হাওর বার্তা ডেস্কঃ মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাহিত্যে অনন্য নদ কপোতাক্ষ, যা আজ মৃতপ্রায়। দখল, দূষণ আর ভরাটের শিকার নদটি যেন পরিণত হয়েছে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে।
নদের মাঝ বরাবর অসংখ্য পাটা ও কোমড় দিয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে অসাধু কিছু চক্র। সাতক্ষীরার কলারোয়া ও মনিরামপুর উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত এ নদে অসংখ্য নেট, পাটা ও বাশের খুটি দিয়ে তৈরি করা কোমড়ের কারণে নদটি বিলীনপ্রায়!
বিগত ৪ বছরে শতশত কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকার কপোতক্ষ নদটি ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে খনন করা হয়েছে। নদের সীমানা নামে মাত্র নির্ধারণ করে খনন করা হয়েছে। কিন্তু মাছ ধরার নামে একটি মহল কপোতক্ষ নদে বাঁশ-খুটি ও ডাল-পালা পুতেছে। এভাবে তারা নদটিকে নিজেদের সম্পত্তিতে পরিণত করেছে।
স্থানীয়রা জানান, মাছ ধরার জন্য বাশ-খুটি, নেট ও পাটা দিয়ে দেয়াড়া-ত্রিমোহীনি ঘাট থেকে চাকলা-খাজুরা পর্যন্ত অসংখ্য পাটা ও কোমড় দিয়ে নিজ সম্পত্তির মত নদকে ব্যবহার করছে এ অসাধু চক্র। ইতিপূর্বে কয়েকবার এ চক্রকে নিষেধ করা হলেও তারা এলাকাবাসীকে হুমকি দিয়েছে। কারো কথা তোয়াক্কা না করে অবৈধ দখল ও স্থাপনা অব্যাহত রেখেছে তারা।
তালা উপজেলার মাগুরা গ্রামের কৃষক শামিম সরদার বলেন, ‘কপোতাক্ষ দখল করে মৎস্য আড়ত তৈরি করা হচ্ছে। এতে এ অঞ্চল স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নেবে।’
চাকলা-কাঠালতলা গ্রামের সেলিম রেজা বলেন, নদে এ সমস্ত পাটা ও খুটির কারণে শেওলা জমে নদের পানি আবদ্ধ আকার ধারণ করেছে। নদে পলি জমছে ও নদ ভরাট হচ্ছে। ইতিপূর্বে এই অবৈধ্য পাটা ও কোমড়ের বিষয় নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয় কিন্তু তারপরও এ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারিনি প্রশাসন।
সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সাংসদ ও কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, ‘৫০০ ফুট চওড়া কপোতাক্ষ নদটি এখন অবৈধ দখল ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তা ভরাট হয়ে মৃত নদে পরিণত হয়েছে। কপোতাক্ষ খননের জন্য ২০১১ সালে সরকার ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় নদটি এখনও প্রাণ ফিরে পায়নি। কপোতাক্ষ পাড়ে ভূমিদস্যুরা নদ দখল করে ব্যবসা শুরু করেছে।’
কপোতক্ষ নদের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।