হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ সোমবার পবিত্র মাহে রমজানের ১৮তম দিন, আর মাগফিরাতের অষ্টম দিন। রমজান মাস ইবাদতের মাস। এ মাসে মুমিন বান্দাগণ বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করে থাকেন। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল—সব ধরনের ইবাদত করেন এ মাসে। আর ইবাদতসমূহের মধ্যে নামাজের পরে সামর্থ্যবানদের জন্য জাকাত প্রদান করা সর্বোত্তম ইবাদত। রমজানে যেহেতু একটি নফল আদায় করলে একটি ফরজ আদায়ের সাওয়াব আর একটি ফরজ আদায় করলে ৭০টি ফরজ আদায়ের সাওয়াব হয়, তাই মুমিন বান্দাগণ এ মাসেই অন্যান্য ইবাদতের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ পুণ্য লাভের আশায় জাকাতও আদায় করে থাকে।
ইসলামে জাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। জাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি। বিত্তবানদের জন্য বিশেষ শর্তসাপেক্ষে জাকাত প্রদান করা ফরজে আইন। জাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানালে, বা টালবাহানা করলে ইসলামী সরকার কর্তৃক তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা করে জাকাত প্রদানে বাধ্য করা ওয়াজিব। আর কেউ জাকাতের বিধান অস্বীকার করলে সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘নামাজ আদায় কর, জাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু কর, (সূরা বাক্বারা, আয়াত- ৪৩)।’
যাদের ওপর জাকাত ফরজ : প্রত্যেক সুস্থমস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্ক স্বাধীন মুসলমান, যার নিকট সাড়ে ৫২ তোলা রুপা, সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা এর সমমূল্যের নিত্য প্রয়োজনীয় ও ঋণের অতিরিক্ত সম্পদ বা ব্যবসায়িক পণ্য থাকে তার ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে পূর্বের বছরের জাকাত ফরজ হয়ে যায়। ওই ব্যক্তির জন্য তার পূর্ণ সম্পত্তির হিসাব করে তার ৪০ ভাগের একভাগ অথবা শতকরা ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে জাকাত প্রদান করতে হবে।
জাকাতের ফজিলত : জাকাত প্রদানের অনেক কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘জাকাত প্রদান করলে আল্লাহর রহমত লাভ হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। সুতরাং, আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং জাকাত প্রদান করে, (সূরা আরাফ, আয়াত-১৫৬)।’ আর যারা জাকাত প্রদান করবে তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে মহাপুরস্কার রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, নেক কাজ করেছে, নামাজ প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং জাকাত প্রদান করেছে, তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না, (সূরা বাক্বারা, আয়াত-২৭৭)।’ জাকাত প্রদান করার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সদকা গুনাহকে নিভিয়ে দেয় যেভাবে পানি আগুন নেভায়, (তিরমিজি, হাদিস নং-২৬১৬)।’
জাকাত প্রদান না করার শাস্তি : জাকাত যাদের ফরজ তারা জাকাত প্রদান না করলে কঠিন শাস্তির কথা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা সোনা-রুপা জমা করে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না (জাকাত দেয় না), তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন। যেদিন সোনা-রুপা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের কপাল, পার্শ্বদেশ ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটাই সে সম্পদ যা তোমরা জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং, তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ আস্বাদন কর, (সূরা তওবা, আয়াত: ৩৪-৩৫)।’ হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার জাকাত দেয়নি, কিয়ামতের দিন তা বিষধর সাপ ধারণ করবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের উভয়পাশে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ধন, আমিই তোমার জমাকৃত সম্পদ, (সহিহ বোখারি, হাদিস নং- ১৩৩৮)।’
অতএব, রমজান মাসে রোজা পালনকারী প্রত্যেক ধনী ব্যক্তিরই হিসাব করে জাকাত আদায় করা উচিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বোঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুক। আমিন