বাবা-মার আদরবঞ্চিত সেলিম (১০) নামে এক শিশু নিয়তির নির্মম পরিহাসের শিকার হয়ে কুকুরের দুধ পান করে বেঁচে আছে। সেলিমের বয়স যখন মাত্র ছয় মাস তখন তার বাবা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের পঞ্চানন্দপুর গ্রামের লাল চাঁন তার [সেলিম] মাকে তালাক দেন। সেই সময় সেলিমের মা ছেলেকে নিয়ে বজরাটেক সবজা স্কুল পাড়া গ্রামে বাবার বাড়ি চলে আসেন। এর কিছুদিন পর সেলিমকে রেখে তার মা বিয়ে করে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে চট্রগ্রাম চলে যান। এরপর নানা অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে উঠা শুরু হয় সেলিমের। গরীব নানা ভ্যান চালিয়ে কোনো রকম অভাবী সংসার চালায়। ফলে প্রয়োজনীয় খাবার টুকুও সেলিমের ভাগ্যে জুটে না। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সেলিম যখন চলতে শুরু করে তখন থেকেই এ বাড়ি ও বাড়ি গিয়ে নিজের খাবারের চেষ্টা চালাতে থাকে সে নিজেই। একপর্যায়ে সে ক্ষুধা মিটাতে হাট বাজারে থাকা কুকুরের স্তনে মুখ দিয়ে দুধ খাওয়া শুরু করে। আর কুকুরও তার অন্য সন্তানের মত করে দুধ খাওয়াতে থাকে সেলিমকে। এটা দেখে কেউ খুব মজা পায়, কেউ বা অদ্ভূত তাকিয়ে রহস্য খুঁজে। কিন্তু দু’মুঠো খাবার দিতে কেউ এগিয়ে আসেনি।
হঠাৎ উপজেলার মেডিকেল মোড়ে এ প্রতিবেদক এক দোকানে চা খেতে বসলে কোথা থেকে সেলিম দৌড়ে এসে দু’টাকার আবদার করে বসে। এমন সময় পাশের অনেকেই বলে উঠে, সে কুকুরের দুধ খেয়ে বড় হয়েছে। ঘটনাটি প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিন্তু পরক্ষণে দরিদ্র শিশু সেলিমকে জিজ্ঞেস করতেই অকপটে এর সত্যতা স্বীকার করে। দরিদ্র নানা নিজ সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেলেও তেমন খোঁজ রাখার সাধ্য হয়ে উঠেনি তার। আর মায়ের ভালোবাসা, বাবার আদর বঞ্চিত সেলিমকে নানার সংসারের অভাব অনটন ঠেলে দিয়েছে কঠিন পরীক্ষায়। এখন সেলিমের অবলম্বন এলাকার ‘মা’ কুকুরগুলো। মানুষের কাছে হাত পেতে পয়সা চাইলে কুকুরের দুধ খাই বলে অনেকেই তিরস্কার করে পাশ থেকে তাড়িয়ে দেয়। দরিদ্র সেলিমের পাশে অবলম্বন হয়ে যদি কুকুর দাঁড়াতে পারে তবে কি কোনো হূদয়বান ব্যক্তি নেই যে এই মুহূর্তে তিনি শিশু সেলিমের পাশে দাঁড়াবেন?
এদিকে, কুকুরের দুধ খাওয়া সেলিমের কোনো শারীরিক বা মানষিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে কি না এ বিষয়ে ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পাগল কুকুর জলাতংক জীবাণু বহন করে। সে সব কুকুরের দুধ খেলে সমস্যা হওয়ার কথা কিন্তু যেহেতু শিশুটি দীর্ঘদিন কুকুরের দুধ খেয়েও কোনো ক্ষতি হয়নি তার মানে ওই সব কুকুর জলাতংক জীবাণু বহনকারী ছিল না। তাই এখন আর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা নয়।