জামায়াতিরা বলে বিএনপি খান খান হয়ে যাবে !কাজী সিরাজ

বিএনপির ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে শাসক লীগ এবং জামায়াতিরা নানা কথা বলছে। লীগপন্থিদের কথাবার্তায় কিছুটা উপহাস এবং টিটকারির ভাব থাকলেও জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্য সুদূরপ্রসারী ও গভীর। বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ; শক্তিশালী প্রতিপক্ষও বটে। দুই দলের সম্পর্ক এখন একেবারেই সাপে-নেউলে। দুই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার সম্পর্ক তার চেয়েও খারাপ। দুজনের পারস্পরিক অসহিষ্ণু সম্পর্কই সংক্রমিত হয়েছে দুই দলের একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে। ফলে দুই দলের লড়াইকে কোনো কোনো বিদেশি সংবাদ মাধ্যম চিত্রিত করছে ‘দুই বেগমের লড়াই’ হিসেবে। সরকারি ক্ষমতা এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীসমূহ ব্যবহার বা অপব্যবহারের সুযোগ না থাকলে সমর্থক শক্তির প্রকৃত বিবেচনায় দুই দলের অবস্থান এখনো প্রায় সমান সমানই বলা চলে। তবে রাজনৈতিক ও আদর্শিক কমিটমেন্টের দৃঢ়তা এবং নেতৃত্ব গুণ বিবেচনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিঃসন্দেহে এগিয়ে।

ব্যর্থ নেতৃত্ব, বিশৃঙ্খলা এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে বিএনপি তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। সবার এটি জানা যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনটি বিএনপি ও তার মিত্ররা বর্জন করেছিল। সরকার পক্ষ ছাড়া দেশি-বিদেশি নানা গুরুত্বপূর্ণ মহল সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছিল, তা এখনো জারিই আছে। সেই দশম সংসদ নির্বাচন প্রকৃত অংশগ্রহণমূলক ছিল না। ৩০০ আসনের সংসদে ভোট গ্রহণের আগেই ১৫৩ জন জিতে বসে থাকেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি সেই নির্বাচনে। সমঝোতার ভিত্তিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এরশাদের জাতীয় পার্টি আসন ভাগাভাগি করে নিয়েছে, যদিও ভোট গ্রহণের আগে এরশাদকে নিয়ে নানা নাটক হয়েছে। পরে বোঝা গেছে, রওশন এরশাদ সরকারের সঙ্গে যে অ্যারেঞ্জমেন্টে গিয়েছিলেন, তাতে এরশাদেরও সম্মতি ছিল। অর্থাৎ নির্বাচনটি পাতানো ছিল বলে বিএনপি ও নির্বাচন বর্জনকারী বিরোধী দলগুলো যে অভিযোগ করে চলেছে, তা সর্বাংশেই সত্য।

আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতেই ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। সরকার সে সমাবেশ করতে দেয়নি। বালুর ট্রাক দিয়ে পথ আটকে রেখে খালেদা জিয়াকে তার গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। খালেদা জিয়া তার নয়াপল্টনের পার্টি অফিসের দিকে রওনা দিতে গেলে তার ওপর বিষাক্ত পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও কী আচরণ করেছে তা বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর পর্দায় সরাসরি দেখেছে দেশ-বিদেশের মানুষ। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকার খুবই অন্যায় আচরণ করেছে। গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারের নূ্যনতম কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি। ব্যাহত এ পরিস্থিতিতে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষিত হলেও কর্মসূচিটি খালেদা জিয়ার পূর্বনির্ধারিত ছিল বলেই বলা যায়।

দীর্ঘ তিন মাস গণদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সেই আন্দোলন থেকে বিএনপির ঝুড়িতে কী জমা হয়েছে? আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রশ্নে ক্ষমতাসীন সরকারকে কতটা নমনীয় করতে পেরেছে বিএনপি জোট- এই প্রশ্ন এখন চতুর্দিকে। তাদের দলের ভিতর এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক আলোচনা-পর্যালোচনা, সমালোচনা-আত্দসমালোচনা না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কথাবার্তা হচ্ছে না, তা নয়। তবে দলটির চরিত্র এতটাই অগণতান্ত্রিক যে, গঠনমূলক কোনো সমালোচনা করলেও দল থেকে পত্রপাঠ বিদায়। দায়িত্বশীল কেউ কেউ কথা বলেন; কিন্তু নাম প্রকাশ করতে চান না। কেউ এমনও বলেন, ‘কোনো ধরনের মন্তব্য করে বিপদে পড়তে চাই না।’ রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল করতে গিয়ে যেন তারা খালেদা জিয়া আর তারেক রহমানের মালিকানাধীন কোনো করপোরেট হাউসে চাকরি করছেন। পদে পদে চাকরি হারানোর ভয়। কিন্তু যারা বিএনপি সরাসরি করেন না; দলটি ভালোবাসেন, তাদের তো চাকরি হারানোর ভয় নেই। আবার যেসব রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বা বিশ্লেষক বিএনপির মতো একটি জাতীয়তাবাদী দলের শক্তিমত্তার সঙ্গে টিকে থাকা দেশের স্বার্থে ও গণতন্ত্রের স্বার্থে জরুরি মনে করেন, তারা তিন মাসের ঘটনার নির্মোহ বিশ্লেষণ শুরু করে দিয়েছেন এরই মধ্যে। তারা মনে করেন, ঘোষিত কর্মসূচির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে সরকারকে কিছুটা ভয় পাইয়ে দিতে পেরেছিল ২০ দল। এক মাস সারা দেশ থেকে রাজধানী ঢাকা বিচ্ছিন্নই ছিল বলা চলে। কিন্তু তাতে সরকার যতটা না ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জনগণ। তারপরও আন্দোলনটি যদি নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ হতো, মানুষ দেখত আরও কিছু দিন। কিন্তু পেট্রলবোমা হামলা, অগ্নিসংযোগ, রাস্তার ধারে শত-সহস্র বৃক্ষ নিধন করে ব্যারিকেড দেওয়ার চেষ্টা এবং প্রায় পৌনে ২০০ মানুষ নিহতের ঘটনা বিএনপির ভাবমূর্তির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। ফলে ব্যর্থ হয়েছে আন্দোলন। জনগণের জন্য আন্দোলনে জনসমর্থন পাওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই যে কোনো আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নকালে অনেক বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। আন্দোলনের কর্মসূচির বিষয়টি ‘পূর্বনির্ধারিত’ ছিল বটে; কিন্তু তা সুপরিকল্পিত ও সুবিবেচিত ছিল না। একটি রাজনৈতিক দলের সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নের সময় লক্ষ্য রাখতে হয়- ১. কর্মসূচির গুরুত্ব এবং তাতে জনস্বার্থ ২. কর্মসূচির ওপর দলীয় নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্ব প্রদানে দলের দক্ষতা ও সক্ষমতা ৩. নেতৃত্বের সততা, সাহস ও দৃঢ়তা ৪. বিশ্বস্ত ও নিবেদিতকর্মী-সংগঠকের প্রতুলতা ৫. সব পর্যায়ের নেতাকর্মী-সংগঠকরা কতদিন কর্মসূচিটি চালিয়ে নিতে সক্ষম, কষ্ট সহিষ্ণুতাই বা কতটুকু ৬. দালাল, লোভী ও আপসকামীদের ব্যাপারে সতর্কতা ও ৭. আন্দোলনে জনগণের সংশ্লিষ্টতা এবং তারা কতটা কষ্ট, ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুতও কতটা সম্ভব।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, একটি সফল আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নের উল্লিখিত শর্তগুলোর প্রথমটি ছাড়া বাকি একটিও বিবেচনা করেননি বা এসব নিয়ে ভাবেননি বিএনপির ‘মালিকরা’।

বিএনপির নেতা কারা? সমালোচকরা বলেন, বিএনপির নেতা বলেন আর মালিক বলেন, দুজনই আছেন- খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। বিভিন্ন পদের অধিকারী যারা আছেন, তারা খালেদা-তারেকের স্টাফ অফিসারের মতো। সন্তুষ্টি অনুযায়ী ‘ডিউটি’ করতে না পারলে পত্রপাঠ বিদায়। কারারুদ্ধ না হলে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরেরই নাকি ‘চাকরি’ যায় যায় অবস্থায় ছিল। স্থায়ী কমিটি নামে একটি ‘নীতিনির্ধারণী’ কমিটি আছে। কিন্তু নীতিনির্ধারণে এ কমিটির সদস্যদের কি কোনো মূল্য আছে? বছরে কটা সভা হয়েছে এই কমিটির? তিন মাসের যে ‘অবিবেচক’ কর্মসূচি দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে কি তা প্রণয়ন করা হয়েছিল? সভা ডাকলে ১৯ সদস্যের (দুজন সাইফুর রহমান ও খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা গেছেন) ১৭ জনের মধ্যে কজন উপস্থিত হতে শারীরিকভাবে সক্ষম? কজন দায়িত্ব পালনে দক্ষ, সক্ষম ও সাহসী? সহ-সভাপতিমণ্ডলী, উপদেষ্টামণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী- শত শত ‘কাগুজে বাঘ’, নেতা কজন- যাদের রাজনৈতিক অতীত আছে, সংগঠন গড়ার ও আন্দোলনের অভিজ্ঞতা আছে? জনগণ নেতা হিসেবে রিকগনাইজ করে কজনকে? অথচ বিএনপিতে নেতা হওয়ার নবীন-প্রবীণ ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদের অভাব নেই বলেই শোনা যায়। দখলদারদের ধাক্কায় অন্যদের টেকা তো দূরের কথা, ঢোকাই নাকি দায়। এসব কারণে আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে ২০-দলীয় জোটের ‘দ্বিতীয় পক্ষ’ জামায়াতে ইসলামী। আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচন তাদের এজেন্ডা নয়। তাদের এজেন্ডা তাদের দল ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত নেতাদের রক্ষা করা। দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে তাদের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। আন্দোলনকে তারা নিয়ে গেছে তাদের পথে।

তিন সিটি নির্বাচনেও বিএনপি তার সাংগঠনিক শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে পারেনি। নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে প্রতিবাদী কোনো কর্মসূচি নিতেও সাহস করেনি তারা।

বিএনপি কি তাহলে শেষ হয়ে গেল? বিএনপি কি অবশেষে মুসলিম লীগের ভাগ্যবরণ করতে যাচ্ছে? সরকার পক্ষ তো বেশ জোর দিয়ে তেমন কথাই বলছে। তাদের কথা ফলবে কিনা নির্ভর করবে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান দল নিয়ে কী ভাবছেন, কী করছেন তার ওপর। তবে একটা কথা বলা যায়, মুসলিম লীগের জন্ম যে কারণে হয়েছিল, পাকিস্তান সৃষ্টির পর তার প্রয়োজন অর্ধেকটাই ফুরিয়ে যায়। তাদের মূল এজেন্ডাই ছিল ভূখণ্ডের মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা। দেশ গড়ার, অর্থনৈতিক উন্নয়নের এবং স্বাধীন পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের সমন্বিত ও সমান্তরাল উন্নয়ন এবং জনকল্যাণের ব্যাপক-বিস্তৃত কোনো কর্মসূচি ও পূর্ব পরিকল্পনা তাদের ছিল না; যেমনটা ছিল ভারত গড়ার ব্যাপারে কংগ্রেসের। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সেই দলের প্রয়োজন একেবারেই ফুরিয়ে যায়। বিএনপির ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর দাঁড়ানো আছে দলটি, অবশ্য দলের মালিক-চালকরা সে ব্যাপারে কতটা সচেতন তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়া মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি নায়ক। দলের ঘোষণাপত্রের সূচনাটাই তিনি করেছেন মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি অঙ্গীকার দিয়ে। সেই আবেদন ফুরিয়ে যায়নি, যাবেও না। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের এক কালোত্তীর্ণ দর্শন তিনি দিয়ে গেছেন জাতিকে।

বিএনপি-আওয়ামী লীগের কথা কাটাকাটির অর্থ মানুষের কাছে এরকম। আওয়ামী লীগ এবং তাদের ‘দলদাসরা’ বিএনপিকে মুসলিম লীগ হয়ে যাবে বলা কিংবা বিএনপির ‘দলদাসরা’ আওয়ামী লীগকে বাকশালী আলখেল্লাধারী নব্য ফ্যাসিস্ট বলে গাল দেওয়া সাময়িক উত্তেজনার প্রকাশ। বাস্তবতার সঙ্গে তা মিল খায় না। কিন্তু জামায়াতিরা যা বলছে তা বেশ উদ্বেগের। বিএনপিকে নিয়ে তারা রীতিমতো গবেষণা শুরু করে দিয়েছে। স্পষ্ট হচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে তাদের মৈত্রীর বন্ধনের উদ্দেশ্য ছিল সুদূরপ্রসারী। চরম মুহূর্তে বিএনপিকে ‘গিলে খাওয়াই’ ছিল তাদের উদ্দেশ্য। গদিতে বসানোর লোভ দেখিয়ে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ওপর কাঠামোয় বিভাজন সৃষ্টি করে এবং অর্থ ছড়িয়ে তৃণমূল সংগঠনে কর্মী ভাগিয়ে নিয়ে নিজেরা শক্তিশালী হওয়াই ছিল তাদের লক্ষ্য। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সম্মোহিত করে রেখে দলটির সঠিক নেতৃত্ব গড়ে উঠতে এবং শক্তিশালী হতে কৌশলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তারা। এমন ভাব ধরেছিল যে, তারাই তো আছে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আর কী দরকার? তারা ভাবে, বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য ভালো নয়, তারেক রহমানের অদূর ভবিষ্যতে দেশে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই। বেগম জিয়ার অবর্তমানে তারেক রহমান বিলাতে বসে তার সঙ্গে সম্পর্কিত অধিকতর বিতর্কিত লোকগুলোকে দিয়ে বিএনপির বর্তমান অবস্থা ধরে রাখতে পারবেন না। তখন হবে তাদের পোয়াবারো! এমন বক্তব্যই প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসেছে তাদের পক্ষের এক গবেষণাপত্রে। জামায়াতে ইসলামীর তিন বুদ্ধিজীবীর বিএনপি সম্পর্কিত মূল্যায়ন সম্প্রতি ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রকাশিত ‘লিমিটস অব ইসলামিজম, জামায়াত ইন কনটেম্পরারি ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ’ গ্রন্থে ছাপা হয়েছে। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শইদুল ইসলাম বইটি লিখেছেন। বইয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে ইসলামিজমের ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। এই গ্রন্থে জামায়াতের তিনজন বুদ্ধিজীবীর সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের অধ্যাপক চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, ‘…বিএনপি দুর্বল হয়ে গেলে জামায়াত সাফল্যের সঙ্গে ভারতবিরোধী ও আওয়ামী লীগবিরোধী বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটা একটা প্রকৃত সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দেবে। কারণ বেগম খালেদা জিয়ার পরে বিএনপি টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। বিএনপি মতাদর্শগতভাবে একটি শিথিল এবং অসংগঠিত সংগঠন’ (দৈনিক মানবজমিন ১২ মে ২০১৫)। এর অন্তর্নিহিত বক্তব্য দুর্বোধ্য নয়। বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধার পর থেকেই তারা কৌশলে কাজ চালিয়ে যায়। আগে হাতেগোনা কয়েকটি স্থানে জামায়াতের সংগঠন ছিল। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে তারা শক্তি আহরণ করে নিয়েছে সারা দেশে। খবর নিলেই জানা যাবে, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্য থেকেই তারা শক্তি আহরণ করেছে। বিএনপি দুর্বল হয়েছে, জামায়াত শক্তিশালী হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার পরে বিএনপি ভেঙে খান খান হয়ে গেলে দলে দলে সবাই যোগ দেবে জামায়াতে। তাদের হিসাবটা এমনই। তাদের এই হিসাব বিএনপির প্রগতিশীল গণতন্ত্রীরাই গরমিল করে দিতে পারে যদি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেন। জিয়ার পরে যেমন বেগম জিয়া ছিলেন, সত্যি হচ্ছে বেগম জিয়ার পর সেরকম কেউ নেই। এটা তারেক রহমানেরও স্বীকার করা উচিত। দলের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পন্থায় নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যবস্থাটা যদি সিস্টেমে পরিণত করা যায়, তাহলে বেগম জিয়ার পরও বিএনপিকে গিলে ফেলতে পারবে না জামায়াত। জামায়াতের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি এবং অবস্থানটা স্পষ্ট করে ফেলতে হবে এবং তা এখনই। সময় যত যাবে জামায়াত ততই বিএনপির লোক ভাগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবে। ভারতের সঙ্গে বিএনপির শীতল সম্পর্ক নিয়ে যে প্রচার আছে সেই ব্যাপারেও জনগণকে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। ‘চল চল দিল্লি চল, লাল কেল্লা দখল কর’ জাতীয় জিহাদি মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতার রাজনীতিতে টিকে থাকার চিন্তাই করা যায় না। এসব মৌলিক বিষয়ের ফায়সালা হয়ে গেলে প্রবর্তিত সিস্টেমই বিএনপিকে টিকিয়ে রাখবে। বিএনপি তখন মুসলিম লীগও হবে না, জামায়াতও হবে না। আওয়ামী বুদ্ধিজীবী (!) এবং জামায়াতি বুদ্ধিজীবীদের সব চিন্তা ও গবেষণা চুলায় যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর