বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল’ থেকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ২১২টি হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে ২৫ হাজার করে মোট ৫৩ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। ১৭ অক্টোবর শনিবার বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত টুঙ্গিপাড়ায় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে চেক বিতরণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান, জনতা ব্যাংক লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুস সালাম। অনুষ্ঠানে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় প্রশাসন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেনবঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত টুঙ্গিপাড়ায় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত এমন একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আজ আমি সত্যিই আনন্দিত। শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এ দেশের মানুষের মুক্তির মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে পড়ে থাকা বিশাল অস্তিত্বের প্রতি, যাঁর জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হতে পারতাম না। তিনিই বাঙালি জাতির ললাটে স্বপ্নের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তাই আমি বলি তিনিই বাংলাদেশ।
একই সঙ্গে স্মরণ করছি তাঁরই সুকন্যা বাংলাদেশ সরকারের সুযোগ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নীতি কৌশলকে। সেই নীতি কৌশলের আলোকেই আমরা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ পুরো আর্থিকখাতকে ঢেলে সাজাচ্ছি। গড়ে তুলছি তাকে আরও গণহিতৈষী ও মানবিক রূপে। এই স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ইতোপূর্বে আমি যখন গোপালগঞ্জ সফরে এসেছিলাম তখন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট এখানকার কিছু কিছু গ্রামের অতি দরিদ্র মানুষদের কথা জানতে পেরেছি। বিশেষ করে জলাবেষ্টিত বেলেডাঙ্গা গ্রামের মানুষের কথা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এর সহযোগিতায় আমরা বেলেডাঙ্গা গ্রামের মানুষকে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল হতে অনুদান দিয়েছি। পরে আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে এবি ব্যাংক লিঃ ¯হানীয় দারিয়ারকুল গ্রামে আবারো অনুদান দিয়েছে। এ গ্রামের মানুষের হিসাব খুলেছে রূপালী ব্যাংক।
গভর্নর বলেন, এই দু’টি গ্রামে আমরা জরীপ করে দেখেছি। দু’টি গ্রামেই মানুষ আজ অধিক স্বচ্ছন্দে আছেন। তারা গরু কিনে পালন করেছেন, হাঁস পালন করছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছেন। এখন তারা অনুদান চান না। তারা ঋণ চান। ইতোমধ্যে আমরা রূপালী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছি এসব উদ্যোগী মানুষদেরকে খুব সহজ শর্তে ঋণ দিতে। অবহেলিত প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের জন্যে কিছু একটা করতে চান। ইতোমধ্যে জনতা ব্যাংক লিঃ আগ্রহ দেখিয়েছে তার প্রস্তাবে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম অনেক বেড়েছে। গত ছয় বছরে ব্যাংকিং খাতে সিএসআর ব্যয় প্রায় দশগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১১ কোটি টাকা। দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন, প্রাকৃতিক ও আকষ্মিক কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যাংকগুলো প্রতিবছর বর্ধিত হারে সিএসআর কার্যক্রম গ্রহণ করে চলেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ও দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সিএসআর খাতে আরও ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণের অবকাশ থাকায় আর্থিক খাতের রেগুলেটর হয়েও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমরা কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করি। এ কারণেই গত বছর থেকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল’ নামে একটি সিএসআর তহবিল চালু করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুনাফা থেকে প্রতিবছর ১০ কোটি টাকা এ তহবিলে জমা করা হয়। এ তহবিল থেকে এ পর্যন্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পরিবেশ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিট ও ফায়ার সার্ভিসের মতো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, প্রাযুক্তিক ও দক্ষতা উন্নয়ন, প্রবীণদের সক্ষমতা অর্জন, প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন, বীরাঙ্গনাদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও অশ্রুমোচন এবং দেশের টেকসই আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি বিষয়ক প্রকল্পের অনুকূলে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
আমাদের এই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ২১২টি হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ২৫ হাজার করে মোট ৫৩ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হচ্ছে। এ উদ্যোগটি দেশের দরিদ্র পরিবারগুলোকে সিএসআর কর্মসূচির আওতায় আনার একটি প্রয়াস মাত্র। এটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং তাদের আর্থিক অর্ন্তভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মসূচি দেশব্যাপী বিস্তৃত হবে। তারা এদের জন্য ঋণও দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আজকের সিএসআর কর্মকান্ড আর্থিক খাতে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
গভর্নর ব্যাংকারদের উদ্দেশ্যে বলেন, সেবার মনোভাব নিয়ে এ ধরনের সেবামূলক কাজে সমগ্র আর্থিক খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের অনগ্রসর জনপদে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনায় তাদেরকে আরও বেশি আগ্রহী হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের একটি এলাকায় কয়েকটি দরিদ্র পরিবারকে স্বাবলম্বী হতে সামান্য কিছু অর্থের যোগান দিলো মাত্র। এ পরিবারগুলো নিশ্চয়ই এ অর্থের সদ্ব্যবহার করবে। পাশাপাশি তাদের দারিদ্র্য বিমোচন যাতে টেকসই হয়, সেদিকে স্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খেয়াল রাখতে পারে। এটি একটি ক্ষুদ্র পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ কার্যক্রম থেকে শিক্ষা নিয়ে তার ব্যাপক প্রসার ঘটাবে বলে আমার আশা।
গভর্নর আরো বলেন, স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছরে আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অনেক দুর এগিয়েছে। বর্তমানে উন্নয়নের ধারণা আর শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। উন্নয়ন বলতে এখন সর্বসাধারণের অর্ন্তভুক্তির মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়নকেই বোঝানো হয়। সেদিক থেকে বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি সামাজিক দায়বোধসম্পন্ন ও সবুজ অর্থায়ন এবং টেকসই আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তারা পুরস্কার দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবহেলিত জনপদের অতিদারিদ্র্য দূর করতে হবে। সুনির্দিষ্ট ও সুচিন্তিত কর্মসূচি নিয়ে এগুতে পারলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা অসম্ভব কিছু নয় বলে আমি মনে করি। সিএসআর কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের টেকসই উন্নয়নে আমরা বিশ্বে আরও একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। কৃষি ঋণ বর্গাচাষিসহ আমরা এখন সবুজ অর্থায়নের কৌশল গ্রহণ করেছি। পাট থেকে প্রস্তুত প্যাকেজিং উপকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে পাটের চাহিদা বাড়ছে।
সংবাদ শিরোনাম
সবাই মিলে দেশ থেকে দরিদ্র দূর করবো-গভর্নর
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ০৯:৩৩:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৫
- ৪৪৬ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ