্যখানে ৬ জন মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট কর্মরত আছেন। এছাড়া অফিসিয়াল কাজকর্ম সম্পাদনের জন্যও জনবল সংকট রয়েছে।
এদিকে, কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডাক্তার শুন্য হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন’শ রোগীর সেবা প্রদান করছে ৪ জন ডাক্তার। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অধিকাংশ পদ শুন্য থাকায় চিকিৎসাসেবা নিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। হাসপাতালে বর্তমানে জুনিয়ার কনসালটেন্ট সার্জারি ডাক্তার নেই। যার ফলে সিজারসহ বড় ধরনের কোন অপরেশন হচ্ছে না এই হাসপাতালে। এছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, জুনিয়র কনসালটেন্ট এ্যানেসথেসিয়া, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু, ডেন্টাল সার্জন ও একজন আরএমও পদ দীর্ঘদিন খালি থাকায় উপজেলার প্রায় ১৩ লাখ লোকের চিকিৎসাসেবা ব্যহত হচ্ছে।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা রোগী আরিফুল ইসলাম, মহিউদ্দিন ও আসমাউল হুসনাসহ অনেকে জানান, ডাক্তার না থাকায় তারা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না। তাছাড়া যে কয়জন ডাক্তার আছে তারাও ঠিকমত হাসপাতালে আসেন না। হাসপাতালে কোনো ধরনের অপারেশন না হওয়ায় দ্বিগুণ টাকা দিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারসহ সব ধরনের অপারেশন করাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাক্তার তৈয়েবূর রহমান বলেন, ডাক্তার কম থাকায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যহত হচ্ছে। তাছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি ডাক্তার না থাকার কারণে সব ধরনের অপারেশন বন্ধ আছে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শুন্য পদে ডাক্তার চেয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবর তিনি আবেদন করছেন।
এদিকে, তালা উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য একমাত্র মাধ্যম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ভাল চিকিৎসাসেবা পাওয়ার আশায় পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত রোগী প্রতিনিয়িত এই হাসপাতালে আসেন। ফলে এতো মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র মাধ্যম তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু দুঃখের বিষয়- চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটের পাশাপাশি চিকিৎসা সরঞ্জাম সচল না থাকায় বিগত কয়েক বছর ধরে রোগীরা এখান থেকে সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। যতটুকু চিকিৎসা পাওয়া যায় তা হাসপাতালের স্যানিটেশেন অবস্থার কারণে দূর্ভোগে নেমে এসেছে! এছাড়া ফ্যান, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও এক্সরে মেশিন নষ্ট থাকায় রোগীদের ভোগান্তি চরমে।
এখানে ডাক্তারের পদ রয়েছে ৩৪টি। কিন্তু ডাক্তার আছেন মাত্র ৪ জন। এরমধ্যে কেউ আছেন ডেপুটিশনে, কেউ আছেন মাতৃত্বকালনি ছুটিতে আবার কেউ আছেন প্রশিক্ষণে। পদ পূরণ থাকা ডাক্তারদের মধ্যে কেউ সভা সেমিনারে অংশ নিলে মাঝে মাঝে মাত্র একজন ডাক্তার বহির্বিভাগে আগত শত শত রোগীদের চিকিৎসা করেন। বিপুল সংখ্যক রোগীদের মাত্র একজন বা ২/৩ জন ডাক্তার চিকিৎসাসেবা দেয়ায় চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভদের অপতৎপরতা রোগীদের হয়রানি করছে প্রতিনিয়ত। হাসপাতালে ২য় শ্রেণির কর্মচারী- নার্স ও মিডওয়াইফ ২৫টি পদের বিপরীতে আছে ১৮ জন। ৩য় শ্রেণির ১৪৫টি কর্মচারী পদের বিপরীতে পদে আছেন ১১৬ জন। শূণ্য রয়েছে ২৯টি পদ। এর মধ্যে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পূরণ করা হয়েছে একটি পদ। ৪র্থ শ্রেণির ২৭টি পদের বিপরীতে বর্তমানে পূরণ আছে মাত্র ১৩টি পদ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী সংকট রয়েছে। তার সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স, এক্সরে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন অচল। ফলে এখান থেকে চিকিৎসাসেবা প্রদান ব্যহত হচ্ছে। অত্যাধুনিক অপারেশ রুম থাকলেও অ্যানেসথেসিয়া ও সার্জন না থাকায় রোগীদের অপারেশন করানো যাচ্ছে না। তবে এ সব সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ’র ডিও পত্রসহ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে।
তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রতাপ কাশ্যপী বলেন, ডাক্তারসহ বিভিন্ন জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।