ঢাকা ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যাদের জাকাত দেওয়া যাবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৮:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ জুন ২০১৮
  • ৩৯২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাকাত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রুকন, নামাজের পরেই জাকাতের স্থান। কোরআনের ৩০ জায়গায় জাকাতের বিধান এসেছে। জাকাত আদায়কারী বান্দার জন্য অশেষ রহমত ও সওয়াবের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যারা জাকাত আদায় করে না, কোরআনে তাদের মর্মন্তুদ শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার কথা বলা হয়েছে। জাকাত অর্থ পবিত্র করা, বৃদ্ধি পাওয়া। (মাআরেফুল কোরআন : ৩৬)। কোনো অসচ্ছল গরিব মুসলমানকে কোনো ধরনের শর্ত ও বিনিময় ছাড়া জাকাতযোগ্য সম্পদের (বর্তমান বাজারমূল্যের) ৪০ ভাগের এক অংশের মালিক বানানোকে জাকাত বলে। (আদ্দুরুল মুখতার, ২/২৫৬)। সুস্থমস্তিষ্ক, আজাদ, বালেগ মুসলমান নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর চান্দ্রমাস হিসেবে এক বছর অতিবাহিত হলে জাকাত আদায় করা তার ওপর ফরজ। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে : ২/৭৯,৮২)।

ইসলামি শরিয়া মোতাবেক যাদের জাকাত দেওয়া যাবে কোরআনুল কারিমে জাকাতের খাত নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। এ খাত ছাড়া অন্য কোথাও জাকাত প্রদান করা জায়েজ নয়। এরশাদ হয়েছে, ‘জাকাত হলো শুধু ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের হক এবং তা দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। (সূরা তওবা : ৬০)।

১. ফকির, যার কিছুই নেই। মিসকিন, যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে তারা গরিব। তাদের জাকাত দেওয়া যাবে। (মাআরেফুল কোরআন : ৫৭৬)।

২. যে ব্যক্তি এমন ঋণগ্রস্ত, ঋণ পরিশোধ করার পর তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে না। তাকে জাকাত দেওয়া যাবে। (মাআরেফুল কোরআন : ৫৭৮)।

৩. কোনো ব্যক্তি নিজ বাড়িতে নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী; কিন্তু সফরে এসে অভাবে পড়ে গেছে, এমন ব্যক্তিকে জাকাত দেওয়া যাবে। সফরকারী প্রয়োজন পরিমাণ গ্রহণ করতে পারবে, এর বেশি নয়। (মাআরেফুল কোরআন : ৫৭৯)।

৪. বাড়ির কাজের ছেলে বা মেয়ে জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে জাকাত দেওয়া জায়েজ। তবে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে জাকাত দিলে আদায় হবে না।

৫. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিককে জাকাতের উপযুক্ত মনে করে জাকাত দিলে আদায় হয়ে যাবে। ফের জাকাত দিতে হবে না। তবে সে যদি জানতে পারে যে, এটা জাকাতের টাকা ছিল সেক্ষেত্রে তা ফেরত দেওয়া ওয়াজিব। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ১০৫৪৩)।

৬. আত্মীয়স্বজন জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে তাদের জাকাত দেওয়া উত্তম। ভাই, বোন, ভাতিজা, ভাগনে, চাচা, মামা, ফুফু, খালা এবং অন্যান্য আত্মীয়কে জাকাত দেওয়া যাবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ৭১৬০, ৭১৬১, ৭১৬৪, ৭১৭১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৬/৫৪২-৫৪৬)। দেওয়ার সময় জাকাতের উল্লেখ না করে মনে মনে জাকাতের নিয়ত করলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে। এটাই উত্তম।

৭. ধর্মীয় খেদমতে রত নিঃস্ব, দরিদ্র ব্যক্তিকে জাকাত-ফিতরা দান করলে কোরআনি তালিমের সহযোগিতা করার দরুন সদকায়ে জারিয়ার সওয়াবও হাসিল হবে। (সূরা বাকারা : ২৭৩)।

৮. জাকাতের টাকা এমন দরিদ্রকে দেওয়া উত্তম, যে দ্বীনদার। দ্বীনদার নয়, এমন লোক জাকাতের উপযুক্ত হলে তাকেও জাকাত দেওয়া যাবে। কিন্তু যদি প্রবল ধারণা হয়, জাকাতের টাকা দেওয়া হলে লোকটি গোনাহের কাজে ব্যয় করবে, তাহলে তাকে জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়।

৯. অপ্রাপ্তবয়স্ক (বোঝমান) ছেলেমেয়েকে জাকাত দেওয়া যায়। (রদ্দুল মুহতার : ২/২২৭, আল বাহরুর রায়েক : ২/২০১)।

১০. জাকাতের টাকা দ্বারা কারও কর্মসংস্থান করে দিলে অথবা কারও ঘর বা দোকান ইত্যাদি নির্মাণে মোটা অঙ্ক ব্যয় করলে জাকাত আদায় হবে। তবে একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে একত্রে অনেক টাকা না দিয়ে প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে দেওয়া উচিত, যেন সঙ্গে সঙ্গে নিসাবের মালিক না হয়ে যায় এবং তার প্রয়োজনও পুরো হয়। যদিও একজনকে জাকাতের এত অধিক টাকা দেওয়া মাকরুহ। আর এ ধারাটি খুব ব্যাপক হওয়া উচিত নয়। কারণ যে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা অনেক বেশি সেখানে অল্প কিছু লোককে জাকাতের বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে দিলে অন্যদের বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।

১১. চিকিৎসা খরচে জাকাত : জাকাতের নিসাবের মালিক এমন কোনো রোগীকে যদি জাকাতের টাকা দিতে চায়, তবে ওই রোগীর নিজস্ব টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার পর (সে দরিদ্রের অন্তর্র্ভুক্ত হলে) তাকে প্রদান করবে অথবা রোগীর এমন কোনো অভিভাবককে প্রদান করবে, যে জাকাত গ্রহণের উপযোগী। পরে লোকটি ওই টাকা স্বেচ্ছায় ওই রোগীর চিকিৎসায় ব্যয় করতে পারবে।

যাদের জাকাত দেওয়া যাবে না
১. নিজ মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, পরদাদা প্রমুখ ব্যক্তি, যারা জাকাতদাতার জন্মের উৎস তাদের নিজের জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়। এমনভাবে নিজের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি এবং তাদের অধস্তনকে নিজ সম্পদের জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে জাকাত দিতে পারবে না। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৫৮)।

২. ধনী ব্যক্তি (যার কাছে জাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণে আছে) এবং ধনীর সন্তানকে জাকাত দিলে আদায় হবে না। অনুরূপভাবে যার কাছে জাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ নেই; কিন্তু অন্য ধরনের সম্পদ যাতে জাকাত আসে না, যেমন ঘরের আসবাবপত্র, পরিধেয় বস্ত্র, জুতা, গৃহস্থ সামগ্রী ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং নিসাব পরিমাণ আছে তাকেও জাকাত দেওয়া যাবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ৭১৫৬)।

৩. হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা অন্য কোনো অমুসলিমকে জাকাত দিলে আদায় হবে না। তবে নফল দানখয়রাত দেওয়া যেতে পারে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ৭১৬৬-৭১৬৭, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৬/৫১৬-৫১৭)।

৪. জাকাতের টাকা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করলে জাকাত আদায় হবে না। যেমন রাস্তাঘার্ট, পুল নির্মাণ করা, বিদ্যুত-পানি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। (মাবসুত : ২/২০২, শরহে সিয়ার : ৪/২৪৪, শরহে মুখতাসারুল খলীল : ১/১৬১, আলমগীরী : ১/১৮৮, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৮২, মাআরেফুল কোরআন : ৫৮০)।

৫. জাকাতের টাকা দ্বারা মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করা, ইসলাম প্রচার, ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতনভাতা দেওয়া, ওয়াজ-মাহফিল করা, দ্বীনি বইপুস্তক ছাপানো ইত্যাদি জায়েজ নয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ৬৯৪৭, ৬৯৪৮, ৭১৩৭, ৭১৭০, মাআরেফুল কোরআন : ৫৮০)।

৬. ঋণ দিয়ে পরে তা জাকাত বাবদ কর্তন করলে জাকাত আদায় হবে না। এক্ষেত্রে করণীয় হলো, প্রথমে তাকে জাকাতের টাকা প্রদান করবে, পরে তার থেকে ওই টাকা নিজ পাওনা বাবদ নেওয়া যেতে পারে।

৭. জাকাত আদায়ের শর্ত উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া। যাতে নিজের খুশিমতো তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। এরূপ না করে যদি জাকাতদাতা নিজের খুশিমতো দরিদ্র লোকটির কোনো প্রয়োজনে টাকাটি খরচ করে, যেমন তার ঘর সংস্কার করে দিল, টয়লেট স্থাপন করে দিল কিংবা পানি বা বিদ্যুতের ব্যবস্থা করল, তাহলেও জাকাত আদায় হবে না। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৫৭)।

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ানবাজার, তেজগাঁও, ঢাকা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

যাদের জাকাত দেওয়া যাবে

আপডেট টাইম : ১১:২৮:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ জুন ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাকাত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রুকন, নামাজের পরেই জাকাতের স্থান। কোরআনের ৩০ জায়গায় জাকাতের বিধান এসেছে। জাকাত আদায়কারী বান্দার জন্য অশেষ রহমত ও সওয়াবের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যারা জাকাত আদায় করে না, কোরআনে তাদের মর্মন্তুদ শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার কথা বলা হয়েছে। জাকাত অর্থ পবিত্র করা, বৃদ্ধি পাওয়া। (মাআরেফুল কোরআন : ৩৬)। কোনো অসচ্ছল গরিব মুসলমানকে কোনো ধরনের শর্ত ও বিনিময় ছাড়া জাকাতযোগ্য সম্পদের (বর্তমান বাজারমূল্যের) ৪০ ভাগের এক অংশের মালিক বানানোকে জাকাত বলে। (আদ্দুরুল মুখতার, ২/২৫৬)। সুস্থমস্তিষ্ক, আজাদ, বালেগ মুসলমান নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর চান্দ্রমাস হিসেবে এক বছর অতিবাহিত হলে জাকাত আদায় করা তার ওপর ফরজ। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে : ২/৭৯,৮২)।

ইসলামি শরিয়া মোতাবেক যাদের জাকাত দেওয়া যাবে কোরআনুল কারিমে জাকাতের খাত নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। এ খাত ছাড়া অন্য কোথাও জাকাত প্রদান করা জায়েজ নয়। এরশাদ হয়েছে, ‘জাকাত হলো শুধু ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের হক এবং তা দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। (সূরা তওবা : ৬০)।

১. ফকির, যার কিছুই নেই। মিসকিন, যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে তারা গরিব। তাদের জাকাত দেওয়া যাবে। (মাআরেফুল কোরআন : ৫৭৬)।

২. যে ব্যক্তি এমন ঋণগ্রস্ত, ঋণ পরিশোধ করার পর তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে না। তাকে জাকাত দেওয়া যাবে। (মাআরেফুল কোরআন : ৫৭৮)।

৩. কোনো ব্যক্তি নিজ বাড়িতে নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী; কিন্তু সফরে এসে অভাবে পড়ে গেছে, এমন ব্যক্তিকে জাকাত দেওয়া যাবে। সফরকারী প্রয়োজন পরিমাণ গ্রহণ করতে পারবে, এর বেশি নয়। (মাআরেফুল কোরআন : ৫৭৯)।

৪. বাড়ির কাজের ছেলে বা মেয়ে জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে জাকাত দেওয়া জায়েজ। তবে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে জাকাত দিলে আদায় হবে না।

৫. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিককে জাকাতের উপযুক্ত মনে করে জাকাত দিলে আদায় হয়ে যাবে। ফের জাকাত দিতে হবে না। তবে সে যদি জানতে পারে যে, এটা জাকাতের টাকা ছিল সেক্ষেত্রে তা ফেরত দেওয়া ওয়াজিব। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ১০৫৪৩)।

৬. আত্মীয়স্বজন জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে তাদের জাকাত দেওয়া উত্তম। ভাই, বোন, ভাতিজা, ভাগনে, চাচা, মামা, ফুফু, খালা এবং অন্যান্য আত্মীয়কে জাকাত দেওয়া যাবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ৭১৬০, ৭১৬১, ৭১৬৪, ৭১৭১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৬/৫৪২-৫৪৬)। দেওয়ার সময় জাকাতের উল্লেখ না করে মনে মনে জাকাতের নিয়ত করলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে। এটাই উত্তম।

৭. ধর্মীয় খেদমতে রত নিঃস্ব, দরিদ্র ব্যক্তিকে জাকাত-ফিতরা দান করলে কোরআনি তালিমের সহযোগিতা করার দরুন সদকায়ে জারিয়ার সওয়াবও হাসিল হবে। (সূরা বাকারা : ২৭৩)।

৮. জাকাতের টাকা এমন দরিদ্রকে দেওয়া উত্তম, যে দ্বীনদার। দ্বীনদার নয়, এমন লোক জাকাতের উপযুক্ত হলে তাকেও জাকাত দেওয়া যাবে। কিন্তু যদি প্রবল ধারণা হয়, জাকাতের টাকা দেওয়া হলে লোকটি গোনাহের কাজে ব্যয় করবে, তাহলে তাকে জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়।

৯. অপ্রাপ্তবয়স্ক (বোঝমান) ছেলেমেয়েকে জাকাত দেওয়া যায়। (রদ্দুল মুহতার : ২/২২৭, আল বাহরুর রায়েক : ২/২০১)।

১০. জাকাতের টাকা দ্বারা কারও কর্মসংস্থান করে দিলে অথবা কারও ঘর বা দোকান ইত্যাদি নির্মাণে মোটা অঙ্ক ব্যয় করলে জাকাত আদায় হবে। তবে একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে একত্রে অনেক টাকা না দিয়ে প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে দেওয়া উচিত, যেন সঙ্গে সঙ্গে নিসাবের মালিক না হয়ে যায় এবং তার প্রয়োজনও পুরো হয়। যদিও একজনকে জাকাতের এত অধিক টাকা দেওয়া মাকরুহ। আর এ ধারাটি খুব ব্যাপক হওয়া উচিত নয়। কারণ যে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা অনেক বেশি সেখানে অল্প কিছু লোককে জাকাতের বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে দিলে অন্যদের বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।

১১. চিকিৎসা খরচে জাকাত : জাকাতের নিসাবের মালিক এমন কোনো রোগীকে যদি জাকাতের টাকা দিতে চায়, তবে ওই রোগীর নিজস্ব টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার পর (সে দরিদ্রের অন্তর্র্ভুক্ত হলে) তাকে প্রদান করবে অথবা রোগীর এমন কোনো অভিভাবককে প্রদান করবে, যে জাকাত গ্রহণের উপযোগী। পরে লোকটি ওই টাকা স্বেচ্ছায় ওই রোগীর চিকিৎসায় ব্যয় করতে পারবে।

যাদের জাকাত দেওয়া যাবে না
১. নিজ মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, পরদাদা প্রমুখ ব্যক্তি, যারা জাকাতদাতার জন্মের উৎস তাদের নিজের জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়। এমনভাবে নিজের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি এবং তাদের অধস্তনকে নিজ সম্পদের জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে জাকাত দিতে পারবে না। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৫৮)।

২. ধনী ব্যক্তি (যার কাছে জাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণে আছে) এবং ধনীর সন্তানকে জাকাত দিলে আদায় হবে না। অনুরূপভাবে যার কাছে জাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ নেই; কিন্তু অন্য ধরনের সম্পদ যাতে জাকাত আসে না, যেমন ঘরের আসবাবপত্র, পরিধেয় বস্ত্র, জুতা, গৃহস্থ সামগ্রী ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং নিসাব পরিমাণ আছে তাকেও জাকাত দেওয়া যাবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ৭১৫৬)।

৩. হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা অন্য কোনো অমুসলিমকে জাকাত দিলে আদায় হবে না। তবে নফল দানখয়রাত দেওয়া যেতে পারে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ৭১৬৬-৭১৬৭, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৬/৫১৬-৫১৭)।

৪. জাকাতের টাকা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করলে জাকাত আদায় হবে না। যেমন রাস্তাঘার্ট, পুল নির্মাণ করা, বিদ্যুত-পানি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। (মাবসুত : ২/২০২, শরহে সিয়ার : ৪/২৪৪, শরহে মুখতাসারুল খলীল : ১/১৬১, আলমগীরী : ১/১৮৮, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৮২, মাআরেফুল কোরআন : ৫৮০)।

৫. জাকাতের টাকা দ্বারা মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করা, ইসলাম প্রচার, ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতনভাতা দেওয়া, ওয়াজ-মাহফিল করা, দ্বীনি বইপুস্তক ছাপানো ইত্যাদি জায়েজ নয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ৬৯৪৭, ৬৯৪৮, ৭১৩৭, ৭১৭০, মাআরেফুল কোরআন : ৫৮০)।

৬. ঋণ দিয়ে পরে তা জাকাত বাবদ কর্তন করলে জাকাত আদায় হবে না। এক্ষেত্রে করণীয় হলো, প্রথমে তাকে জাকাতের টাকা প্রদান করবে, পরে তার থেকে ওই টাকা নিজ পাওনা বাবদ নেওয়া যেতে পারে।

৭. জাকাত আদায়ের শর্ত উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া। যাতে নিজের খুশিমতো তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। এরূপ না করে যদি জাকাতদাতা নিজের খুশিমতো দরিদ্র লোকটির কোনো প্রয়োজনে টাকাটি খরচ করে, যেমন তার ঘর সংস্কার করে দিল, টয়লেট স্থাপন করে দিল কিংবা পানি বা বিদ্যুতের ব্যবস্থা করল, তাহলেও জাকাত আদায় হবে না। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৫৭)।

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ানবাজার, তেজগাঁও, ঢাকা