ঢাকা ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের প্রতীক শোলাকিয়া ঈদগাহ স্থান করে আছে মানুষের হৃদয়ে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:২০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০১৯
  • ২৩৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৭৫০ সাল থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে হিসাব অনুসারে শোলাকিয়া ঈদগাহের বয়স ২৬৯ বছর। প্রতিষ্ঠার ৭৮ বছর পর ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে এই মাঠে একসঙ্গে এক লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এ সোয়া লাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় সোয়া লাখিয়া, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া।

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের প্রতীক শোলাকিয়া ঈদগাহ স্থান করে আছে মানুষের হৃদয়ে। স্থানীয় হয়বতনগর সাহেব বাড়ির শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ (র.) জামাতে ইমামতি করেন। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীতীর ঘেঁষে অবস্থিত প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী এ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত। বৃহত্তম জামাতের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর ঈদগাহ মাঠে ১৯২তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

শোলাকিয়ার ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহটি প্রতিষ্ঠা করেন কিশোরগঞ্জ শহরের হয়বতনগর জমিদার বাড়ির লোকজন। বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর হয়বতনগরের জমিদার দেওয়ান মান্নান দাদ খান তার মায়ের ওসিয়াত মোতাবেক ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য ৪.৩৫ একর জমি ওয়াকফ করেন। সেই ওয়াকফ দলিলে উল্লেখ রয়েছে ১৭৫০ সাল থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বিশ্বাস রয়েছে, এ মাঠে পর পর তিনটি ঈদের নামাজ আদায় করতে পারলে একবার হজ পালনের সওয়াব পাওয়া যায়। সে জন্য শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান গরিবের মক্কা নামেও বিশেষ পরিচিত। সে বিশ্বাস থেকে এবং বৃহৎ ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করার মানসে প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পাশাপাশি ভিনদেশি মুসল্লিরাও এ ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় করেন।

জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এ মাঠে খ্যতিসম্পন্ন আলেমরা ইমামতি করেছেন। প্রথম বড় জামাতের পর আরও যারা ইমামতি করেছেন তারা হলেন-হজরত মাওলানা হাফেজ মুহম্মদ হজরত উল্লাহ, হজরত মাওলানা পেশওয়ারী, হজরত মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন, মাওলানা হামিদুল হক, হজরত মাওলানা মাজহারুল হক, হজরত মাওলানা আবদুল গণি, হজরত মাওলানা আতহার আলী, হজরত মাওলানা আবদুল মান্নান, হজরত মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ নূরুল্লাহ ও মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

২০০৯ সাল থেকে আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ঈদ জামাতে ইমামতি করছেন। তবে ২০১৬ সালে ঈদ জামাত শুরুর আগে জঙ্গি হামলার ঘটনার পরিস্থিতিতে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের পরিবর্তে জামাতে ইমামতি করেন বিকল্প ইমাম শহরের বড়বাজার জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শোয়াইব আব্দুর রউফ। তবে গত দুই বছর বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের ইমামতিতেই জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এবারও জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।

প্রতিবছরই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিণত হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মহামিলন কেন্দ্রে। এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের প্রতীক শোলাকিয়া ঈদগাহ স্থান করে আছে মানুষের হৃদয়ে

আপডেট টাইম : ০১:২০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৭৫০ সাল থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে হিসাব অনুসারে শোলাকিয়া ঈদগাহের বয়স ২৬৯ বছর। প্রতিষ্ঠার ৭৮ বছর পর ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে এই মাঠে একসঙ্গে এক লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এ সোয়া লাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় সোয়া লাখিয়া, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া।

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের প্রতীক শোলাকিয়া ঈদগাহ স্থান করে আছে মানুষের হৃদয়ে। স্থানীয় হয়বতনগর সাহেব বাড়ির শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ (র.) জামাতে ইমামতি করেন। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীতীর ঘেঁষে অবস্থিত প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী এ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত। বৃহত্তম জামাতের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর ঈদগাহ মাঠে ১৯২তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

শোলাকিয়ার ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহটি প্রতিষ্ঠা করেন কিশোরগঞ্জ শহরের হয়বতনগর জমিদার বাড়ির লোকজন। বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর হয়বতনগরের জমিদার দেওয়ান মান্নান দাদ খান তার মায়ের ওসিয়াত মোতাবেক ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য ৪.৩৫ একর জমি ওয়াকফ করেন। সেই ওয়াকফ দলিলে উল্লেখ রয়েছে ১৭৫০ সাল থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বিশ্বাস রয়েছে, এ মাঠে পর পর তিনটি ঈদের নামাজ আদায় করতে পারলে একবার হজ পালনের সওয়াব পাওয়া যায়। সে জন্য শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান গরিবের মক্কা নামেও বিশেষ পরিচিত। সে বিশ্বাস থেকে এবং বৃহৎ ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করার মানসে প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পাশাপাশি ভিনদেশি মুসল্লিরাও এ ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় করেন।

জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এ মাঠে খ্যতিসম্পন্ন আলেমরা ইমামতি করেছেন। প্রথম বড় জামাতের পর আরও যারা ইমামতি করেছেন তারা হলেন-হজরত মাওলানা হাফেজ মুহম্মদ হজরত উল্লাহ, হজরত মাওলানা পেশওয়ারী, হজরত মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন, মাওলানা হামিদুল হক, হজরত মাওলানা মাজহারুল হক, হজরত মাওলানা আবদুল গণি, হজরত মাওলানা আতহার আলী, হজরত মাওলানা আবদুল মান্নান, হজরত মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ নূরুল্লাহ ও মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

২০০৯ সাল থেকে আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ঈদ জামাতে ইমামতি করছেন। তবে ২০১৬ সালে ঈদ জামাত শুরুর আগে জঙ্গি হামলার ঘটনার পরিস্থিতিতে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের পরিবর্তে জামাতে ইমামতি করেন বিকল্প ইমাম শহরের বড়বাজার জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শোয়াইব আব্দুর রউফ। তবে গত দুই বছর বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের ইমামতিতেই জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এবারও জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।

প্রতিবছরই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিণত হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মহামিলন কেন্দ্রে। এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই।