হাওর বার্তা ডেস্কঃ উপকূলাঞ্চলের লোনাপানিতে এখন চলছে কৃষি বিপ্লবের প্রস্তুতি। ধীরে ধীরে হলেও কৃষিতে পরিপূর্ণ সাফল্য এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। চিংড়ি চাষপ্রবণ এলাকা বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে চিংড়ি চাষের পাশাপাশি চাষিরা ফিরে এসেছে ইরি-বোরো চাষে। আমনের বাম্পার ফলনের পর কৃষকের স্বপ্ন এখন ইরি-বোরো চাষের দিকে। আর হাইব্রিড সবজি চাষ খুলনাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।
লবণাক্ত এলাকা খুলনার গ্রামে গ্রামে চাষ হচ্ছে এ সবজি। অন্যদিকে এবার তরমুজের বাম্পার ফলনের ফলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। গতবছর চৈত্রের শুরু থেকে দফায় দফায় ঝড় ও বৃষ্টির কারণে চাষিরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু এবার তেমন বৃষ্টিপাতের দেখা না হওয়ায় সেই সমস্যা নেই।
তবে গত সপ্তাহে দু’দিন রাতে সামান্য বৃষ্টিপাত তরমুজচাষিদের জন্য সোনায় সোহাগা হয়েছে। তবে চাষিদের আর বৃষ্টিপাত কাম্য নয় আগামী কিছুদিন। আবহাওয়া আর ১৫ দিন অনুক‚লে থাকলে তরমুজ চাষে গত একযুগের রেকর্ড সৃষ্টি হবে বলে কৃষিবিদরা আশা করছেন।
সূত্রমতে, প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুক‚লে থাকায় ধান উৎপাদনে কৃষকের মুখে এখন নতুন স্বপ্নের এবং আনন্দের হাসি। যে কারণে খুলনা মেট্রোসহ জেলার ৯ উপজেলায় কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। এ ছাড়া খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা মিলে প্রায় এক লাখ হেক্টরের কাছাকাছি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।
বৃহত্তর খুলনাঞ্চল মূলত চিংড়ি চাষপ্রবণ এলাকা। উপক‚লীয় এই এলাকায় ব্যাপক হারে গত দুই যুগে চিংড়ি চাষ হয়। এ অঞ্চল থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার চিংড়ি মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশে রফতানি হয়। কিন্তু গত অর্ধযুগে চিংড়ি চাষে প্রতিক‚ল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
আইলা ও সিডরসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চিংড়ি চাষে ধস নামে। শুরু হয় চিংড়ি ঘেরে চিংড়ি চাষের সাথে সমন্বিত ধান চাষ। ছোট ছোট চিংড়ি ঘেরে গত ছয়-সাত বছর বোরো চাষে ব্যাপক সফলতা আসে। যে কারণে গত অর্ধযুগে চিংড়িচাষিরা আবার ঝুঁকে পড়েছেন এই ইরি-বোরো চাষে। এদিকে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে মৎস্য ঘেরের পাশের শত শত হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে।
রূপসা উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের কৃষক সেলিম শেখ জানান, আট বছর ধরে তিনি কৃষি কাজ করছেন। এ বছর তিন বিঘা জমিতে শসা ও করলা চাষ করেছেন। মোট ৮০০ ঝারে লাল তীর সিডের আলাভি গ্রিন জাতের শসা বীজ করে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এতে তার আয় হয়েছে এক লাখ টাকা। একদিন পর একদিন ১২ মণ করে শসা ও করলা তুলে বিক্রি করছেন।
এ ব্যাপারে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, রামপালে ২০০ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক হাইব্রিড সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ এলাকা লবণাক্ত এবং মৎস্য ঘেরে পূর্ণ। ঘেরের পাশেই সবজি চাষ হয়।
হাইব্রিড সবজি চাষে অল্প খরচে দ্বিগুণ লাভ সম্পর্কে লাল তীর সীড লিমিটেডের খুলনা এরিয়া ম্যানেজার মাহবুব-উল-হক বলেন, আলাভি গ্রিন আমাদের নতুন জাতের বীজ। উন্নতমানের এ জাতের জীব চাষিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কিন্তু হাইব্রিড সবজি চাষে সফলতা এলেও কৃষকরা সরকারি ঋণের সুবিধা না পাওয়া এবং এনজিওগুলোর চড়া সুদের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছেন না।
লভ্যাংশের বেশির ভাগ চলে যাচ্ছে এনজিওদের করা সমিতির সাপ্তাহিক কিস্তিতে। প্রতিদিন বা দু’দিন অন্তর কৃষকরা তাদের ক্ষেতের সবজি তোলেন। মাঠ পর্যায়ে বিক্রি করে খুব বেশি লাভ করতে পারেন না। কারণ কৃষকের কাছ থেকে ফঁড়িয়া কিনে আর ফঁড়িয়ার কাছ থেকে ব্যাপারীর হাতবদল হয়ে পাইকারি বাজারে যায়।
সূত্রমতে, বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের শস্যভান্ডার খ্যাত অঞ্চলগুলোতে এবারও তরমুজের বাম্পার ফলন এর আশা করছে কৃষকরা। চাষিদের মুখে তাই উচ্ছাসের হাসি। বিঘা প্রতি পাঁচ-ছয় হাজার টাকা বিনিয়োগ করে চাষিরা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে অন্যান্য বছরগুলোতে। এবার আশা আরো বেশি।
এ অঞ্চলের তরমুজ সহজতরভাবে রফতানি হয় খুলনার বাইরে কুয়াকাটা, যশোর, বেনাপোল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন ব্যবসাকেন্দ্রিক এলাকায়। তবে আগামীতে সম্ভাবনাময় এ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত দুর্যোগ মোকাবেলা করার মতো টেকনিক অবলম্বন করবে বলে জানিয়েছে এলাকার সংশ্লিষ্ট চাষিরা।