হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জ জেলার দুর্গম ও বিস্তৃর্ন হাওর জনপদের চিত্র এখন বদলে যাচ্ছে। হাওরে ধারাবাহিক উন্নয়নের সাথে এবার যোগ হয়েছে ১২শত কোটি টাকার আরো ৪টি মেগা প্রকল্প। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে হাওর নদ-নদী, খাল-বিল, খনন-পূনঃখনন ও ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণসহ যাতায়াতের জন্যে বিস্তৃর্ন ডুবু সড়ক তৈরী করার মাধ্যমে। সুফল ভোগ করছে হাওরে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ। হাওর জনপদ এখন দেশের সর্ববৃহৎ পর্যটন অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
চলতি অর্থ বছরে কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের তত্ত্বাবধানে হাওরে ৪টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে পুরুদমে কাজ চলছে। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে বিস্তৃর্ন হাওর অঞ্চলই দেশের সর্ববৃহৎ আকর্ষনীয় এক পর্যটন অঞ্চলে রূপ নেবে বলে আশা করছে হাওরবাসী। একই সাথে ওইসব এলাকার ফ্লাস ফ্লাড, অতিবৃষ্টি বা বন্যার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও সহজ হবে। হাওরবাসীর জানমাল এবং কৃষকদের বোর ফসল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। এর ধারাবাহিকতায় মৎস্য চাষ-শস্য উৎপাদন সহজ ও বৃদ্ধি পাবে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের, দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে মধ্যে মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রাম ও নিকলী উপজেলা সীমানার মধ্যে রয়েছে কালনী কুশিয়ারা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। বিগত ২০১১ সাল থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, প্রকল্পের প্রধান অঙ্গ সমূহের মধ্যে রয়েছে নদী ড্রেজিং; কম্পার্টমেন্ট ডাইক নির্মাণ, ক্লোজার নির্মাণ, কাটখাল ও ইছাপুর সীমানায় লুপকাট, নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ, ভিলেজ প্লাটফর্ম নির্মাণ কাজসহ অন্যান কাজ।
প্রকল্পের প্রাথমিক বরাদ্ধ ৪শত ২৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ৪ শত ৩০ কোটি টাকা বরাদ্ধের আরেকটি মেগা প্রকল্পে ১২৩ কিলোমিটার নতুন বাঁধ, ৫০ কিলোমিটার খাল পূনঃ খনন, ১৯টি রেগুলেটর নির্মান, পানি নিস্কাশন অবকাঠামো নির্মাণ ও পূনর্বাসন ব্যবস্থা রয়েছে।
বন্যা ব্যবস্থাপনা ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্যে ইটনা,মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী, তাড়াইল, করিমগঞ্জ, পাকুন্দিয়া বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, ভৈরব ও কটিয়াদী উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
প্রস্তাবিত সেনাক্যাম্প প্রকল্পের প্রদান কাজগুলো হলো ১.৮৫ কিঃ মিঃ স্থায়ী তীর সংরক্ষণ, ১২৩ হেক্টর এলাকায় নদী ড্রেজিং ও ড্রেজ স্পয়েল দ্বারা ভূমি সমতল উচুঁ করন, ৪.১০ কিঃমিঃ ওয়েভ প্রটেকশন কাজ, ৪.১০ কিঃমিঃ পেরিফেরাল ডাইক নির্মান ও নদীর তীরে ২টি আরসিসি ঘাট নির্মান। উল্লেখ্য মিঠামইন সেনাক্যাম্পের কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ ৭০ থেকে ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। পুরু কাজ শেষ হলে হাওর এলাকার মানুষ এর সুফল ভোগ করবেন। সরেজমিনে হাওর অঞ্চল ঘুরে জানা গেছে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা থেকে নেমে আসা উজান এলাকার পানি কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলের নদ-নদী গুলো দিয়ে ভাটী অঞ্চলে প্রবাহিত হয়।
তাই প্রতি বছর উজানের পাহাড়ী ঢলের পলি মাটিতে কিশোরগঞ্জ হাওরের নদ-নদী ভরাট হয়ে যায়। এতে করে নদ-নদী তার স্বাভাবিক নাব্যতা হারিয়ে ফেলে। হাওরবাসীর দাবী, হাওরের প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্র ও নদ-নদীর স্বাভাবিক গতিপথ সচল রাখার জন্যে সরকার যে বরাদ্দ দেয় তা পার্শ্ববতী নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার হাওরের উন্নয়ন বরাদ্ধে তুলনায় কিশোরগঞ্জ জেলার বরাদ্ধ সিকিভাগ মাত্র। তাই বরাদ্ধ বৃদ্ধির জন্যে সরকারের কাছে হাওরবাসী পক্ষে জোর দাবি উঠেছে।