ঢাকা ১২:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কটিয়াদী উপজেলাতে চাকরি দেয়ার নামে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে উধাও শিউলী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ মে ২০১৮
  • ৩২২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলাতে চাকরি দেয়ার নামে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে শিউলী আক্তার (৩০) নামে এক ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট গত বুধবার দুপুরে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট শিউলী আক্তারের সদ্য বিবাহিত স্বামী মো. রফিকুল ইসলামের বাড়িতে শতাধিক মানুষ টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ভিড় করছেন। ঘটনাটি ঘটেছে কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের চর আলগী গ্রামে।

জানা যায়, চর আলগী গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী আসাব উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলাম রফিকের মনোহরদী উপজেলার ব্র্যাক অফিসের জনৈক ম্যানেজারের মাধ্যমে শিউলী আক্তারের সঙ্গে রফিকের পরিচয় হয়। শিউলী নিজেকে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বলে পরিচয় দেন। যশোরের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন তার চাচা, এ্যাডভোকেট রফিক উদ্দিন তার পিতা পরিচয় দেন। ঢাকার গুলশানে নিজস্ব বাসা ও গাজীপুরে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে বলে জানায়।

পরিচয়ের কয়েক দিন পর রফিকের চাকরি প্রদানসহ তাকে বিয়ে করতে চান বলে মত প্রকাশ করেন শিউলী। এতে রফিক রাজি হলে ২০১৭ সালের ৮ই নভেম্বর তারিখে মনোহরদী উপজেলার চরমান্দালিয়া কাজী অফিসের মাধমে দুই লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। শিউলী তার বরের বাড়িতে গিয়ে দু’চালা টিনের ঘর ভেঙে নতুন ঘর, বাউন্ডারি ওয়াল ও গেট নির্মাণ করেন।

স্থানীয় মানুষের মন জয় করার জন্য তিনি গ্রামের মসজিদ নির্মাণে নগদ ১ লাখ টাকা ও চর আলগী ইছাম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ১২টি সিলিং ফ্যান প্রদান করেন। এর কিছু দিন পর তিনি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার এসিল্যান্ড হিসেবে বদলি হয়েছেন বলে জানান। তিনি কটিয়াদী উপজেলা সদরে ভোগপাড়া খাদ্যগুদামের সঙ্গে চারতলা ভবনে বাসা ভাড়া নেন।

মাঝে মধ্যে শিউলী প্রাইভেটকারে অফিসে যাওয়ার নামে বাসা থেকে বের হয়ে যেতেন। একপর্যায়ে তিনি প্রচার করেন সমগ্র বাংলাদেশে জজ কোর্টসমূহে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদে লোক নিয়োগ করা হবে। তিনি সেই নিয়োগ কমিটির একজন সদস্য। চাকরি প্রদানের জন্য বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে তিনি কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া ও মনোহরদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক লোকের কাছে থেকে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

কয়েক জনকে তিনি নিয়োগপত্র প্রদান করলে পাকুন্দিয়া উপজেলার মাসুদ মিয়া নামের একজন তার নিয়োগপত্রটি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে দেখালে তিনি তা ভুয়া বলে জানান। সংবাদটি জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার সকালে শিউলী তার স্বামী রফিককে বলেন, যশোরের বেনাপোল পৌরসভার মেয়র লিটন এবং ঢাকা বারের সেক্রেটারি নজিবুল্লাহ হিরো কটিয়াদীতে তার বাসায় বেড়াতে আসছেন, তাদেরকে রিসিভ করে আনার জন্য রফিককে নরসিংদী পাঠিয়ে দিয়ে  কটিয়াদীস্থ ভাড়া বাসা থেকে টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়।

এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে। এই ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে চাকরি প্রত্যাশী লোকজন শিউলী আক্তারের কথিত স্বামী রফিককে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। শিউলী আক্তারের স্বামী রফিকুল ইসলাম জানান, আমি তার প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমাকে বিভিন্ন ওষুধ খাইয়ে এবং তাবিজ কবজ দিয়ে অস্বাভাবিক করে রেখেছিল। লোকজনের টাকা পয়সা প্রদানের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

শিউলী আক্তারের বিরুদ্ধে আমি কটিয়াদী মডেল থানায় এক অভিযোগ দায়ের করেছি। এ বিষয়ে কটিয়াদী মডেল থানার ওসি জাকির রব্বানি জানান, রফিকুল ইসলামের দায়ের করা অভিযোগটি আমরা খতিয়ে দেখছি। তদন্তের পর মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কটিয়াদী উপজেলাতে চাকরি দেয়ার নামে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে উধাও শিউলী

আপডেট টাইম : ১১:১৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ মে ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলাতে চাকরি দেয়ার নামে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে শিউলী আক্তার (৩০) নামে এক ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট গত বুধবার দুপুরে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট শিউলী আক্তারের সদ্য বিবাহিত স্বামী মো. রফিকুল ইসলামের বাড়িতে শতাধিক মানুষ টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ভিড় করছেন। ঘটনাটি ঘটেছে কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের চর আলগী গ্রামে।

জানা যায়, চর আলগী গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী আসাব উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলাম রফিকের মনোহরদী উপজেলার ব্র্যাক অফিসের জনৈক ম্যানেজারের মাধ্যমে শিউলী আক্তারের সঙ্গে রফিকের পরিচয় হয়। শিউলী নিজেকে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বলে পরিচয় দেন। যশোরের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন তার চাচা, এ্যাডভোকেট রফিক উদ্দিন তার পিতা পরিচয় দেন। ঢাকার গুলশানে নিজস্ব বাসা ও গাজীপুরে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে বলে জানায়।

পরিচয়ের কয়েক দিন পর রফিকের চাকরি প্রদানসহ তাকে বিয়ে করতে চান বলে মত প্রকাশ করেন শিউলী। এতে রফিক রাজি হলে ২০১৭ সালের ৮ই নভেম্বর তারিখে মনোহরদী উপজেলার চরমান্দালিয়া কাজী অফিসের মাধমে দুই লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। শিউলী তার বরের বাড়িতে গিয়ে দু’চালা টিনের ঘর ভেঙে নতুন ঘর, বাউন্ডারি ওয়াল ও গেট নির্মাণ করেন।

স্থানীয় মানুষের মন জয় করার জন্য তিনি গ্রামের মসজিদ নির্মাণে নগদ ১ লাখ টাকা ও চর আলগী ইছাম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ১২টি সিলিং ফ্যান প্রদান করেন। এর কিছু দিন পর তিনি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার এসিল্যান্ড হিসেবে বদলি হয়েছেন বলে জানান। তিনি কটিয়াদী উপজেলা সদরে ভোগপাড়া খাদ্যগুদামের সঙ্গে চারতলা ভবনে বাসা ভাড়া নেন।

মাঝে মধ্যে শিউলী প্রাইভেটকারে অফিসে যাওয়ার নামে বাসা থেকে বের হয়ে যেতেন। একপর্যায়ে তিনি প্রচার করেন সমগ্র বাংলাদেশে জজ কোর্টসমূহে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদে লোক নিয়োগ করা হবে। তিনি সেই নিয়োগ কমিটির একজন সদস্য। চাকরি প্রদানের জন্য বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে তিনি কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া ও মনোহরদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক লোকের কাছে থেকে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

কয়েক জনকে তিনি নিয়োগপত্র প্রদান করলে পাকুন্দিয়া উপজেলার মাসুদ মিয়া নামের একজন তার নিয়োগপত্রটি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে দেখালে তিনি তা ভুয়া বলে জানান। সংবাদটি জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার সকালে শিউলী তার স্বামী রফিককে বলেন, যশোরের বেনাপোল পৌরসভার মেয়র লিটন এবং ঢাকা বারের সেক্রেটারি নজিবুল্লাহ হিরো কটিয়াদীতে তার বাসায় বেড়াতে আসছেন, তাদেরকে রিসিভ করে আনার জন্য রফিককে নরসিংদী পাঠিয়ে দিয়ে  কটিয়াদীস্থ ভাড়া বাসা থেকে টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়।

এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে। এই ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে চাকরি প্রত্যাশী লোকজন শিউলী আক্তারের কথিত স্বামী রফিককে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। শিউলী আক্তারের স্বামী রফিকুল ইসলাম জানান, আমি তার প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমাকে বিভিন্ন ওষুধ খাইয়ে এবং তাবিজ কবজ দিয়ে অস্বাভাবিক করে রেখেছিল। লোকজনের টাকা পয়সা প্রদানের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

শিউলী আক্তারের বিরুদ্ধে আমি কটিয়াদী মডেল থানায় এক অভিযোগ দায়ের করেছি। এ বিষয়ে কটিয়াদী মডেল থানার ওসি জাকির রব্বানি জানান, রফিকুল ইসলামের দায়ের করা অভিযোগটি আমরা খতিয়ে দেখছি। তদন্তের পর মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।