ঢাকা ০১:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্য উচ্চতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। অধ্যক্ষ আসাদুল হক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩০:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অক্টোবর ২০১৫
  • ৩৬৭ বার

Exif_JPEG_420

গত ছয় বছর ধরে দেশ পরিচালনায় এমন কোনো খাত নেই যেখানে ঈর্ষণীয় উন্নতি হয়নি। দারিদ্র্য বিমোচন, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, কর্মসংস্থান, সড়ক যোগাযোগ, রেল, গ্রামীণ অর্থনীতি, বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিবেশÑসব খাতেই অতীতের নানা ব্যর্থতা আর সীমাবদ্ধতাকে জয় করে এগিয়ে চলছে দেশ। সব বিষয় নিয়ে বিতর্ক করা এই জাতি উন্নয়নের দৃষ্টান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেনি এই প্রথমবারের মতো। কেবল জাতীয় ক্ষেত্রে নয়, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে বাংলাদেশের। নি¤œ আয়ের দেশ থেকে নি¤œমধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার পথেই চলছে নিরন্তর যাত্রা।
শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এই দেশ আর মানুষের প্রতি অপরিসীম মায়া তার। এই টানেই বাবা-মা, ভাই-বোনের নৃশংস হত্যার পরও ভেঙে না পড়ে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন শক্ত হাতে। রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন ছাত্রজীবনেই। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যার দুঃখজনক ঘটনার পর দল পরিচালনায় আসতে হয়েছে জাতির স্বার্থেই। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে গণতন্ত্র, আইনের শাসন আর উন্নয়নের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পালন করেছেন কা-ারির ভূমিকা।

রাষ্ট্র পরিচালনার কঠিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়েও স্বাভাবিক মানবিকতার জায়গা থেকে এতটুকু সরে আসেননি শেখ হাসিনা। তাই তো নীমতলির আগুনে বাবা-মা হারানো মেয়েদের নিজের করে নেন, পেট্রল বোমায় ঝলসে যাওয়া মানুষদের স্বজনদেরকে টেনে নেন বুকে; শিশুদের দেখলেই রাষ্ট্রীয় অবস্থান ভুলে মেতে উঠেন খেলায়, গেয়ে উঠেন গান।

শেখ হাসিনার প্রথম পরিচয় তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। সেদিন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব-শূন্য করার জন্য জাতীয় চার নেতাকেও কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করে পরাজিত শক্তিরা। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা একদিকে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী নীতি নিয়ে বাংলাদেশকে শাসন করার চক্রান্ত করেছে। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক নেতৃত্বের অবদানকে ম্লান করার প্রয়াসও আমরা দেখেছি। পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করে ইতিহাস বিকৃতির নজির তারা রেখেছে। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার যেন না করা যায় এজন্য কালো আইন সংযোজন করেছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃতও করা হয়। সবটাই ছিল বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র। বিশ্বের ইতিহাসে এই ধরনের ঘৃণ্য নজির দ্বিতীয়টি নেই। ক্যান্টনমেন্টে বসে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নীল নকশা প্রণয়ন হয়েছে। প্রহসনের নির্বাচন করে ক্যান্টনমেন্ট থেকে তৈরি হওয়া দলকে নির্বাচিত করার দৃষ্টান্ত এদেশের মানুষ দেখেছে।

সর্বশেষ ১৯৮১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তখন তিনি দেশে ছিলেন না। কিন্তু নেতা-কর্মীরা তার অবর্তমানেই দলের কা-ারির হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যার ছয় বছর পর দুঃস্বপ্ন বুকে নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং জাতির জনকের রেখে যাওয়া দলকে সুসংগঠিত করার জন্যই সেদিন দেশে আসেন তিনি।

ফিরেই সাহসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। তার পরের ইতিহাস আমাদের সবারই জানা। তখন চ্যালেঞ্জ ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদের সব চক্রান্ত মোকাবেলা করে তৃণমূল আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করা। সব বৈরী পরিবেশ মোকাবেলা করে দেশকে স্বাধীনতার চেতনায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিলেন। তিনি চেয়েছিলেন দেশকে স্বাধীনতার চেতনায় পরিচালিত করতে। এই দুই লক্ষ্য সামনে রেখে তিনি দেশের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে চারণের মতো ঘুরে বেরিয়েছেন।

পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যাকা-ের চিত্র বুকে নিয়ে থেমে থাকেননি তিনি। দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। মানুষের প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা এবং তার পিতার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ অর্থাৎ স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে সোনার দেশে রূপান্তর করার কাজটি এগিয়ে নিলেন সাহসিকতার সঙ্গে। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এনে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন চালিয়ে গেলেন। একের পর এক আঘাত এলো তার ওপর। চট্টগ্রামে নিজের গাড়িতে হামলা হলো, তবুও পিছিয়ে পড়েননি।

জাতির জনককে সপরিবারে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল ধানমন্ডির সেই বাড়িতে তাকে যেতে দেয়নি পঁচাত্তরের কালো অধ্যায়ের পর ক্ষমতায় আসা জিয়াউর রহমান। যেখানে নিজের স্বজনরা ঘাতকের বুলেটের আঘাতে রক্ত ঝরিয়েছে সেখানে গিয়ে মা-বাবার আত্মার শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন এই সুযোগটা তাকে দেওয়া হয়নি। এরপর নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে জয়ী হতে দেয়নি। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান এবং তারপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। অব্যাহত ছিল সামরিক শাসন। হত্যা করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের। সেনাবাহিনীতে যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কোর্ট মার্শাল করে তাদের অনেককে হত্যা করা হয়েছে।

সেদিনের সেই নির্বাচন ছিল প্রহসনের নামান্তর। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা যেই দলের দায়িত্ব নিয়েছেন সেই দলটি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তাই একের পর এক নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন তিনি গণতন্ত্র এবং জনগণের রায়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন।

১৯৯০ সালে গণআন্দোলন হয়। তিন জোটের গণআন্দোলনের মুখে সেই সময়কার স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে। ১৯৯১ সালে নতুন করে যাত্রা শুরু করে গণতন্ত্র। ওই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত হতে দেওয়া হয়নি। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষ সৃষ্টি করেছিল প্রতিবন্ধকতা। যেহেতু মানুষের গণতান্ত্রিক রায় এবং প্রক্রিয়ার প্রতি শেখ হাসিনার বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে, তাই সেদিনের পরাজয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে সাহসী চেষ্টা অব্যাহত রাখলেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। মানুষের ভোটের অধিকার যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে, ক্ষমতাসীন দল যেন ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে সেজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের আন্দোলন করেন তিনি।

১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকার সেই আন্দোলন উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন করেছিল। মানুষ সেটি গ্রহণ করেনি। শেখ হাসিনা আন্দোলন করে দেশের মানুষকে একত্রিত করেছিলেন। ওই আন্দোলনে বিএনপি সরকারের পতন ঘটে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯৬ সালে কয়েক মাসের ব্যবধানে আবার নির্বাচন হয়। দেশের মানুষ ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কাজ ছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার করা। এজন্য বিগত বিএনপি সরকারের করে যাওয়া কালো আইন সংসদে বাতিল করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।

পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অশান্ত পরিবেশের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলেন। শান্তি চুক্তি করে অশান্ত পরিবেশের অবসান ঘটালেন। যে চুক্তি বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশ সেই সময় বিরাট সফলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।

গঙ্গার পানি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদে চুক্তি করে দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রমাণ রাখলেন। সামাজিক ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে ফিরিয়ে আনতে একের পর এক উদ্যোগ নিলেন।

১৯৯৮ সালে বন্যায় ডুবে গেল সারা দেশ। এক মাসের বেশি পানিবদ্ধ মানুষের জীবন। বিবিসির খবরে বলা হল, এক কোটি মানুষ অনাহারে দুর্ভিক্ষে মারা যাবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নেতৃত্বের দূরদর্শিতার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলা এবং ত্রাণকার্য পরিচালনা করলেন দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। সারা বিশ্বের জন্য যা ছিল পুরোপুরি বিস্ময়ের।

সেই সময় সারা বিশ্বে দেখা দিয়েছিল অর্থনৈতিক মন্দা। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে অর্র্থনৈতিক মন্দার বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে এ দেশের মানুষ রক্ষা পায়। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রেখে অভূতপূর্ব অবদানের সাক্ষ্য রেখেছিলেন তিনি এবং তার সরকার। দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ছিল। তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর শান্তিপূর্ণভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করলেন।

২০০১ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। কিন্তু দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ফলে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো। ক্ষমতায় এসে বিএনপি মন্ত্রিত্ব দিল স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকাতে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মিলেমিশে গণহত্যা করেছিল, জাতীয় পতাকার বিরোধিতা করেছিল তাদের গাড়িতেই পতাকা তুলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ওপর আঘাত হেনেছিল। তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে দেশকে জঙ্গিবাদের আস্তানায় পরিণত করার চেষ্টা করে।

নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় ভোলা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যে নির্যাতন এবং মামলা-হামলা-হত্যা হয়েছে তা দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। ওই সময় মানুষ শিহরিত হয়ে গিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস এবং সহিংসতা দেখেছে। ধর্ষিত হয়েছিল পূর্ণিমাসহ বহু কিশোরী এবং নারী। আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মী এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বহু ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছিল।

হত্যা করা হয় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে। নিহত হলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কূটনীতিক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। আঘাত হানা হলো সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি শামসুর রাহমানের ওপর। ২০০৪ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার ওপর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে প্রকাশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়। বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতাসীনরা হাওয়া ভবনে বসে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে।

রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এই হত্যার জঘন্য পরিকল্পনা করা হয়। সেদিনের ওই গ্রেনেড হামলা শুধুমাত্র শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য নয়, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব-শূন্য করার পরিকল্পনা ছিল পেছনে। আল্লাহর অশেষ রহমতে জননেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন প্রাণে রক্ষা পেলেন। কিন্তু আইভি রহমানসহ বহু নেতা-কর্মী ওই ঘটনায় নিহত হন।

এর আগে সারা দেশে বাংলাভাইয়ের নামে জঙ্গিবাদ উত্থান ঘটিয়ে একসঙ্গে দেশের পাঁচশ জায়গায় বোমা ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করা হলো। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়টিতে বিএনপির নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী এবং জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। এই সবকিছু পরিকল্পনা করা হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ মদদে। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের বহু আলোচিত দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল হাওয়া ভবন।

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া জনকল্যাণকর সব প্রকল্প কেবল ঈর্ষা আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বন্ধ করে দেয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় কমিউনিটি ক্লিনিক। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সরকার রেখে গিয়েছিল ২০০১-২০০৬ সালের মধ্যে হাওয়া ভবনের দুর্নীতির কারণে এক মেগাওয়াটও বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি হয়নি। বরং পূর্ববর্তী সরকারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমে গিয়েছিল।

এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার বানিয়ে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করার জন্য প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতিদের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার সূক্ষ্ম অপচেষ্টা করা হয়।

সেই সময় সারা দেশের মানুষ তার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে। বিএনপি-জামায়াতের এই ধরনের অপচেষ্টা, অপকর্ম এবং দুশাসনের কারণেই এবং বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক হস্তক্ষেপে জাতির ওপর চেপে বসে এক-এগারোর অসাংবিধানিক শাসন। গ্রেপ্তার হন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হলো।

আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীকে জেলে নেওয়া হলো। মিথ্যা মামলা দেওয়া হলো। এমনকি আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার জন্য ক্যান্টনমেন্টে বসে পরিকল্পনা নেওয়া হলো। দেশের মানুষের আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক চাপে এক-এগারোর কুশীলবরা এক পর্যায়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্ত করতে বাধ্য হলেন এবং তার নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে দেশে একটি অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এই নির্বাচনে দেশের মানুষ বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ভোটাররা নিরঙ্কুশভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে নির্বাচনী রায় দেয়। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেন। সরকার গঠন করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কতগুলো জাতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে এমন কোনো খাত নেই যেখানে সফল হয়নি সরকার।

এক. জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারে ফাঁসির রায় কার্যকর করে এই খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জাতিকে পিতৃহত্যার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করেন।

দুই. মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা গণহত্যা, গণধর্ষণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের আন্তর্জাতিক আইনে বিচার কাজ শুরু করা হয়। ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে দুজন জামায়াত নেতাকে আদালতের রায়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে এবং আরো কয়েকজন বিএনপি ও জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

তিন. নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনা করে একটি উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

চার. আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং স্বাধীনতার ৭০ বছরে ২০৪১ সালে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার রূপকল্প তিনি ঘোষণা করেন।

পাঁচ. বিএনপি-জামায়াত সৃষ্ট একটি সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভাবমূর্তির কালিমা মোচন করে জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন।

ছয়. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে সমুদ্রসীমার দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান করেন এবং ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে ৬৮ বছরের ছিটমহল সমস্যা সমাধানে ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেন।

সাত. বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগ এবং শিল্প উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন শেখ হাসিনা।

আট. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় আজ আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ বিলিয়নেরও বেশি। প্রবাসীদের পাঠানো আয় ১৫ বিলিয়ন ডলার, জিডিপি ৬.৫ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ১৪০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে।

৯. উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার মতো সক্ষমতাও অর্জন করেছে বাংলাদেশ। পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের টাকা না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে কাজ এগিয়ে নেওয়ার সাহসী ঘোষণাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে সংযোগ সড়ক, নদী শাসনের কাজ এগিয়ে গেছে অনেকটাই। পরীক্ষামূলক পাইলিং শেষে মূল পাইলিং শুরুর অপেক্ষায় গোটা জাতি।

১০. কৃষিতে বিপ্লব করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বে গড় উৎপাদনশীলতা প্রায় তিন টন, আর বাংলাদেশে তা ৪.১৫ টন। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায়। আম উৎপাদনে স্থান নবম। হেক্টরপ্রতি ভুট্টা উৎপাদনে বৈশ্বিক গড় ৫.১২ টন, বাংলাদেশে তা ৬.৯৮ টন।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। স্বাধীনতার পর দেশে প্রতি হেক্টর জমিতে দুই টন চাল উৎপাদিত হতো, এখন তা চার টনেরও বেশি। ধান ধরে হিসাব করলে তা ছয় টন।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত প্যানেলের (আইপিসিসি) চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চলতি শতকের মধ্যে বাংলাদেশের ধান ও গমের উৎপাদন যথাক্রমে ২০ ও ৩০ শতাংশ কমবে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের ধান ও গমের উৎপাদন গড়ে ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জরিপে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মার্কিন মন্ত্রী কিসিঞ্জারের ভাষায় তলাবিহীন ঝুড়ি এখন অর্থনৈতিকভাবে একটি সম্ভাবনার দেশ। আন্তর্জাতিকভাবে আজ বাংলাদেশ সবার কাছে একটি ‘রোল মডেল’। এই সব কৃতিত্বই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত দূরদর্শী নেতৃত্বের। এরই স্বীকৃতি মিলেছে সম্প্রতি জাতিসংঘ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ ও ‘তথ্য-প্রযুক্তিতে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন’ পুরস্কার প্রদানের মধ্য দিয়ে।

এটি ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বীকৃতি। আর জাতি হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের গর্ব। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, আগুন রাজনীতি এবং নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলাদেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন- সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে আমাদের জাতীয় ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন, তেমনি জননেত্রী শেখ হাসিনাও একটি অবস্থান করে নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে ঈর্ষণীয় স্থানে পৌঁছে দিচ্ছেন। এর ফলে তিনিও ইতিহাসে তার যোগ্য স্থান সুনিশ্চিত করেছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অন্য উচ্চতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। অধ্যক্ষ আসাদুল হক

আপডেট টাইম : ১২:৩০:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অক্টোবর ২০১৫

গত ছয় বছর ধরে দেশ পরিচালনায় এমন কোনো খাত নেই যেখানে ঈর্ষণীয় উন্নতি হয়নি। দারিদ্র্য বিমোচন, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, কর্মসংস্থান, সড়ক যোগাযোগ, রেল, গ্রামীণ অর্থনীতি, বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিবেশÑসব খাতেই অতীতের নানা ব্যর্থতা আর সীমাবদ্ধতাকে জয় করে এগিয়ে চলছে দেশ। সব বিষয় নিয়ে বিতর্ক করা এই জাতি উন্নয়নের দৃষ্টান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেনি এই প্রথমবারের মতো। কেবল জাতীয় ক্ষেত্রে নয়, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে বাংলাদেশের। নি¤œ আয়ের দেশ থেকে নি¤œমধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার পথেই চলছে নিরন্তর যাত্রা।
শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এই দেশ আর মানুষের প্রতি অপরিসীম মায়া তার। এই টানেই বাবা-মা, ভাই-বোনের নৃশংস হত্যার পরও ভেঙে না পড়ে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন শক্ত হাতে। রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন ছাত্রজীবনেই। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যার দুঃখজনক ঘটনার পর দল পরিচালনায় আসতে হয়েছে জাতির স্বার্থেই। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে গণতন্ত্র, আইনের শাসন আর উন্নয়নের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পালন করেছেন কা-ারির ভূমিকা।

রাষ্ট্র পরিচালনার কঠিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়েও স্বাভাবিক মানবিকতার জায়গা থেকে এতটুকু সরে আসেননি শেখ হাসিনা। তাই তো নীমতলির আগুনে বাবা-মা হারানো মেয়েদের নিজের করে নেন, পেট্রল বোমায় ঝলসে যাওয়া মানুষদের স্বজনদেরকে টেনে নেন বুকে; শিশুদের দেখলেই রাষ্ট্রীয় অবস্থান ভুলে মেতে উঠেন খেলায়, গেয়ে উঠেন গান।

শেখ হাসিনার প্রথম পরিচয় তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। সেদিন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব-শূন্য করার জন্য জাতীয় চার নেতাকেও কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করে পরাজিত শক্তিরা। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা একদিকে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী নীতি নিয়ে বাংলাদেশকে শাসন করার চক্রান্ত করেছে। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক নেতৃত্বের অবদানকে ম্লান করার প্রয়াসও আমরা দেখেছি। পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করে ইতিহাস বিকৃতির নজির তারা রেখেছে। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার যেন না করা যায় এজন্য কালো আইন সংযোজন করেছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃতও করা হয়। সবটাই ছিল বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র। বিশ্বের ইতিহাসে এই ধরনের ঘৃণ্য নজির দ্বিতীয়টি নেই। ক্যান্টনমেন্টে বসে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নীল নকশা প্রণয়ন হয়েছে। প্রহসনের নির্বাচন করে ক্যান্টনমেন্ট থেকে তৈরি হওয়া দলকে নির্বাচিত করার দৃষ্টান্ত এদেশের মানুষ দেখেছে।

সর্বশেষ ১৯৮১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তখন তিনি দেশে ছিলেন না। কিন্তু নেতা-কর্মীরা তার অবর্তমানেই দলের কা-ারির হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যার ছয় বছর পর দুঃস্বপ্ন বুকে নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং জাতির জনকের রেখে যাওয়া দলকে সুসংগঠিত করার জন্যই সেদিন দেশে আসেন তিনি।

ফিরেই সাহসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। তার পরের ইতিহাস আমাদের সবারই জানা। তখন চ্যালেঞ্জ ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদের সব চক্রান্ত মোকাবেলা করে তৃণমূল আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করা। সব বৈরী পরিবেশ মোকাবেলা করে দেশকে স্বাধীনতার চেতনায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিলেন। তিনি চেয়েছিলেন দেশকে স্বাধীনতার চেতনায় পরিচালিত করতে। এই দুই লক্ষ্য সামনে রেখে তিনি দেশের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে চারণের মতো ঘুরে বেরিয়েছেন।

পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যাকা-ের চিত্র বুকে নিয়ে থেমে থাকেননি তিনি। দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। মানুষের প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা এবং তার পিতার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ অর্থাৎ স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে সোনার দেশে রূপান্তর করার কাজটি এগিয়ে নিলেন সাহসিকতার সঙ্গে। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এনে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন চালিয়ে গেলেন। একের পর এক আঘাত এলো তার ওপর। চট্টগ্রামে নিজের গাড়িতে হামলা হলো, তবুও পিছিয়ে পড়েননি।

জাতির জনককে সপরিবারে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল ধানমন্ডির সেই বাড়িতে তাকে যেতে দেয়নি পঁচাত্তরের কালো অধ্যায়ের পর ক্ষমতায় আসা জিয়াউর রহমান। যেখানে নিজের স্বজনরা ঘাতকের বুলেটের আঘাতে রক্ত ঝরিয়েছে সেখানে গিয়ে মা-বাবার আত্মার শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন এই সুযোগটা তাকে দেওয়া হয়নি। এরপর নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে জয়ী হতে দেয়নি। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান এবং তারপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। অব্যাহত ছিল সামরিক শাসন। হত্যা করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের। সেনাবাহিনীতে যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কোর্ট মার্শাল করে তাদের অনেককে হত্যা করা হয়েছে।

সেদিনের সেই নির্বাচন ছিল প্রহসনের নামান্তর। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা যেই দলের দায়িত্ব নিয়েছেন সেই দলটি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তাই একের পর এক নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন তিনি গণতন্ত্র এবং জনগণের রায়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন।

১৯৯০ সালে গণআন্দোলন হয়। তিন জোটের গণআন্দোলনের মুখে সেই সময়কার স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে। ১৯৯১ সালে নতুন করে যাত্রা শুরু করে গণতন্ত্র। ওই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত হতে দেওয়া হয়নি। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষ সৃষ্টি করেছিল প্রতিবন্ধকতা। যেহেতু মানুষের গণতান্ত্রিক রায় এবং প্রক্রিয়ার প্রতি শেখ হাসিনার বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে, তাই সেদিনের পরাজয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে সাহসী চেষ্টা অব্যাহত রাখলেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। মানুষের ভোটের অধিকার যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে, ক্ষমতাসীন দল যেন ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে সেজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের আন্দোলন করেন তিনি।

১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকার সেই আন্দোলন উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন করেছিল। মানুষ সেটি গ্রহণ করেনি। শেখ হাসিনা আন্দোলন করে দেশের মানুষকে একত্রিত করেছিলেন। ওই আন্দোলনে বিএনপি সরকারের পতন ঘটে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯৬ সালে কয়েক মাসের ব্যবধানে আবার নির্বাচন হয়। দেশের মানুষ ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কাজ ছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার করা। এজন্য বিগত বিএনপি সরকারের করে যাওয়া কালো আইন সংসদে বাতিল করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।

পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অশান্ত পরিবেশের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলেন। শান্তি চুক্তি করে অশান্ত পরিবেশের অবসান ঘটালেন। যে চুক্তি বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশ সেই সময় বিরাট সফলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।

গঙ্গার পানি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদে চুক্তি করে দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রমাণ রাখলেন। সামাজিক ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে ফিরিয়ে আনতে একের পর এক উদ্যোগ নিলেন।

১৯৯৮ সালে বন্যায় ডুবে গেল সারা দেশ। এক মাসের বেশি পানিবদ্ধ মানুষের জীবন। বিবিসির খবরে বলা হল, এক কোটি মানুষ অনাহারে দুর্ভিক্ষে মারা যাবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নেতৃত্বের দূরদর্শিতার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলা এবং ত্রাণকার্য পরিচালনা করলেন দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। সারা বিশ্বের জন্য যা ছিল পুরোপুরি বিস্ময়ের।

সেই সময় সারা বিশ্বে দেখা দিয়েছিল অর্থনৈতিক মন্দা। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে অর্র্থনৈতিক মন্দার বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে এ দেশের মানুষ রক্ষা পায়। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রেখে অভূতপূর্ব অবদানের সাক্ষ্য রেখেছিলেন তিনি এবং তার সরকার। দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ছিল। তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর শান্তিপূর্ণভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করলেন।

২০০১ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। কিন্তু দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ফলে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো। ক্ষমতায় এসে বিএনপি মন্ত্রিত্ব দিল স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকাতে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মিলেমিশে গণহত্যা করেছিল, জাতীয় পতাকার বিরোধিতা করেছিল তাদের গাড়িতেই পতাকা তুলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ওপর আঘাত হেনেছিল। তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে দেশকে জঙ্গিবাদের আস্তানায় পরিণত করার চেষ্টা করে।

নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় ভোলা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যে নির্যাতন এবং মামলা-হামলা-হত্যা হয়েছে তা দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। ওই সময় মানুষ শিহরিত হয়ে গিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস এবং সহিংসতা দেখেছে। ধর্ষিত হয়েছিল পূর্ণিমাসহ বহু কিশোরী এবং নারী। আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মী এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বহু ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছিল।

হত্যা করা হয় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে। নিহত হলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কূটনীতিক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। আঘাত হানা হলো সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি শামসুর রাহমানের ওপর। ২০০৪ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার ওপর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে প্রকাশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়। বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতাসীনরা হাওয়া ভবনে বসে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে।

রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এই হত্যার জঘন্য পরিকল্পনা করা হয়। সেদিনের ওই গ্রেনেড হামলা শুধুমাত্র শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য নয়, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব-শূন্য করার পরিকল্পনা ছিল পেছনে। আল্লাহর অশেষ রহমতে জননেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন প্রাণে রক্ষা পেলেন। কিন্তু আইভি রহমানসহ বহু নেতা-কর্মী ওই ঘটনায় নিহত হন।

এর আগে সারা দেশে বাংলাভাইয়ের নামে জঙ্গিবাদ উত্থান ঘটিয়ে একসঙ্গে দেশের পাঁচশ জায়গায় বোমা ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করা হলো। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়টিতে বিএনপির নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী এবং জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। এই সবকিছু পরিকল্পনা করা হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ মদদে। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের বহু আলোচিত দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল হাওয়া ভবন।

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া জনকল্যাণকর সব প্রকল্প কেবল ঈর্ষা আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বন্ধ করে দেয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় কমিউনিটি ক্লিনিক। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সরকার রেখে গিয়েছিল ২০০১-২০০৬ সালের মধ্যে হাওয়া ভবনের দুর্নীতির কারণে এক মেগাওয়াটও বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি হয়নি। বরং পূর্ববর্তী সরকারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমে গিয়েছিল।

এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার বানিয়ে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করার জন্য প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতিদের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার সূক্ষ্ম অপচেষ্টা করা হয়।

সেই সময় সারা দেশের মানুষ তার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে। বিএনপি-জামায়াতের এই ধরনের অপচেষ্টা, অপকর্ম এবং দুশাসনের কারণেই এবং বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক হস্তক্ষেপে জাতির ওপর চেপে বসে এক-এগারোর অসাংবিধানিক শাসন। গ্রেপ্তার হন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হলো।

আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীকে জেলে নেওয়া হলো। মিথ্যা মামলা দেওয়া হলো। এমনকি আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার জন্য ক্যান্টনমেন্টে বসে পরিকল্পনা নেওয়া হলো। দেশের মানুষের আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক চাপে এক-এগারোর কুশীলবরা এক পর্যায়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্ত করতে বাধ্য হলেন এবং তার নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে দেশে একটি অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এই নির্বাচনে দেশের মানুষ বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ভোটাররা নিরঙ্কুশভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে নির্বাচনী রায় দেয়। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেন। সরকার গঠন করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কতগুলো জাতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে এমন কোনো খাত নেই যেখানে সফল হয়নি সরকার।

এক. জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারে ফাঁসির রায় কার্যকর করে এই খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জাতিকে পিতৃহত্যার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করেন।

দুই. মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা গণহত্যা, গণধর্ষণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের আন্তর্জাতিক আইনে বিচার কাজ শুরু করা হয়। ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে দুজন জামায়াত নেতাকে আদালতের রায়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে এবং আরো কয়েকজন বিএনপি ও জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

তিন. নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনা করে একটি উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

চার. আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং স্বাধীনতার ৭০ বছরে ২০৪১ সালে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার রূপকল্প তিনি ঘোষণা করেন।

পাঁচ. বিএনপি-জামায়াত সৃষ্ট একটি সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভাবমূর্তির কালিমা মোচন করে জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন।

ছয়. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে সমুদ্রসীমার দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান করেন এবং ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে ৬৮ বছরের ছিটমহল সমস্যা সমাধানে ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেন।

সাত. বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগ এবং শিল্প উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন শেখ হাসিনা।

আট. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় আজ আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ বিলিয়নেরও বেশি। প্রবাসীদের পাঠানো আয় ১৫ বিলিয়ন ডলার, জিডিপি ৬.৫ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ১৪০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে।

৯. উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার মতো সক্ষমতাও অর্জন করেছে বাংলাদেশ। পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের টাকা না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে কাজ এগিয়ে নেওয়ার সাহসী ঘোষণাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে সংযোগ সড়ক, নদী শাসনের কাজ এগিয়ে গেছে অনেকটাই। পরীক্ষামূলক পাইলিং শেষে মূল পাইলিং শুরুর অপেক্ষায় গোটা জাতি।

১০. কৃষিতে বিপ্লব করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বে গড় উৎপাদনশীলতা প্রায় তিন টন, আর বাংলাদেশে তা ৪.১৫ টন। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায়। আম উৎপাদনে স্থান নবম। হেক্টরপ্রতি ভুট্টা উৎপাদনে বৈশ্বিক গড় ৫.১২ টন, বাংলাদেশে তা ৬.৯৮ টন।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। স্বাধীনতার পর দেশে প্রতি হেক্টর জমিতে দুই টন চাল উৎপাদিত হতো, এখন তা চার টনেরও বেশি। ধান ধরে হিসাব করলে তা ছয় টন।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত প্যানেলের (আইপিসিসি) চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চলতি শতকের মধ্যে বাংলাদেশের ধান ও গমের উৎপাদন যথাক্রমে ২০ ও ৩০ শতাংশ কমবে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের ধান ও গমের উৎপাদন গড়ে ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জরিপে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মার্কিন মন্ত্রী কিসিঞ্জারের ভাষায় তলাবিহীন ঝুড়ি এখন অর্থনৈতিকভাবে একটি সম্ভাবনার দেশ। আন্তর্জাতিকভাবে আজ বাংলাদেশ সবার কাছে একটি ‘রোল মডেল’। এই সব কৃতিত্বই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত দূরদর্শী নেতৃত্বের। এরই স্বীকৃতি মিলেছে সম্প্রতি জাতিসংঘ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ ও ‘তথ্য-প্রযুক্তিতে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন’ পুরস্কার প্রদানের মধ্য দিয়ে।

এটি ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বীকৃতি। আর জাতি হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের গর্ব। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, আগুন রাজনীতি এবং নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলাদেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন- সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে আমাদের জাতীয় ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন, তেমনি জননেত্রী শেখ হাসিনাও একটি অবস্থান করে নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে ঈর্ষণীয় স্থানে পৌঁছে দিচ্ছেন। এর ফলে তিনিও ইতিহাসে তার যোগ্য স্থান সুনিশ্চিত করেছেন।