বাবা-মার কথা বড় বেশি মনে পড়ে! বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

আমাদের মায়া কাটিয়ে বাবা না ফেরার দেশে গেছেন মনে হয় এই তো সেদিন। কিন্তু কর্মসূচির ১০৭তম দিনে বাবা-মার কবরের পাশে রাত কাটাতে গিয়ে দেখলাম, দেখতে দেখতে ১৫ বছর হয়ে গেছে। আমরা বাবা-মার ছায়া পেয়েছি অনেক দিন। রাস্তাঘাটে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের মুখে যখন শুনি বাবা নেই, মা নেই- বুকের ভেতর কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে। শুধু শান্তির আশায় ঘর ছেড়ে পথেপ্রান্তরে ঘুরছি অনেকদিন। তারই এক পর্যায়ে বাবা-মার কবরের পাশে তাঁবু ফেলেছিলাম। রাতটা চেতন, না অচেতন ছিলাম খেয়াল করিনি। তবে সারারাত মনে হয়েছে, জ্যৈষ্ঠে আম কুড়াচ্ছি, আষাঢ়-শ্রাবণে মাছ ধরছি, মা সেই মাছ রান্না করলে কিলবিল করা ভাইবোনেরা মজা করে খাচ্ছি। বাবা বাড়ি ফিরলে সে কী আনন্দ- ভাবতে ভাবতেই ফজরের আজান হয়। মসজিদে নামাজ আদায় করে কবরের পাশে দোয়া করতে গিয়ে কেন যেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না, শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। শুধু বাবা-মার স্মৃতি হৃদয় তোলপাড় করছিল। দেশব্যাপী অবস্থান কর্মসূচির সুবাদে বাবা-মার কবরের পাশে অসংখ্য সহকর্মীকে নিয়ে রাত কাটানোর এ সুযোগ আমার জীবনে অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকল। ২০০০ সালের ১৩ মে বাবাকে ছাতিহাটিতে কবর দিয়ে সেদিন সবাই চলে গিয়েছিল। কিন্তু কেন যেন বাবাকে কবরে রেখে আমার বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল না। তাই সেখানেই ছিলাম। আদৌ ঘুমিয়েছিলাম কিনা ১৫ বছর পর মনে করতে পারছি না। মানুষ মরণশীল, সবাই মরবে, আমিও কোনোদিন চলে যাব। কিন্তু বাবা-মার জন্য ইদানীং কেন এত বুকে বাজে ভেবে পাই না। জানি, বাবা-মা থাকতে বাবা-মার জন্য অনেকেই তেমন নাড়িছেঁড়া টান অনুভব করে না। মায়ের জন্য করলেও বাবার জন্য আমিও হয়তো করিনি- এখন সেসব ভেবে নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। বাবা-মার উপযুক্ত সন্তান হতে যে গুণাবলির দরকার তার কিছুই হয়তো অর্জন করিনি, তবু এটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি কখনো চেষ্টার ত্রুটি করিনি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমার বাবা-মাসহ দুনিয়ার সব বাবা-মাকে মার্জনা করে বেহেশতবাসী করেন।

অনেকদিন থেকেই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার নারায়ণগঞ্জে অবস্থান কর্মসূচির অনুরোধ করছিল। আমিও রাজি ছিলাম। তাই ১৪ তারিখ ছাতিহাটি থেকে প্রথমে গোড়াই সোহাগপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে খাবার খেয়ে বিকালে টঙ্গীর মিলগেটে অবস্থান নিয়েছিলাম। বাড়ি বাড়ি থেকে আনা দুপুরের খাবার ছিল অসাধারণ। দলীয় কর্মী গফুর, তার ছেলে কাব্য, আমজাদ, তাপস, শ্রমিক নেতা নায়েব আলী, বেলাল মেম্বার, তাছাড়া রাবেয়া নামের একজন অতি দরিদ্র মহিলা আলু ভর্তা ও লাউশাক দিয়ে ভাত এনেছিল, ২-৪-১০ বছরে অমন সুস্বাদু খাবার খাইনি। মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাহ শিকদার। স্কুলের হেডমাস্টার মো. লুৎফর রহমান এবং অন্যরা অসম্ভব সহযোগিতা করেছে। বহুদিন পর গোড়াই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের খাবারে রাজকীয় স্বাদ পেয়েছি। মানুষজনের আগ্রহ, সুস্বাদু খাবার হৃদয়-মন ভরিয়ে তোলে। শফিকুল ইসলাম দেলোয়ারের ছোট ভাই আলহাজ শহীদ টঙ্গীর মিলগেটে তুলার ব্যবসা করে। অনেকদিনের ইচ্ছা তার ওখানে সফরে যাই। তাই অবস্থান কর্মসূচির ১০৮তম দিনে মিলগেট মন্নু শাহী জামে মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। মসজিদের ইমাম, খাদেম আলহাজ হাফেজ আবু তাহের অসাধারণ সহমর্মিতা দেখিয়েছে। বিশেষ করে মন্নু টেঙ্টাইলের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, মসজিদের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মফিজ উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে মধুপুরে ছিল। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী মধুপুরে ব্যাপক বিমান হামলা করলে তাকে মধুপুর ত্যাগ করে জীবন বাঁচাতে বলেছিলাম। সেদিনের সেই ভয়াবহ পরিস্থিতির এতদিন পর নিখুঁত বর্ণনা শুনে অভিভূত না হয়ে পারিনি। এতদিন পরও আমার প্রতি তার নিষ্ঠা ভালোবাসায় অভিভূত হয়েছি।

টানা ৬৫ দিন মতিঝিলে কাটিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কবর জিয়ারতের আগে আফ্রো-এশিয়া ল্যাটিন আমেরিকার মুক্তির দূত ওলিয়ে কামেল হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার জিয়ারত করতে সন্তোষে গিয়েছিলাম। তারপর টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পথে কাশিয়ানীর ১৫৬ হোগলাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কুমার নদীর পাড়ে রাত কাটাতে গিয়ে প্রবল ঝড় তুফানে ভীষণ অসুবিধায় পড়েছিলাম। কিন্তু তারপর বঙ্গবন্ধুর কবরে কোনো কষ্ট বা কোনো অসুবিধা হয়নি। স্ত্রী-ছেলেমেয়েরা ছিল উপজেলা ডাকবাংলোয়, আমি ছিলাম বঙ্গবন্ধুর কবরে পায়ের কাছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি থেকে সব রকম সহযোগিতা পেয়ে ভালোই ছিলাম। সেখান থেকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়ায় রাত কাটিয়ে বনানী গোরস্থানে জাতীয় নেতাদের এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নিহত সদস্যদের কবর জিয়ারত করে বীরউত্তম জিয়াউর রহমানের কবরে ফাতেহা পাঠ করেছিলাম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে চরম অবহেলায় পড়ে থাকা জাতীয় নেতা শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং খাজা নাজিম উদ্দিনের কবরস্থানের দুরবস্থা দেখে শিউরে উঠেছিলাম। জাতীয় নেতাদের কবরে বাতি জ্বালানোর যদি কেউ না থাকে তাহলে আমাদের কী হবে? রশিদ বয়াতি এক সময় গেয়েছিল, ‘পাগল মরলে বাতি জ্বলে, মুন্সী মরলে জ্বলে না’, এ তো দেখি রশিদ বয়াতির কথাই সত্য। এই কয়েক বছর আগেও শালনা পোড়াবাড়ি এক নেংটা পাগল থাকত। তার কবরে শত শত মানুষ এখন রাত দিন পড়ে থাকে। হাজার হাজার লাখ লাখ টাকা আয় হয়। পাগল মারা গেছে ক’বছর আর হবে। এর মধ্যেই স্কুল-কলেজ কতকিছু হচ্ছে তার আয়ে। এ তো দেখি দেশের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেয়ে পাগল হওয়াই ভালো, মানুষের উপকারে আসা যায়। খাজা নাজিম উদ্দিন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হকের পাশাপাশি কবর যা ঝকঝকে তকতকে থাকার কথা। অথচ যেদিন আমি গিয়েছিলাম সেদিন না হলেও ইঞ্চিপুরো ধুলা ছিল। ছাদ চুইয়ে কবরে পানি পড়ছিল- কেন অমন হবে? জাতীয় নেতাদের সম্মান করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। আমরা যদি আমাদের অতীতকে ধরে রাখতে না পারি তাহলে ভবিষ্যৎ কী? টঙ্গী থেকে নারায়ণগঞ্জের পথে সাইনবোর্ডে মসজিদে কোবায় নামাজ আদায় করে বরিশালের আবুল হোসেনের ঘরে দুপুরে খেয়েছিলাম। বড় চমৎকার ছিল সে খাবার। রাত কাটানোর কথা ছিল মদনপুরে। দারুণ বৃষ্টি- যা বলার মতো নয়। বৃষ্টিতে এক মসজিদে গিয়ে দেখি চারদিকে তালা। অজুঘরের ভেতর দিয়ে কোনোরকমে বারান্দায় বসে মনে পড়েছিল কাজী নজরুল ইসলাম সেই কবে লিখেছিলেন, ‘খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়? কে দেয় সেখানে তালা? এর সব দ্বার খোলা রবে চালা হাতুড়ি শাবল চালা।’ মসজিদ যেই ঝকঝকে তকতকে হয়, থাইয়ের দরজা-জানালা, দেয়ালে-ফ্লোরে টাইলস, উপরে ফ্যান, এসি তখনই পড়ে তালা। সাধারণের প্রবেশের সুযোগ হয় সীমিত, পথিকের আশ্রয় নেওয়ার জায়গা থাকে না। কর্তৃপক্ষের যুক্তি, মসজিদ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যায় তাই তাতে তালা দিতে হয়। ব্যাপারটা অস্বীকার করা যায় না। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, অন্যান্য দালান-কোঠা সবই মানুষের হলেও মসজিদ মানুষের নয়, মসজিদ একান্তই আল্লাহর ঘর। মসজিদের ফ্যান চুরি হলে সেটা চোরের দায়, মসজিদের নয়। আল্লাহ কোরআন মজিদে বলেছেন, ‘আমার ইসলাম, আমার কোরআন আমি রক্ষা করব।’ কোনো মসজিদ যদি প্রকৃতই আল্লাহর ঘর হয়ে উঠতে পারে চোর কিভাবে চুরি করবে? চুরি করতে গেলে তার তো ফ্যানের সঙ্গে বা চুরি করতে যাওয়া জিনিসপত্রের সঙ্গে আটকে থাকার কথা। কোনো মসজিদে একজন মুসলি্লর ইবাদতও যদি আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় হয় আমার বিশ্বাস, সেই মসজিদে চোর-ডাকাত তো দূরের কথা কোনো কু-লোকের প্রবেশ করা সম্ভব নয়। আসলে সমস্যা আমাদের ইমানের দুর্বলতা। তাই অনেক ক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে পারি না। চোর-ডাকাতকে ভয় করে আল্লাহর ঘরে তালা দিই।

বন্দরের মাধবপাশার সেনপাড়ায় এক মসজিদের শতগজের মধ্যে তাঁবু ফেলেছিলাম। সেদিন ছিল শবে মেরাজের রাত। মসজিদে বয়ানের আয়োজন ছিল। কতক্ষণ কোনো এক মাওলানার রেকর্ড বাজল, তারপর এক নামিদামি মাওলানা অনেক রাত পর্যন্ত বয়ান করলেন। বয়ানে খুব একটা গভীরতা ছিল না। মাঝেসাজেই বাচ্চাদের বকাঝকা করছিলেন। শবে মেরাজের আলোচনায় রসুলে করিম (সা.)-এর মেরাজ নিয়ে নিখুঁত আলোচনা হওয়ার কথা। ছোটরা গোলমাল করেছে, বড়রা তো করেনি, তারাও যে খুব একটা বুঝতে পেরেছেন তেমনটা মনে হয় না। আরবের অবিশ্বাসীরা রসুলকে কখনো বিশ্বাস করেনি। সবকিছু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নবী করিম (সা.)-এর মেরাজের ঘটনা যখন ঘটে তখন হজরত আবুবকর (রা.) মক্কার বাইরে ছিলেন। কয়েক মাস পর তিনি যখন ফিরছিলেন নগরীতে প্রবেশের আগেই ইসলামবিরোধীরা নগরীর বাইরে গিয়ে তাকে ধরে বসে, ‘তুমি তো মক্কা ছিলে না, আবদুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ দেখ এসব কী বলছে?’ হজরত আবুবকর (রা.) বিস্মিত হয়েছিলেন। তিনি জানতেন আবু জাহেল, আবু লাহাবের দল নবী করিম (সা.) কে রসুল মানে না, তাঁকে সম্মান করে না। তাঁকে শুধু আবদুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ বলে ডাকে। তারা বলছিলেন, ‘দেখ তো কিসব আজগুবি কথা! এক রাতের সামান্য সময়ে মক্কা থেকে জেরুজালেম, সেখান থেকে সপ্তম আসমান- এ কী সব পাগলের প্রলাপ?’ হজরত আবুবকর (রা.) শুধু জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘এসব কে বলেছে?’ তারা যখন বলে, ‘আবদুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ।’ তখন তিনি বলেছিলেন, ‘রসুল যখন বলেছেন তখন অবশ্যই সত্য। কারণ রসুল কখনো মিথ্যা বলেন না, তিনি মিথ্যা বলতে জানেন না।’ বয়ানটিকে মাওলানা সাহেব আরও ভালো করে তুলে ধরলে ভালো করতেন। বিবি আয়েশা (রা.) কোনো এক জায়গায় বলেছেন রসুলের মেরাজের খবর তিনি জানেন না। তিনি জানবেন কী করে? তার ঘর থেকে তো মেরাজে যাননি। তাই তার মেরাজের খবর জানার কথা নয়। মেরাজের ঘটনা ঘটেছিল মক্কায়। আর হজরত বিবি আয়েশা (রা.) রসুলের গৃহে এসেছিলেন মদিনায়। রসুল (সা.) নিজেই বলেছেন তিনি তার ফুপুর ঘর থেকে মেরাজে গিয়েছিলেন। তাই এক্ষেত্রে বিবি আয়েশার (রা.) প্রশ্ন আসে না। নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল। মদনপুর ফুলহর প্রাইমারি স্কুলের বারান্দায় রাতযাপনের মধুর স্মৃতি আমায় অনেকদিন আলোড়িত করবে। সকালে যখন স্কুলের বালুময় মাঠে বসেছিলাম, লোকজন কথা বলছিলেন, মাঝবয়সী এক মহিলা এসে বলেছিলেন, ‘স্কুলের পেছনে আমার বাড়ি। আপনাকে আমার গাছের একটা আম কেটে দিই?’ আমের চাইতে মিষ্টি ছিল তার দরদ ভরা কথা। আমার কুশিমণির কোনো প্রয়োজন হলে গলা ধরে দরদ দিয়ে ওভাবে বলে। সেনপাড়ায়ও সত্তর ঊর্ধ্ব একজন দুটি আম হাতে দিয়ে বলেছিলেন, ‘সারা জীবন অনেক আম খেয়েছেন। আমার গাছের দুটি আম খেয়ে দেখবেন।’ তার আম খেয়েছিলাম, বেশ ভালো ছিল। এভাবেই আদর-যত্নে, হেলাফেলায় দিনগুলো ভালোই যাচ্ছে।

আজ ক’দিন পত্রিকা খুললেই বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের খবর। হওয়াই স্বাভাবিক। দুই মাস কয়েকদিন পর তার খবর পাওয়া গেছে। সালাহউদ্দিনের বাড়িতে স্বজনদের নিশ্চয়ই আনন্দের সীমা থাকার কথা নয়। আশায় বুক বেঁধেছিলেন তার পরিবার-পরিজন। আল্লাহ তাদের আশা পূরণ করেছেন। একই রকম আশায় ইলিয়াসের পরিবারও তো বুক বাঁধতে পারে। আল্লাহ যেন তাদের আশাও পূরণ করেন। আল্লাহ সব পারেন এটাই তার প্রমাণ। এখন প্রশ্ন, সালাহউদ্দিন আহমদ মেঘালয়ের শিলংয়ে গেলেন কী করে? প্রশ্নটা আমাকে নাড়া দেয়। সীমান্তের ১০-২০ মাইলের মধ্যে হলে কিছু ভাবতাম না। কিন্তু এ যে একেবারে সীমান্ত থেকে ৪-৫শ কিলোমিটার ভিতরে। সমতল ভূমির মতো যাতায়াতের যত্রতত্র কোনো পথ নেই। পাহাড়ের গা ঘেঁষে এঁকেবেঁকে চলতে হয়। পাঁচ কিলোমিটার পাড়ি দিতে ২৫ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। আকাশপথে পাঁচ মিনিটের জায়গায় সড়কপথে কখনো পাঁচ ঘণ্টা লাগে। ত্রিপুরার মধ্যনগর থেকে কলকাতা পৌঁছতে সড়কপথে ৬০-৭০ ঘণ্টার প্রয়োজন হয়। সেখানে আমাদের উপর দিয়ে গেলে চার ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়। সেই পাহাড়-পর্বতে ঘেরা মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে পাওয়া গেল সালাহউদ্দিনকে। নিজে সেখানে গেছে এটা কানার ভাই অন্ধ বললেও আমি বিশ্বাস করব না, মেনেও নিব না। আমার ধারণা এর আগে জনাব সালাহউদ্দিনের মেঘালয়ের পথ জানাচেনা ছিল না। আমাদের দেশে মেঘালয়ের মতো রাস্তাঘাট নেই। পাকিস্তানে ঘুরাফেরা করার অভিজ্ঞতা থাকলে তবুও না হয় বলতাম ওরকম রাস্তাঘাট তিনি চিনেন। জনাব সালাহউদ্দিনকে নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ নেই। তিনি বেঁচে আছেন এটাই আল্লাহর প্রতি হাজার শুকরিয়া। একজন মানুষের বেঁচে থাকার চেয়ে পৃথিবীতে আর বড় কিছু নেই। এখন সালাহউদ্দিনকে নিয়ে অনেক কিছু হবে। কেউ বলবে সরকার এটা করেছে, কেউ বলবে নিজেরা করে সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে। সত্যের মা-বাবা বাংলাদেশে নেই। তাই চাপার জোর যার যত বেশি তার আওয়াজ শোনা যাবে। তবে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের অন্তর্ধানের পেছনে যে একটা সূক্ষ্ম পরিকল্পনা আছে, এটা বুঝতে কারও ভুল হওয়ার কথা নয়। যেভাবেই হোক সালাহউদ্দিন বেঁচে থাকুক, সুস্থ শরীরে স্বজনের কাছে ফিরে আসুক, এটাই আমাদের কায়মনে প্রার্থনা।

লেখক : রাজনীতিক।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর