ঢাকা ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরে বাম্পার ফলন : ৯৯ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০২:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ মে ২০১৮
  • ২৭১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলতি মৌসুমে হাওর এলাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে হাওরের ৯৯.৩৮ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, শিলাবৃষ্টি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। উৎপাদন ভালো হলেও ধানের দাম কম হওয়ায় দরিদ্র কৃষকের মুখের হাসিটা অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। তবে গত বছর আগাম বন্যার কারণে কোনো ধানই ঘরে তুলতে পারেনি কৃষক।

সে তুলনায় এবার অনেক ভালো আছেন তারা। জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, এ বছর হাওর এলাকায় বোরো উৎপাদন খুবই ভালো হয়েছে। ওখানকার কৃষকরা ভালো আছেন। তাদের কোনো সমস্যা নেই। হাওর এলাকার কৃষক এক মণ ধান ৬শ টাকায় বিক্রি করছেন। অন্যদিকে একজন ধানকাটা শ্রমিকের দৈনিক মজুরিও ৬শ টাকা এমন ষ এরপর প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ধানের দাম বেশি হওয়া উচিত কিন্তু বেশি হলেও আপনারাই আবার পত্রিকায় লেখেন।

সরকারি তথ্য মতে, এ বছর সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় হাওরের আওতায় অর্জিত বোরো আবাদের জমির পরিমাণ হলো ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬ হেক্টর। গতকাল পর্যন্ত বোরো ধানের কর্র্তনকৃত জামির পরিমাণ হলো ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩১৩ হেক্টর। ধান কর্তনের হার ৯৯.৩৮ শতাংশ। এই কর্র্তনকৃত ধানের পরিমাণ হলো ১৭ লাখ ৯১ হাজার ৯০৬ মেট্রিক টন।এদিকে হাওর অঞ্চলে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে ৭শ টাকায়।

কোনো কোনো জায়গায় সাড়ে ৫শ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে ধান। অথচ সরকারি হিসাবেই এক মণ ধান উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ হয়েছে ৯৬০ টাকা। এখানে কৃষকের লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠছে না। বরং মণপ্রতি ৩শ থেকে ৪শ টাকা লোকসান দিচ্ছে। এতে ধান চাষে অনেক কৃষকই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই এ অবস্থায় কৃষি বিশেষজ্ঞরা ওই অঞ্চল থেকে বেশি করে ধান ও চাল সংগ্রহ করতে সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন। অর্থাৎ তারা কৃষকের কাছ থেকে সরকারকে সরাসরি ধান ক্রয়ের কথা বলেছেন। জানতে চাইলে হবিগঞ্জের কৃষক মনু মিয়া বলেন, গত বছর সব ধান পানিতে ডুবে গেছে।

অনেক কষ্টে দিন কাটছে। এবার ধান ভালো হয়েছে কিন্তু দাম কম। ধানের ওপর কর্য করে টাকা এনেছিলাম। এখন এসব পরিশোধ করাই সমস্যা। বেশি দাম পেলে কিছুটা পোষানো যেতো। এভাবে চললে কৃষক বাঁচবে না। তার মতে, সবকিছুর দাম বাড়ছে তাই ধানের দামও বাড়াতে হবে। গত বছরের অকাল বন্যায় নষ্ট হয়েছে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান। এতে ধানের উৎপাদন একেবারেই কমে যায়।

হাওর নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘হাওর এ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম’ তখন বলেছিল, হাওর এলাকায় বোরো ধানের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে এবার প্রায় ১৫ লাখ টন চাল কম পাওয়া যাবে। আর চালের পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সমিতিগুলো বলেছিল, বোরোতে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হবে। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও গত বছর হাওরের বন্যার কারণে চালের বাজারে তার ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। চালের মূল্যও রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছিল। কিন্তু এবার দেশে বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক তার কাক্সিক্ষত মূল্য পাচ্ছে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরে বাম্পার ফলন : ৯৯ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে

আপডেট টাইম : ১২:০২:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ মে ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলতি মৌসুমে হাওর এলাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে হাওরের ৯৯.৩৮ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, শিলাবৃষ্টি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। উৎপাদন ভালো হলেও ধানের দাম কম হওয়ায় দরিদ্র কৃষকের মুখের হাসিটা অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। তবে গত বছর আগাম বন্যার কারণে কোনো ধানই ঘরে তুলতে পারেনি কৃষক।

সে তুলনায় এবার অনেক ভালো আছেন তারা। জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, এ বছর হাওর এলাকায় বোরো উৎপাদন খুবই ভালো হয়েছে। ওখানকার কৃষকরা ভালো আছেন। তাদের কোনো সমস্যা নেই। হাওর এলাকার কৃষক এক মণ ধান ৬শ টাকায় বিক্রি করছেন। অন্যদিকে একজন ধানকাটা শ্রমিকের দৈনিক মজুরিও ৬শ টাকা এমন ষ এরপর প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ধানের দাম বেশি হওয়া উচিত কিন্তু বেশি হলেও আপনারাই আবার পত্রিকায় লেখেন।

সরকারি তথ্য মতে, এ বছর সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় হাওরের আওতায় অর্জিত বোরো আবাদের জমির পরিমাণ হলো ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬ হেক্টর। গতকাল পর্যন্ত বোরো ধানের কর্র্তনকৃত জামির পরিমাণ হলো ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩১৩ হেক্টর। ধান কর্তনের হার ৯৯.৩৮ শতাংশ। এই কর্র্তনকৃত ধানের পরিমাণ হলো ১৭ লাখ ৯১ হাজার ৯০৬ মেট্রিক টন।এদিকে হাওর অঞ্চলে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে ৭শ টাকায়।

কোনো কোনো জায়গায় সাড়ে ৫শ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে ধান। অথচ সরকারি হিসাবেই এক মণ ধান উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ হয়েছে ৯৬০ টাকা। এখানে কৃষকের লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠছে না। বরং মণপ্রতি ৩শ থেকে ৪শ টাকা লোকসান দিচ্ছে। এতে ধান চাষে অনেক কৃষকই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই এ অবস্থায় কৃষি বিশেষজ্ঞরা ওই অঞ্চল থেকে বেশি করে ধান ও চাল সংগ্রহ করতে সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন। অর্থাৎ তারা কৃষকের কাছ থেকে সরকারকে সরাসরি ধান ক্রয়ের কথা বলেছেন। জানতে চাইলে হবিগঞ্জের কৃষক মনু মিয়া বলেন, গত বছর সব ধান পানিতে ডুবে গেছে।

অনেক কষ্টে দিন কাটছে। এবার ধান ভালো হয়েছে কিন্তু দাম কম। ধানের ওপর কর্য করে টাকা এনেছিলাম। এখন এসব পরিশোধ করাই সমস্যা। বেশি দাম পেলে কিছুটা পোষানো যেতো। এভাবে চললে কৃষক বাঁচবে না। তার মতে, সবকিছুর দাম বাড়ছে তাই ধানের দামও বাড়াতে হবে। গত বছরের অকাল বন্যায় নষ্ট হয়েছে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান। এতে ধানের উৎপাদন একেবারেই কমে যায়।

হাওর নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘হাওর এ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম’ তখন বলেছিল, হাওর এলাকায় বোরো ধানের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে এবার প্রায় ১৫ লাখ টন চাল কম পাওয়া যাবে। আর চালের পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সমিতিগুলো বলেছিল, বোরোতে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হবে। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও গত বছর হাওরের বন্যার কারণে চালের বাজারে তার ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। চালের মূল্যও রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছিল। কিন্তু এবার দেশে বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক তার কাক্সিক্ষত মূল্য পাচ্ছে না।