হাওর বার্তা ডেস্কঃ পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হতে তিন বছর সময় বাড়ানো হতে পারে। সেতুটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি এরই মধ্যে তিনবার প্রকল্পকাজ শেষ করতে মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
তবে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার ও সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময় বাড়ানোর পক্ষে যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে।
প্রচণ্ড দাবদাহ কিংবা বৃষ্টি—বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। রাতদিন ২৪ ঘণ্টাই চলছে দেশের সর্ববৃহৎ এই অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। এগুচ্ছে কোটি মানুষের স্বপ্ন পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৬০ শতাংশ। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে বসেছে পাঁচটি। কাজ চলছে আরও ১০টি পিলারের। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। সে হিসাবে বাকি মাত্র চার মাস। এ অবস্থায় চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি তিনবার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
জানতে চাইলে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম, ‘প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য যে সময়টা তারা চাইবে, তাদের প্রমাণ করতে হবে যে এই কাজের জন্য এই সময় বাড়ানো প্রয়োজন। সময় চাইলেই তো আর সময় দেওয়া যাবে না, বা সময় দেওয়া হবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বাড়তি সময় চাওয়ার যৌক্তিক কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। সময় বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিতে হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ থেকে আমরা সেই যুক্তি এখনও পাইনি।’
সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরুর পর থেকে ২২টি পিলারের নকশা তৈরিতে দেরি হয়। সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাতে নতুন নকশা দেওয়াও হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য জটিলতার পাশাপাশি নকশা সংগ্রহ করতে এই দেরিকে মেয়াদ বাড়ানোর কারণ হিসেবে উল্লেখ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু যে নকশা আগে দেওয়া হয়েছে তারও শতভাগ কাজ শেষ করতে পারেনি তারা।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক টিমের প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘এমনিতেই প্রকল্পের কাজ অনেক পিছিয়ে আছে। সুতারং পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করার মেয়াদ রিশিডিউল করতেই হবে। তবে এ জন্য প্রকল্পের কাজ আটকেও থাকবে না বা থেমেও থাকবে না। কারণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাতে এর বাইরে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। জাজিরা পয়েন্টে এখনও কাজ শেষ করতে পারেনি তারা। সেখানে এখনও কাজ চলছে। সুতরাং তাদের কোনও যন্ত্রপাতি বসে নেই।’
জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তবে নানা ধরনের ঝুঁকির কথা বিচেনায় রেখে আরও একবছর সময় বেশি চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত যে অগ্রগতি তাতে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা অসম্ভব। তবে যৌক্তিক সময়ের চেয়ে যেন একটি দিনও বাড়ানো না হয়, তার ওপর নজর রাখছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য যে সময়সীমা দেওয়া আছে তা-ই আছে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। গত ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানোয় ৬০০ মিটার দৃশ্যমান হয়। আর সর্বশেষ ২৯ জুন জাজিরা প্রান্তের শেষ স্প্যান হিসেবে ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে পঞ্চম স্প্যান। এতে পৌনে এক কিলোমিটার (৭৫০ মিটার) সেতু এখন দৃশ্যমান।
অন্যদিকে উপরে উঠে গেছে মাওয়া প্রান্তের ৩ নম্বর পিলার। ৪ ও ৫ নম্বর পিলারও উপর দিকে ওঠার পথে। ১৩, ১৪, ১৬, ১৭, ২১, ২২, ২৩, ৩৩, ৩৪ ও ৩৬ নম্বর পিলারের কাজ এগিয়ে গেছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এর কাঠামো।
বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে।