ঢাকা ০৭:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা সংক্রমণের যাত্রী পাচ্ছে না বাস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩৪:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০২০
  • ২০৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে বাসে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে মালিকপক্ষ বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছেন। করোনার কারণে ৬৭ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকার পর ১ জুন থেকে গণপরিবহন চালু হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকরা জানান, প্রথম দিকে যাত্রীর চাপ থাকলেও কিছুদিনের ব্যবধানে তা অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। এখন হাঁক ডাক দিয়েও যাত্রী মিলছে না। কমে গেছে দূরপাল্লার বাসের সংখ্যাও। এমনকি যাত্রীর অভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সার্ভিস প্রায় বন্ধই রয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বলছে, স্বাভাবিক সময়ে রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ, ফুলবাড়ীয়া ও মহাখালী টার্মিনাল থেকে দৈনিক গড়ে চার হাজার বাস যাতায়াত করে। এখন তা হাজারখানেকে নেমে এসেছে। তাও সব যাত্রায় বাসের অর্ধেক আসনও পূর্ণ হচ্ছে না। দূরপাল্লার পথে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসসেবা প্রায় বন্ধই রয়েছে। সব মিলিয়ে ২৫ শতাংশের বেশি বাস চলছে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ইনকিলাবকে বলেন, করোনার কারণে পরিবহন সেক্টর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি না চলায় মালিকরা পথে বসতে বসেছে। তারা না পারছে বাস বন্ধ করতে, না পারছে শ্রমিকদের বেতন দিতে। সব মিলে খুবই দুরবস্থার মধ্যে চলছে।
চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে দূরপাল্লার বাস চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরিবহন শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী, বাড়ানো হয় ৬০ শতাংশ ভাড়া। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চলাচলে গাফিলতিসহ যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ওঠে। রাজধানীতে চলাচলরত বিভিন্ন রুটের বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নগরীতে এখন ৩০ শতাংশের মতো বাস চলছে। যেগুলো চলছে সেগুলোতেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার নিয়ম করে দেয়া হলেও বেশিরভাগ বাসই চলছে অর্ধেকেরও কম যাত্রী নিয়ে। এ কারণে বাসগুলোতে বিভিন্ন স্টপেজে অধিক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
বাসের কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দূরপাল্লার বাস চালু হওয়ার পরে প্রথম কয়েক দিন মানুষের আনাগোনা বেশি ছিল এবং যাত্রীও বেশি পাওয়া গেছে। তবে এখন যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। যাত্রী না থাকায় দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা একেবারেই কমে এসেছে। পরিবহন মালিকদের মতে, ভয়-আতঙ্কের কারণে মানুষ এখন যাতায়াত করছে না। যতো দিন যাচ্ছে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সেই সাথে মানুষের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্কও বাড়ছে। তবে দূরের পথে যাত্রী কমে যাওয়ার পেছনে পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা আরও কিছু সুনির্দিষ্ট কারণের কথা বলছেন। এগুলো হচ্ছে, পুরোদমে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু না হওয়া। বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে যাতায়াত না থাকা। সরকারি-বেসরকারি অফিসে চাকরিজীবীদের উপস্থিতি কমে যাওয়া। শ্রমজীবী মানুষের যাতায়াতও কম।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ বলেন, যাত্রী সংকটের কারণে দূরপাল্লার বাস চলাচল একেবারেই কমে এসেছে। করোনার ভয়ে অনেকেই এখন যাতায়াত করছেন না। এমন পরিস্থিতিতে বাস চালিয়ে স্টাফদের বেতন দেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। সোহাগ পরিবহনের স্বত্বাধিকারী ফারুক তালুকদার বলেন, এখন বাস চালালে যত লোকসান হয়, বসিয়ে রাখলে এর চেয়ে কম লোকসান হবে। এসি বাসের চলাচল প্রায় বন্ধ। নন-এসি বাসও ২৫ শতাংশের বেশি চলে না। চালক-শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে বাস চালু রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, আসলে মানুষের ভয় কাটছে না। হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ বলেন, বর্তমানে ৩০ শতাংশ বাস চলাচল করছে আমাদের। তবে এসব বাসেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রী পাবার জন্য বেশিরভাগ গাড়ি নির্দিষ্ট টাইমের ১ ঘণ্টা পরে ছাড়া হচ্ছে।
এসি বাসের যাত্রী সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রীন লাইন পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার বলেন, দূরপাল্লার যাত্রীদের আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য আমাদের রয়েছে বিলাসবহুল অনেকগুলো এসি বাস। তবে যাত্রী সংকটের কারণে বর্তমানে আমাদের যা গাড়ি আছে তার ৩ শতাংশ চালাতে পারছি না। অর্থাৎ যাত্রী নাই বললেই চলে। কোনো যাত্রী আমাদের কাউন্টারেই আসেনা টিকিট কাটতে। এমন অবস্থায় যেখানে দশটি এসি বাস চলতো সেখানে এখন একটি চলে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

করোনা সংক্রমণের যাত্রী পাচ্ছে না বাস

আপডেট টাইম : ০৯:৩৪:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে বাসে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে মালিকপক্ষ বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছেন। করোনার কারণে ৬৭ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকার পর ১ জুন থেকে গণপরিবহন চালু হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকরা জানান, প্রথম দিকে যাত্রীর চাপ থাকলেও কিছুদিনের ব্যবধানে তা অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। এখন হাঁক ডাক দিয়েও যাত্রী মিলছে না। কমে গেছে দূরপাল্লার বাসের সংখ্যাও। এমনকি যাত্রীর অভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সার্ভিস প্রায় বন্ধই রয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বলছে, স্বাভাবিক সময়ে রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ, ফুলবাড়ীয়া ও মহাখালী টার্মিনাল থেকে দৈনিক গড়ে চার হাজার বাস যাতায়াত করে। এখন তা হাজারখানেকে নেমে এসেছে। তাও সব যাত্রায় বাসের অর্ধেক আসনও পূর্ণ হচ্ছে না। দূরপাল্লার পথে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসসেবা প্রায় বন্ধই রয়েছে। সব মিলিয়ে ২৫ শতাংশের বেশি বাস চলছে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ইনকিলাবকে বলেন, করোনার কারণে পরিবহন সেক্টর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি না চলায় মালিকরা পথে বসতে বসেছে। তারা না পারছে বাস বন্ধ করতে, না পারছে শ্রমিকদের বেতন দিতে। সব মিলে খুবই দুরবস্থার মধ্যে চলছে।
চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে দূরপাল্লার বাস চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরিবহন শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী, বাড়ানো হয় ৬০ শতাংশ ভাড়া। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চলাচলে গাফিলতিসহ যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ওঠে। রাজধানীতে চলাচলরত বিভিন্ন রুটের বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নগরীতে এখন ৩০ শতাংশের মতো বাস চলছে। যেগুলো চলছে সেগুলোতেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার নিয়ম করে দেয়া হলেও বেশিরভাগ বাসই চলছে অর্ধেকেরও কম যাত্রী নিয়ে। এ কারণে বাসগুলোতে বিভিন্ন স্টপেজে অধিক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
বাসের কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দূরপাল্লার বাস চালু হওয়ার পরে প্রথম কয়েক দিন মানুষের আনাগোনা বেশি ছিল এবং যাত্রীও বেশি পাওয়া গেছে। তবে এখন যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। যাত্রী না থাকায় দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা একেবারেই কমে এসেছে। পরিবহন মালিকদের মতে, ভয়-আতঙ্কের কারণে মানুষ এখন যাতায়াত করছে না। যতো দিন যাচ্ছে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সেই সাথে মানুষের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্কও বাড়ছে। তবে দূরের পথে যাত্রী কমে যাওয়ার পেছনে পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা আরও কিছু সুনির্দিষ্ট কারণের কথা বলছেন। এগুলো হচ্ছে, পুরোদমে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু না হওয়া। বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে যাতায়াত না থাকা। সরকারি-বেসরকারি অফিসে চাকরিজীবীদের উপস্থিতি কমে যাওয়া। শ্রমজীবী মানুষের যাতায়াতও কম।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ বলেন, যাত্রী সংকটের কারণে দূরপাল্লার বাস চলাচল একেবারেই কমে এসেছে। করোনার ভয়ে অনেকেই এখন যাতায়াত করছেন না। এমন পরিস্থিতিতে বাস চালিয়ে স্টাফদের বেতন দেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। সোহাগ পরিবহনের স্বত্বাধিকারী ফারুক তালুকদার বলেন, এখন বাস চালালে যত লোকসান হয়, বসিয়ে রাখলে এর চেয়ে কম লোকসান হবে। এসি বাসের চলাচল প্রায় বন্ধ। নন-এসি বাসও ২৫ শতাংশের বেশি চলে না। চালক-শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে বাস চালু রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, আসলে মানুষের ভয় কাটছে না। হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ বলেন, বর্তমানে ৩০ শতাংশ বাস চলাচল করছে আমাদের। তবে এসব বাসেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রী পাবার জন্য বেশিরভাগ গাড়ি নির্দিষ্ট টাইমের ১ ঘণ্টা পরে ছাড়া হচ্ছে।
এসি বাসের যাত্রী সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রীন লাইন পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার বলেন, দূরপাল্লার যাত্রীদের আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য আমাদের রয়েছে বিলাসবহুল অনেকগুলো এসি বাস। তবে যাত্রী সংকটের কারণে বর্তমানে আমাদের যা গাড়ি আছে তার ৩ শতাংশ চালাতে পারছি না। অর্থাৎ যাত্রী নাই বললেই চলে। কোনো যাত্রী আমাদের কাউন্টারেই আসেনা টিকিট কাটতে। এমন অবস্থায় যেখানে দশটি এসি বাস চলতো সেখানে এখন একটি চলে।