হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাঙামাটির লংগদুতে হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের মুখের হাসি ম্লান করে দিয়েছে অসময়ের এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সম্প্রতি আধা ঘণ্টাব্যাপী বৃষ্টির সঙ্গে ব্যাপক শিলাবর্ষণ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নেই ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ রেখে গেছে। ফসলের যেমন ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, তেমনি বাদ যায়নি ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটসহ নানা স্থাপনা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে তরমুজ ২ হেক্টর, আম ২ হেক্টর, লিচু ২ হেক্টর, মরিচ ৩ হেক্টর ও অন্যান্য সবজি ৪ হেক্টর।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার খোঁজখবর নিয়েছি। ক্ষয়ক্ষতির তালিকাসহ প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন জেলা পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছি। মৌসুমি ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এ বিষয়ে জেলা পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট সকলের এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।’
তামাক ছেড়ে গত পাঁচ বছর যাবৎ তরমুজের আবাদ করেন লংগদু সদর ইউনিয়নের ঝর্নাটিলা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন। এ বছরও ১২০০ তরমুজের থালা করেছিলেন, ফলন যা হয়েছিল লাভ হত দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। পাইকারের সাথে দরদামও ঠিক করেছিলেন। কিন্তু তরমুজ কাটার দুদিন আগের শিলাবৃষ্টি সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। প্রতিটি তরমুজের গায়ে শিলার ক্ষত স্পষ্ট।
আবুল হোসেনের তরমুজক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য নষ্ট তরমুজ। যেগুলো নষ্ট হয়নি এমন তরমুজের এখন আর বাজার মূল্য নেই। কাটার পরে দুদিনের বেশি টিকবে না বলে জানালেন আবুল হোসেন। এখন আবুল হোসেনের একটাই চাওয়া কৃষকের এমন দুঃসময়ে কৃষিবান্ধব সরকার যেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
তরমুজের পাশাপাশি আম ও লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে উপজেলার সর্বত্র। শিলাবৃষ্টির আগে ছোটবড় সব আম ও লিচুগাছে মুকুলের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তা এখন শুধুই স্মৃতি। গত ৩/৪ বছর ধরে আম ও লিচুর খুব একটা ভালো ফলন দেখা যায়নি। এ বছর সব গাছে ভরপুর ফুলে চাষিরা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা যেন এখন শুধুই কল্পনা।
উপজেলার ভাইট্টাপাড়া এলাকার তরুণ কৃষক মামুন হোসেন ১২০০ আম গাছের একটি বাগান দুই বছরের জন্য ১ লাখ কুড়ি হাজার টাকায় লিজ নিয়েছেন। বাগানে আম্রপালি, ক্ষীরসাপাত, লেংড়াসহ বিভিন্ন জাতের আমগাছ আছে। বর্তমানে বাগান নিয়ে হতাশায় থাকা এ নবীন কৃষক জানালেন, পুঁজি উঠাতেই কষ্ট হবে। শিলাবৃষ্টি সব শেষ করে দিয়েছে। আম ছাড়াও মামুন হোসেনের পেয়ারা ও পেঁপের দুটি বাগান আছে। সেসব বাগানেও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে আধঘণ্টার শিলাবৃষ্টি। সব মিলিয়ে প্রায় ৫-৬ লাখ টাকার লোকসানের বোঝা কৃষক মামুনের মাথার ওপর।
শুধু মামুন বা আবুল হোসেন নন, শত শত কৃষক তরমুজ, আম, লিচু ও শাক সবজির চাষ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
অন্যদিকে তামাক চাষিরাও ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। উপজেলার বামে আটারকছড়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক টিটু চাকমা এবারই প্রথম নিজের অনাবাদি সাড়ে ৮ কানি জমিতে তামাকের চাষ করেছেন। এক শিলাবৃষ্টিতে সব আশা ভরসা শেষ করে দিয়েছে। এ গ্রামের আরো ২২ জন কৃষক তামাক চাষ করে লোকসানের হিসাব কষছেন।
উপজেলা কৃষক সংগঠনের প্রবীণ নেতা নাজমুল হুদা আলম বলেন, ‘সেদিনের এমন শিলাবৃষ্টি অতীতে কখনো দেখিনি। কৃষক সহায় সম্বল সব উজাড় করে চাষাবাদ করেছেন। যা শিলাবৃষ্টি শেষ করে দিয়েছে। সাংগঠনিকভাবে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের জানানো হয়েছে। আশা করছি, কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের রক্ষায় এগিয়ে আসবে।