হাওর বার্তা ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ৬টি স্থানে ও কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদের ৬টি স্থানে মঙ্গলবার (১২ জুন) রাতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সীমান্তের ওপার (ভারত) থেকে আসা ঢলে আকস্মিকভাবে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নে ৩টি, পৃথিমপাশা ও টিলাগাঁও ইউনিয়নে এবং রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর গ্রামে পৃথক আরও ৩টি স্থানে এবং কমলগঞ্জ উপজেলার ৪ ইউনিয়নে ৫টি ও পৌরসভার ১টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের পূর্ব মুহূর্তে আকস্মিক এ ভাঙনে নদপাড়ের মানুষের ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে ঘড়বাড়ি আর ফসলি জমি। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সৃষ্ট ভাঙনে ৩ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও এক পৌরসভার শতাধিক গ্রামে দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। শরীফপুরের সাথে কুলাউড়া উপজেলা সদরের এবং বাংলাদেশের সাথে ভারতের উত্তর ত্রিপুরার কৈলাসহরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। গত সোমবার ও মঙ্গলবারের টানা বৃষ্টিতে সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে মনু নদের পানি বৃদ্ধি পায়।
শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জুনাব আলী জানান, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমতলা বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন শুরু হলে গ্রামবাসী ও বিজিবি সদস্যরা মিলে শতাধিক বস্তা বালু দিয়ে এ স্থান রক্ষা করে। তবে রাত আড়াইটায় বাঘজুর ও তেলিবিল গ্রাম এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে দ্রুত গতিতে ঢলের পানি গ্রামে প্রবেশ করে। এ পানিতে বসতঘরসহ ফসলি জমি তলিয়ে যায়। ফলে বাঘজুর, তেলিবিল, চাঁনপুর, খাম্বারঘাট, শরীফপুর, বটতলা, সঞ্জরপুর গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে।
একই সময় চাতলা সেতুর উত্তর দিকে কয়েক মাস আগে নির্মিত প্রতিরক্ষা বাঁধও ভেঙে ঢলের পানি দ্রুত গতিতে গ্রামে প্রবেশ করে। ফলে নছিরগঞ্জ, ইটারঘাট, মনোহরপুর, নিশ্চিন্তপুর, মাদানগর গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। ঢলের পানিতে শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কের বটতলা থেকে চেকপোস্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়ক ৩ ফুট পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হলে মঙ্গলবার রাত থেকে বাংলাদেশের সাথে ভারতের উত্তর ত্রিপুরার কৈলাসহরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
টিলাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ জানান, টিলাগাঁও ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে মঙ্গলবার রাতে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এতে বালিয়া, সন্দ্রাবাজ, মিয়ারপাড়া, ডরিতাজপুর, লহরাজপুর, তাজপুর, খন্দখারেরগ্রাম, কামালপুর, মিয়ারপাড়া, পাল্লাকান্দিসহ ১০টি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া ডোমাবিল নামক স্থানে বুধবার ভোররাতে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে শিকড়িয়া, গণকিয়া, আলীনগর গ্রামে ২ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে।
এছাড়াও রাজনগর উপজেলা কামারচর ইউনিয়নের ভোলানগর গ্রামে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধে সৃষ্ট ভাঙনের ফলে ৭-৮ টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে।
এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়ন বাদে করিমপুর, সুরানন্দপুর, পৌরসভার করিমপুর, আদমপুর ইউনিয়নের নাজাতকোনা, রহিমপুর ইউনিয়নের প্রতাপী ও মাধবপুর ইউনিয়নের কাটাবিল এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
সৃষ্ট ভাঙনের ফলে ঘর-বাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌ. মো. গোলাম রাব্বী বলেন, ‘আমরা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত প্রয়োজনীয় সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছি।’ পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, মনু নদের পানি বিপদসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার ও ধলাই নদের পানি বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত বন্ধ না হলে ঝুঁকিপূর্ণ আরও ১০-১৫ টি স্থানে ভাঙন দেখা দিতে পারে।