বহু রঙ্গ এক রূপপুরে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা প্রতিটি বালিশের দাম এবং তা ফ্ল্যাটে উঠাতে ৭৬০ টাকা খরচ দেখিয়ে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। শুধু বালিশ নয়, বৈদ্যুতিক চুলা, কেটলি, ইস্ত্রি, টেলিভিশন, ফ্রিজ, ওয়ারড্রোব, খাট, বিছানা, মাইক্রোওয়েভসহ বিভিন্ন আসবাব কেনাকাটায় অকল্পনীয় ও অবিশ্বাস্য খরচ দেখানো হয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত ভবনের আসবাবপত্র কেনাকাটার নথিতে উঠে এসেছে পিলে চমকানো এমন খরচের তথ্য। ১১০টি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র কেনা ও তা ভবনে ওঠাতে ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ২৯২ টাকা!

শুধু তাই নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন এবং অন্যান্য খাতেও আকাশচুম্বী ব্যয় দেখিয়ে গোটা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের একজন গাড়ি চালকের বেতন ধরা হয়েছে ৯১ হাজার এবং রাঁধুনী বা মালির বেতন ধরা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। সরকারি অর্থের এমন যথেচ্ছ ব্যয় ও লুটপাটের চিত্র দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠছে সাধারণ মানুষ। এক রূপপুরে বহু খাতের লুটপাটের চিত্রকে জনগণের টাকা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের ‘রঙ্গ-তামাশা’ বলেই অভিহিত করছেন অনেকে।

গণমাধ্যমে এসব তথ্য উঠে আসার পর দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা একে সরকারি অর্থের ‘হরিলুট’ হচ্ছে বলে আখ্যা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়েছেন সাধারণ মানুষ। সরকারি টাকার এই রেকর্ড লুটপাটের পেছনে গণপূর্ত অধিদফতরের পাবনা পূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের নাম উঠে এসেছে ইতোমধ্যে। যদিও সংশ্লিষ্টদের দাবি-সব নিয়ম মেনে, স্বচ্ছতার সঙ্গেই কেনাকাটা করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে-মামুলি একটি বালিশের দাম কীভাবে ছয় হাজার টাকা হয় আর তার ওজনই বা এমনকি যে, তা ফ্ল্যাটে ওঠাতে ৭৬০ টাকা খরচ পড়ে! বালিশ ছাড়া অন্যান্য আসবাবের মধ্যে প্রতিটি বিছানা কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫৯৮৬ টাকা আর তা ওঠানোর ব্যয় ৯৩১ টাকা। প্রতিটি খাট কেনায় খরচ হয়েছে ৪৩৩৫৭ টাকা, ওঠানোর ব্যয় ১০৭৭৩ টাকা। প্রতিটি বৈদ্যুতিক চুলা কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৭৭৪৭ টাকা, আর ওই চুলা ওঠাতে ব্যয় হয়েছে ৬৬৫০ টাকা। বৈদ্যুতিক কেটলি কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫৩১৩ টাকা, ওঠানোর খরচ ২৯৪৫ টাকা। রুম পরিষ্কারের একটি মেশিন কিনতে খরচ হয়েছে ১২০১৮ টাকা, ওঠাতে খরচ হয়েছে ৬৬৫০ টাকা। ইলেকট্রিক আয়রন কিনতে খরচ পড়েছে ৪১৫৪ টাকা, আর ওঠানোর খরচ ২৯৪৫ টাকা। একেকটি টেলিভিশনের দাম দেখানো হয়েছে ৮৬৯৬০ টাকা, আর তা ওঠানোর খরচ ৭৬৩৮ টাকা।

টেলিভিশন রাখার জন্য প্রতিটি কেবিনেটে খরচ হয়েছে ৫২৩৭৮ টাকা করে। ফ্রিজের দাম দেখানো হয়েছে ৯৪২৫০ টাকা করে আর তা ফ্ল্যাটে ওঠাতে খরচ পড়েছে ১২৫২১ টাকা। একেকটি ওয়ারড্রোব কিনতে লেগেছে ৫৯৮৫৮ টাকা। তা ওঠাতে লেগেছে ১৭৪৯৯ টাকা। মাইক্রোওয়েভ কেনায় ব্যয় হয়ে ৩৮২৭৪ টাকা, ওঠাতে খরচ হয়েছে ৬৮৪০ টাকা করে। প্রতিটি সোফা কিনতে খরচ হয়েছে ৭৪৫০৯ টাকা আর ভবনে ওঠাতে খরচ হয়েছে ২৪২৪৪ টাকা করে। ১৪৫৬১ টাকা করে কেনা সেন্টার টেবিলের প্রত্যেকটি ভবনে তুলতে লেগেছে ২৪৮৯ টাকা। ছয়টি চেয়ারসহ ডাইনিং টেবিলের প্রতিটি সেট কেনা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৪ টাকায়। ভবনে তুলতে লেগেছে ২১ হাজার ৩৭৫ টাকা করে। সরকারি কর্মকর্তাদের আসবাবের এমন নজিরবিহীন দাম দেখে চক্ষু চড়কগাছ হচ্ছে যে কারোরই। তাই এ প্রশ্নটাও বারবার তাড়া করে বেড়াচ্ছে সাধারণ মানুষকে-জনগণের টাকার এমন হরিলুট কীভাবে সম্ভব?

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প পাস হওয়ার পর থেকে অনেকেই জোর দিয়ে বলেছিলেন, দেশের সর্ববৃহৎ এ প্রকল্পে সর্ববৃহৎ লুটপাটের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা এ ধরনের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপযোগিতা এবং প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিকেই তুলে ধরেছে জনসমক্ষে। কিন্তু মাত্র ১১০টি ফ্ল্যাটের জন্য আসবাব কেনাকাটায় এমন লোপাটের চিত্র উঠে আসার পর প্রকল্পের আরও ভয়াবহ লুটপাট ও দুর্নীতির আশঙ্কা করছেন অনেকে।

‘সাপ্তাহিক’ সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন- ‘বালিশ কেনা-উঠানোর খরচ দেখে যারা অবাক হচ্ছি, তারা হয়তো কল্পনাও করতে পারছি না, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে আসলে কী ঘটছে! রাশিয়া থেকে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়ে চলছে এই প্রকল্প। ঋণের টাকা কীভাবে খরচ হচ্ছে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। প্রযুক্তি, লোকবল সবই বিদেশি। কোন শর্তে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অজানা। সম্পূর্ণ অস্পষ্ট নিরাপত্তার দিকটিও। এত ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতি ও অনিরাপদ প্রকল্প বিষয়ে দেশের মানুষ হিসেবে আমরাও বেশ নির্বিকার!’

আসবাব কেনাকাটায় হরিলুটের চিত্র উঠে আসার দুদিনের মাথায় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্বাভাবিক বেতনের তথ্যও উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। সেখানে দেখা যাচ্ছে এই প্রকল্পের গাড়িচালকের বেতন ৭৩ হাজার ৭০৮ টাকা এবং একজন রাঁধুনী ও মালির বেতন ৬৩ হাজার ৭০৮ টাকা, যা একজন সচিবের বেতনের কাছাকাছি। প্রকল্প পরিচালকের বেতন ধরা হয়েছে চার লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করলে পাবেন আরও দুই লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রকল্প পরিচালক পাবেন ছয় লাখ ৯৬ হাজার টাকা!

এ প্রকল্পের কর্মকর্তা পর্যায়ে সর্বনিম্ন বেতন ধরা হয়েছে এক লাখ তিন হাজার টাকা। এর বাইরে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব থেকে পাবেন অতিরিক্ত আরও ৪৫ হাজার টাকা। এতে তার মোট বেতনের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা যা প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বেতনের চেয়েও বেশি। এ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে।

২০১৭ সালের নভেম্বরে মূল নির্মাণকাজ শুরু হয় এ প্রকল্পের। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ (মূল পর্যায়) প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ৯ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। রাশিয়ান ফেডারেশনের স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট হিসেবে দেবে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকি ২২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা দেওয়া হবে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। এ প্রস্তাব (ডিপিপি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ওঠার কথা রয়েছে। পাস হওয়ার পর ব্যয়ের দিক থেকে এটিই হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্প, যা পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রায় চারগুণ।

এ প্রকল্পের সব পদেই অস্বাভাবিক বেতন-ভাতা ধরা হয়েছে। বেতন ছাড়াও আরও কয়েকটি খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় ধরে চূড়ান্ত করা হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ (মূল পর্যায়) প্রকল্প। ডিপিপি অনুযায়ী, ৩৬৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ও ভাতা হিসেবে ৬৯৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বেতন ৩৬ শতাংশ এবং ভাতা ধরা হয়েছে ৬৪ শতাংশ।

দেখা গেছে, সরকারি বেতন কাঠামোর গ্রেড অনুসরণ না করে ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্প পরিচালকসহ ১৬টি পর্যায়ে বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জন্য ধরা হয়েছে পৃথক বেতন কাঠামো। এর মধ্যে প্রকল্প পরিচালক পাবেন ছয় লাখ ৯৬ হাজার টাকা বেতন, যা সচিবের বেতনের প্রায় ৯ গুণ। যদিও পরিচালককে গ্রেড-১ তথা সচিবের সমমর্যাদার কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক পাবেন তিন লাখ ৬৩ হাজার টাকা। তিনি প্রকল্পের স্টেশন ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতে পারেন, এ জন্য অতিরিক্ত এক লাখ ৮০ হাজার টাকা পাবেন তিনি। এতে তার মোট বেতন দাঁড়াবে পাঁচ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।

প্রকল্পের রাশিয়া অফিসের পরিচালকের বেতন ধরা হয়েছে তিন লাখ ২১ হাজার টাকা করে। প্রকল্পের সাত বিভাগের সাতজন প্রধানের বেতনও তিন লাখ ২১ হাজার টাকা। কারিগরি ও প্রশাসনিক অন্যান্য পদের বেতনও অনেক বেশি ধরা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পদেও এসব ব্যক্তি কাজ করবেন। এ জন্য তারা অতিরিক্ত বেতন-ভাতা পাবেন।

বেতনের বাইরে বার্ষিক সর্বোচ্চ তিন মাসের মূল বেতনের সমান চিকিৎসা ভাতা, মাসিক তিন থেকে ছয় হাজার টাকা যাতায়াত ভাড়া, মাসিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা সন্তানদের শিক্ষাভাতা, মূল বেতনের ৪০ শতাংশ হারে মাসিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং তেজস্ক্রিয় ভাতা ও ২০ শতাংশ হারে শিফট ভাতা ও বিদ্যুৎ বিল ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রকল্পটির গাড়িচালকের বেতন ৭৩ হাজার ৭০৮ টাকা, যা একজন সচিবের কাছাকাছি। প্রকল্পটির গাড়িচালকরা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বও পালন করতে পারবেন। এতে আরও ১৮ হাজার টাকা পাবেন গাড়িচালকরা। এতে তাদের বেতন দাঁড়াবে ৯১ হাজার ৭০৮ টাকা। প্রকল্পটির সর্বনিম্ন বেতন রাঁধুনী বা মালির। প্রকল্প থেকে তিনি বেতন পাবেন ৬৩ হাজার ৭০৮ টাকা। আর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালন করলে অতিরিক্ত পাবেন ১৬ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তার বেতন পড়বে ৭৯ হাজার ৭০৮ টাকা, যা সচিবের বেতনের চেয়েও বেশি।

প্রকল্পের এমন বেতন-ভাতাকে সরকারি স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন ও অনিয়ন্ত্রিত বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্ভাব্যতা যাচাই স্পষ্ট নয়, ইআইএ নিয়ে লুকোচুরি, স্পেন্ট ফুয়েল (অবশিষ্ট তেজস্ক্রিয় জ্বালানি) ইস্যুর সমাধান হয়নি। এর মধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আগে প্রকল্পের ব্যয়সহ বিতর্কিত ইস্যুগুলো সমাধান করা দরকার।

এদিকে প্রকল্পটির বিভিন্ন খাতের অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। ১২ খাতে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বিষয়ে সুস্পষ্ট জবাবও চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের বেতন-ভাতায় ৭০০ কোটি টাকা, যানবাহন কেনায় ৬৫ কোটি টাকা, সরঞ্জাম কেনায় ২৯২ কোটি টাকা, কম্পিউটার ও সফটওয়্যারে ১১১ কোটি টাকা, টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম সংগ্রহে ১৪০ কোটি টাকা, ভূমি অধিগ্রহণে তিন হাজার ২৮৭ কোটি টাকা, পরামর্শক প্রশিক্ষণ ও সেবা খাতের দুই হাজার ৯৯২ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন বেশি করা হয়েছে। এ বিষয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা চেয়েছে কমিশন। এর বাইরে কোনো কারণ ছাড়াই অনুদান ও থোক বরাদ্দ ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এসব ব্যয় প্রাক্কলনে অস্বচ্ছতা রয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে।

এ ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (প্রাথমিক পর্যায়) প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, পরিকল্পনা কমিশন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাবে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। এতে সংস্থাটির নিজস্ব যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। তবে প্রকল্পের কোনো খাতেই অযৌক্তিক ব্যয় ধরা হয়নি। কর্মকর্তাদের বেতন সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে আকর্ষণীয় বেতন না দিলে কেউ চাকরি করতে আসবে না। সব দিক বিবেচনা করেই এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শিগগিরই সব প্রশ্নের জবাব কমিশনে তুলে ধরা হবে।

অপরদিকে আসবাব কেনাকাটায় ‘হরিলুটে’ নাম উঠে এসেছে গণপূর্ত অধিদফতরের পাবনা পূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের। পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান এ সম্পর্কে বলেছেন, তারা গণপূর্ত অধিদফতরের বিধিবিধান মেনেই কাজ করেন। উন্মুক্ত দরপত্র দিয়ে মালামাল কেনাসহ অন্যান্য কাজ করা হয়েছে। সেখানে কোনো ধরনের অনিয়মের সুযোগ নেই। সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই করা হয়েছে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে যে হরিলুট চলছে তা তো পরিষ্কার। এসব দেখার কেউ নেই শোনারও কেউ নেই। কোথাও কোনো স্বচ্ছতা নেই। সরকারের সদিচ্ছার অভাব বলেই সর্বত্র এমন অবস্থা দৃশ্যমান হচ্ছে। সংসদে যে কাজগুলো করার কথা সেগুলো হচ্ছে না। পার্লামেন্টে কোনো বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। নিয়ম-অনিয়ম নিয়ে কথা হয় না। তাহলে তো এমন অবস্থা হবেই। সরকারের উচিত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রূপপুর প্রকল্প নিয়ে যে তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে তা যদি সত্য হয় তবে তা অত্যন্ত দুঃখের এবং উদ্বেগের বিষয়। কারণ এটি সরকারের সর্ববৃহৎ প্রকল্প। আর এ প্রকল্পের মাত্র একটি অংশেই এত বড় দুর্নীতি সবাইকে ভাবিয়ে তোলে। এ অর্থ তো জনগণের অর্থ। এ ধরনের জালিয়াতি সরকারকে বিব্রত করার জন্য যথেষ্ট। এর সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে।

প্রসঙ্গত, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মূল প্রকল্প এলাকার বাইরে তৈরি হচ্ছে গ্রিনসিটি নামের আবাসন পল্লী। সেখানে ওই পল্লীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য ২০ তলা ১১টি ও ১৬ তলা আটটি ভবন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০ তলা আটটি ও ১৬ তলা একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া ৯টি ভবনের ৯৬৬টি ফ্ল্যাটের জন্য আসবাবপত্র কেনা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে একটি ২০ তলা ভবনের ১১০টি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র কেনা ও তা ভবনে ওঠাতে সব মিলে ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ২৯২ টাকা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর