শোয়েব মালিক ও সানিয়া মির্জা। দুজনের জন্ম ও বসবাস প্রতিবেশী দুই বৈরী দেশ পাকিস্তান ও ভারতে। দুজনই পেশাদার ক্রীড়াবিদ। একজন ক্রিকেটার ও অন্যজন টেনিস খেলোয়াড়। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের নাগরিক হয়েও তাদের এক করে দিয়েছে পবিত্র এক সম্পর্ক। দুই খেলার এই দুই তারকা খেলোয়াড় বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন ২০১০ সালে। তখন দুজনই ছিলেন ফর্মের তলানিতে। ইনজুরির কারণে সানিয়া মির্জা ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার শঙ্কায় ছিলেন। আর বিয়ের মাত্র কয়েক মাস পর পাকিস্তানের টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন শোয়েব মালিক। ওয়ানডে দলে মাঝে মধ্যে ডাক পড়লেও নিয়মিত ছিলেন না। কিন্তু বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর যেন পাল্টে গেছে সব। ধীরে ধীরে দুজনে ফর্মে ফিরতে শুরু করেন। আর তা যেন এখন মধ্য গগনে। ২০১৫ সাল সানিয়া মির্জার ক্যারিয়ারের সেরা বছর কোন সন্দেহ নেই। ইতিমধ্যে এ বছর তিনি ৯ শিরোপা জিতেছেন। শিরোপা জিতে বেশ কয়েকবার স্বামী শোয়েব মালিককে কৃতিত্ব দিয়েছেন তিনি। তার প্রেরণা ও সাহস জোগানোয় এমন নৈপুণ্য দেখানো সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি। কয়েক দিন আগে মার্টিনা হিঙ্গিসের সঙ্গে চীনা ওপেনের ডাবলে শিরোপা জিতেছেন সানিয়া। এর মাত্র চারদিন পর তার স্বামী শোয়েব মালিক দেখালেন চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্য। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ার সেরা ২৪৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন তিনি। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরি করে শোয়েবও তার জীবনসঙ্গীকে কৃতিত্ব দিলেন। জানালেন, সানিয়ার প্রেরণায় এমন ফর্মে ফেরা সম্ভব হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী এখন যেন একে অন্যের প্রেরণা ও সাফল্যের অংশীদার। শোয়েব মালিকের জন্য এমন প্রত্যাবর্তন রূপকথার মতো। দেশের হয়ে সর্বশেষ ২০১০ সালে টেস্ট খেলেছিলেন তিনি। এরপর ৫ বছর টেস্ট দলের বাইরে ছিলেন। ২ বছর পর এ বছর মে মাসে পাকিস্তানের ওয়ানডে দলে ডাক পান তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দারুণ করেন তিনি। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষের ওয়ানডে সিরিজ যেন মালিকের জীবনটাই পাল্টে দিয়েছে। দলে ফেরার পর ওয়ানডেতে ১০০ গড়ে রান করেছেন। এছাড়া টি-টোয়েন্টিতেও তার নৈপুণ্য নজরকাড়া। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে সিরিজে পাকিস্তানের ঘোষিত ১৫ জনে ছিল না তার নাম। কিন্তু দলের কোচ ওয়াকার ইউনুস ও টিম ম্যানেজার ইন্তিখাব আলমের বিশেষ সুপারিশে তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর এমন সুপারিশে অবিশ্বাস্যভাবে দলে ঢুকে কোচের আস্থার প্রতিদান দিলেন দারুণভাবে। তবে তার এ দুর্দান্ত ফেরার পেছনে স্ত্রী সানিয়া মির্জার অবদানটাকেও বড় করে দেখালেন তিনি। বলেন, ‘ডাবল সেঞ্চুরি প্রতিদিন আসে না। সানিয়া যখন টেনিসে শিরোপা জিততো তখন আমি খুবই উদ্বুদ্ধ হতাম। ক্রিকেটে তার মতো ভাল করার প্রেরণা পেতাম। সে নিজেও আমাকে অনেক উদ্বুদ্ধ করেছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই পেশাদার ক্রীড়াবিদ, এটা খুবই মজার কথা। তার কোন শিরোপা জয়ে আমি যেমন আনন্দিত হই আমার এই ডাবল সেঞ্চুরিতে সেও আনন্দিত। সে অনেক খুশি। দলে ফেরা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিল। কিন্তু দলে ফেরা ও পারফর্ম করা নিয়ে আমি তার সঙ্গে সব বিষয়ে কথা বলতাম।’ শোয়েবের ডাবল সেঞ্চুরির পর নিজের আনন্দ লুকাতে পারেননি সানিয়া। তিনি টুইট করেন, ‘তোমাকে নিয়ে আমি অনেক আনন্দিত। বিশ্বাস করো, তুমি অনেক ভাল করেছ।’ এ বছর জুলাইয়ে মার্টিনা হিঙ্গিসকে সঙ্গে নিয়ে গ্রান্ড স্লাম টুর্নামেন্ট উইম্বলডনের দ্বৈতে শিরোপা জেতেন সানিয়া। তখন শোয়েব মালিক ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি তাকে নিয়ে গর্বিত। আমি তার খেলার খবর রাখার জন্য মোবাইলে একটা সফটওয়্যার ডাউনলোড করেছি। যদিও সেসব সময় বলে যে, তার প্রিয় খেলা ক্রিকেট।’ এ বছরে দ্বৈততে সানিয়া সিডনি ইন্টারন্যাশনাল, ইন্ডিয়ান ওয়েলস, মিয়ামি মাস্টার্স, ফ্যামিলি সার্কেল কাপ, উইম্বলডন, ইউএস ওপেন, গুয়ানঝু ইন্টারন্যাশনাল ও চায়না ওপেনের শিরোপা জিতেছেন। এছাড়া এ বছর ভারতের ক্রীড়াক্ষেত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার রাজীব খেলরত্নে জিতেছেন তিনি।
সংবাদ শিরোনাম
সানিয়া-শোয়েব যেন রূপকথার জুটি
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ১২:২৭:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৫
- ৩০০ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ