ঢাকা ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরে এখন কৃষি ধানের আলোয় ভাসছে হাওর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪২:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ মে ২০১৮
  • ৪৫৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওরজুড়ে এখন সবুজ ধানের বিপুল সমারোহ। ধানের আলোয় ভাসছে হাওর। সবুজ ধানের শিষ লালচে হতে শুরু করেছে। ধান পাকছে, আশা জাগছে কৃষকের মনে। ফলনও ভালো হয়েছে। কৃষকের চোখে-মুখে বইছে আনন্দের ঝিলিক।

কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় গত বছর এ সময় ছিল ফসলহারা কৃষকদের হাহাকার। একের পর এক হাওরের ফসলহানিতে তখন দিশেহারা হয়ে পড়েন তাঁরা। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভালো। গত বছরে নিঃস্ব কৃষক এবার কষ্টে ফলানো ধান গোলায় তোলার স্বপ্ন দেখছেন। ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। বৈশাখ আসছে, আর তো মাত্র কটা দিন। বৈশাখ এলেই হাওরে হাওরে শুরু হবে ধান কাটার উৎসব।

কৃষক খলিল মিয়া জানান, এখন প্রতিদিন এক চক্কর হাওরে যান। ধানের কী অবস্থা, আর কয় দিন লাগবে পাকতে, সেটা নিজের চোখে দেখে আসেন। বড় কষ্টে এবার জমিতে ধান লাগিয়েছেন তিনি। বুকজুড়ে আশা, এবার ধান তুলতে পারবেন। গত বছরের ফসল হারানোর কষ্ট কেটে যাবে।

খলিল মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কাটখাল গ্রামে। গ্রামের পাশের হাওরে চার একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। গত বছরও একইভাবে ধান লাগিয়েছিলেন। কিন্তু সব ধান তলিয়ে যায়। গতবারের দেনা আছে। এবারও জমি আবাদ করতে গিয়ে ঋণ করতে হয়েছে। তবে ভালোয় ভালোয় ধান তুলতে পারলে সব ধারদেনা শোধ করা যাবে। খলিল মিয়া বলেন, ‘একটা বছর খুব কষ্টে কাটাইছি। খেয়ে না খেয়ে দিন গেছে।’

হাওরের পশ্চিম পাড়ে রাধানগর গ্রাম। গ্রামের পাশেই ধানমাড়াই ও শুকানোর জন্য কিছু জায়গা পরিষ্কার করছিলেন। স্থানীয়ভাবে ধানমাড়াই ও শুকানোর এই স্থানকে ‘খলা’ বলে।

কাকুয়া গ্রামের কৃষক সিরাজ উদ্দিন জানান, প্রতিবছর পাঁচ থেকে ছয়শ মণ ধান পান। গতবার কোনো ধান পাননি। গত বছরের হাওরের থইথই পানি দেখিয়ে কেঁদেছিলেন। তখন সব ধান ছিল পানির নিচে। ঠিক এক বছর পর আবার এই হাওর দেখান তিনি। হাওরে এখন পানি নেই, হাওরজুড়ে ফসলের সমারোহ। সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘ফসল গেলে কী যে কষ্ট এইটা বইলা বোঝাইতাম পারতাম না। এখন হাওরের দিকে ছাইয়া ছাইয়া দুই হাত তুইলা দোয়া করি, ইবার যেন ধানের কোনো ক্ষতি না হয়।’

এই আকাঙ্ক্ষা শুধু সিরাজ উদ্দিনের নয়, পুরো হাওরবাসীর। হাওরের ফসল রক্ষায় এবার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজও হয়েছে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। আমরা সবাই মিলে পরিশ্রম করেছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের পরিশ্রমের ফল দেবেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের প্রধান ফসল বোরো। জেলায় ছোট-বড় ১৪৪টি হাওরে বোরো ধানের আবাদ হয়। গত বছরের এপ্রিল মাসের অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার সব হাওরের বোরো ধান তলিয়ে যায়।

এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার ২ লাখ ২০ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার। এ বছর ২ লাখ ২২ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ২১ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন। এখন বিচ্ছিন্নভাবে কিছু হাওরে ধান কাটা হচ্ছে। পুরোদমে ধান কাটা শুরু হতে আরও এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে।

হাওরের ফসল রক্ষায় ১ হাজার ৪৯০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাঁধ হয়েছে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার। বাঁধের কাজ শেষ। এখন আনুষঙ্গিক কাজ হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক বললেন, ‘আমরা হাওরের ফসল রক্ষায় প্রয়োজনীয় বাঁধের কাজ করেছি। কৃষকেরা এবার হাসিমুখেই তাঁদের ধান গোলায় তুলতে পারবেন। আমরা কৃষকদের সেই হাসি দেখতে চাই।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরে এখন কৃষি ধানের আলোয় ভাসছে হাওর

আপডেট টাইম : ১২:৪২:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ মে ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওরজুড়ে এখন সবুজ ধানের বিপুল সমারোহ। ধানের আলোয় ভাসছে হাওর। সবুজ ধানের শিষ লালচে হতে শুরু করেছে। ধান পাকছে, আশা জাগছে কৃষকের মনে। ফলনও ভালো হয়েছে। কৃষকের চোখে-মুখে বইছে আনন্দের ঝিলিক।

কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় গত বছর এ সময় ছিল ফসলহারা কৃষকদের হাহাকার। একের পর এক হাওরের ফসলহানিতে তখন দিশেহারা হয়ে পড়েন তাঁরা। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভালো। গত বছরে নিঃস্ব কৃষক এবার কষ্টে ফলানো ধান গোলায় তোলার স্বপ্ন দেখছেন। ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। বৈশাখ আসছে, আর তো মাত্র কটা দিন। বৈশাখ এলেই হাওরে হাওরে শুরু হবে ধান কাটার উৎসব।

কৃষক খলিল মিয়া জানান, এখন প্রতিদিন এক চক্কর হাওরে যান। ধানের কী অবস্থা, আর কয় দিন লাগবে পাকতে, সেটা নিজের চোখে দেখে আসেন। বড় কষ্টে এবার জমিতে ধান লাগিয়েছেন তিনি। বুকজুড়ে আশা, এবার ধান তুলতে পারবেন। গত বছরের ফসল হারানোর কষ্ট কেটে যাবে।

খলিল মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কাটখাল গ্রামে। গ্রামের পাশের হাওরে চার একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। গত বছরও একইভাবে ধান লাগিয়েছিলেন। কিন্তু সব ধান তলিয়ে যায়। গতবারের দেনা আছে। এবারও জমি আবাদ করতে গিয়ে ঋণ করতে হয়েছে। তবে ভালোয় ভালোয় ধান তুলতে পারলে সব ধারদেনা শোধ করা যাবে। খলিল মিয়া বলেন, ‘একটা বছর খুব কষ্টে কাটাইছি। খেয়ে না খেয়ে দিন গেছে।’

হাওরের পশ্চিম পাড়ে রাধানগর গ্রাম। গ্রামের পাশেই ধানমাড়াই ও শুকানোর জন্য কিছু জায়গা পরিষ্কার করছিলেন। স্থানীয়ভাবে ধানমাড়াই ও শুকানোর এই স্থানকে ‘খলা’ বলে।

কাকুয়া গ্রামের কৃষক সিরাজ উদ্দিন জানান, প্রতিবছর পাঁচ থেকে ছয়শ মণ ধান পান। গতবার কোনো ধান পাননি। গত বছরের হাওরের থইথই পানি দেখিয়ে কেঁদেছিলেন। তখন সব ধান ছিল পানির নিচে। ঠিক এক বছর পর আবার এই হাওর দেখান তিনি। হাওরে এখন পানি নেই, হাওরজুড়ে ফসলের সমারোহ। সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘ফসল গেলে কী যে কষ্ট এইটা বইলা বোঝাইতাম পারতাম না। এখন হাওরের দিকে ছাইয়া ছাইয়া দুই হাত তুইলা দোয়া করি, ইবার যেন ধানের কোনো ক্ষতি না হয়।’

এই আকাঙ্ক্ষা শুধু সিরাজ উদ্দিনের নয়, পুরো হাওরবাসীর। হাওরের ফসল রক্ষায় এবার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজও হয়েছে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। আমরা সবাই মিলে পরিশ্রম করেছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের পরিশ্রমের ফল দেবেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের প্রধান ফসল বোরো। জেলায় ছোট-বড় ১৪৪টি হাওরে বোরো ধানের আবাদ হয়। গত বছরের এপ্রিল মাসের অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার সব হাওরের বোরো ধান তলিয়ে যায়।

এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার ২ লাখ ২০ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার। এ বছর ২ লাখ ২২ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ২১ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন। এখন বিচ্ছিন্নভাবে কিছু হাওরে ধান কাটা হচ্ছে। পুরোদমে ধান কাটা শুরু হতে আরও এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে।

হাওরের ফসল রক্ষায় ১ হাজার ৪৯০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাঁধ হয়েছে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার। বাঁধের কাজ শেষ। এখন আনুষঙ্গিক কাজ হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক বললেন, ‘আমরা হাওরের ফসল রক্ষায় প্রয়োজনীয় বাঁধের কাজ করেছি। কৃষকেরা এবার হাসিমুখেই তাঁদের ধান গোলায় তুলতে পারবেন। আমরা কৃষকদের সেই হাসি দেখতে চাই।’