হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতিসংঘ সদরদপ্তরে গত ২০ জুন থেকে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী জাতিসংঘের পুলিশ প্রধানদের দ্বিতীয় সম্মেলন। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীর প্রধানদের এই সম্মেলনে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। খবর বার্তা সংস্থা এনা’র। স্থানীয় সময় ২০ জুন বিকালে জাতিসংঘের ডেলিগেটস্ ডাইনিং রুমে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের পুলিশপ্রধানদের সম্মানে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ সম্মেলনের শুরু হয়।
২১ জুন ছিল এই সম্মেলনের মূল কর্মসূচি। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে সাধারণ পরিষদ হলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যসহ নিহত শান্তিরক্ষীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে সম্মেলনের মূল পর্বের সূচনা করা হয়। সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণ দেন জাতিসংঘ মহাসচিবের শেফ দ্য ক্যাবিনেট মারিয়া লুইজা রিবিরো ভায়োট্টি। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী পূর্ব তিমুরের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি জোসে র্যামস-হোরতা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ পুলিশের ওপর নির্মিত একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
সম্মেলনের মূল আলোচনা অংশটিকে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো: ১. জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জসমূহ এবং জাতিসংঘ পুলিশ ২. সহিংসতা প্রতিরোধ ও শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ পুলিশের ভূমিকা ৩. দায়বদ্ধতা ও কর্মদক্ষতা।
আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে আইজিপি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। আইজিপি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যৌন হয়রানি ও অসদাচরণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের সুদৃঢ় অবস্থান ও প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ পরিমার্জিত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদেরকে প্রস্তুতি গ্রহণ এবং কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
সহিংসতার ক্রম পরিবর্তনশীল রূপের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অরক্ষিত মানুষদের রক্ষা করতে এবং বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটাতে হবে। অসম হুমকিসঙ্কুল পরিবেশে নিরাপদে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় রসদের সরবরাহ এবং কন্টিনজেন্সি পরিকল্পনা উন্নত করার ওপর জোর দেন বাংলাদেশের পুলিশপ্রধান।
আলোচনা পর্বগুলোতে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশন এর প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যাক্রুয়া ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারে এবং জাতিসংঘের ডিপিকেও, ফিল্ড সাপোর্ট, হিউম্যান রাইটস্ বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল, বিভিন্ন দেশের পুলিশ বাহিনীর প্রধান ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের নীতি নির্ধারকরা অংশ নেন।
আলোচকরা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বিশেষ করে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, বিশ্বাস স্থাপন, সহিংসতার অগ্রিম সতর্কবার্তা সংগ্রহসহ মিশনসমূহকে কার্যকর রাখতে জাতিসংঘ পুলিশের বহুমুখী ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। জনকেন্দ্রিক, আধুনিক, ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন, সহনশীল ও বিশেষায়িত জাতিসংঘ পুলিশ বিনির্মাণে মহাসচিবের রূপকল্পের কথা উঠে আসে আলোচনায়।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের ১৬টি পিস্ কিপিং মিশনে ৮৯টি দেশের প্রায় ১১ হাজার নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্য বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন।