ঢাকা ০২:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৃথিবীর কোনো মানুষ অপরাধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না : রাষ্ট্রপতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মার্চ ২০১৮
  • ৩০১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, পৃথিবীর কোনো মানুষই অপরাধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। প্রতিকূল পরিবেশই তাদের অপরাধী করে তোলে। আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী বিবেচিত মানুষগুলোর নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সমাজে পুনর্বাসন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্রপতি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দীয় কারাগার কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে কারাসপ্তাহ-২০১৮ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি অনুষ্ঠান স্থলে  এসে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ আহম্মদ চৌধুরী, কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন তাকে স্বাগত জানান।

নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে আমাকেও গ্রেফতার করা হয়। আমি ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও ঢাকা কেন্দীয় কারাগারে বন্দি ছিলাম। কারাগারে কেবল অপরাধী নয়, রাজবন্দি হিসেবে অনেক নেতা-কর্মীকে জেলে কাটাতে হয়। আমাদের জাতির পিতাকেও রাজনৈতিক কারণে ১৪ বছরের বেশি সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছিল। তাই কারাবাস সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতাও কম নয়। জাতির দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় আমাদের জাতীয় চার নেতাকে ঢাকা কেন্দীয় কারাগারে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে প্রাণ দিতে হয়। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১৩টি কারাগার নতুনভাবে নির্মাণের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কারাগারের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। কারা প্রশাসনের দক্ষ নেতৃত্বের কারণে দেশের কারাগারগুলো ক্রমান্বয়ে সংশোধনাগারে পরিণত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মুক্তির পূর্বে পুনঃসামাজিকীকরণ এবং মুক্তির পর নতুন জীবন শুরুর প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশের অনুসরণে “উন্মুক্ত কারাগার” নির্মাণের পরিকল্পনা একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটি বাস্তবায়িত হলে বন্দিদের প্রাকমুক্তি পারিবারিক বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে এবং তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে যা পুনঃঅপরাধ রোধে সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস। তা ছাড়া দেশ ও জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা যেন কারাগারের ভেতরে বিশেষ কায়দায় অপরাধ কার্যক্রম চালাতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

কারা প্রশাসনের কেউ যাতে এসব অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারেও কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। এর আগে তিনি বেলুন উড়িয়ে কারা সপ্তাহ উদ্বোধন করেন এবং খোলা জীপে চড়ে কারামহাপরিদর্শকের সঙ্গে  প্যারেড  পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে বেস্ট প্রোডাক্টিভ জেল হিসেবে রাজশাহী কেন্দীয় কারাগারকে অ্যাওয়ার্ড (ক্রেস্ট) দেয়া হয়। সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন ওই ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। এ ছাড়া কাশিমপুর-২-এর ডেপুটি জেলার মাসুদ হোসেন, কুমিল্লার ডেপুটি জেলার শাহনাজ বেগম ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার তানিয়া জামানকে অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড এবং চট্টগ্রাম কেন্দীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস, বান্দরবান জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার রিজিয়া বেগম বেস্ট লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড, মহিলা কারারক্ষী তারানা পারভীনকে বেস্ট ইনস্ট্রাক্টরের পুরস্কার (ক্রেস্ট) দেয়া হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

পৃথিবীর কোনো মানুষ অপরাধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না : রাষ্ট্রপতি

আপডেট টাইম : ১০:৪৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মার্চ ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, পৃথিবীর কোনো মানুষই অপরাধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। প্রতিকূল পরিবেশই তাদের অপরাধী করে তোলে। আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী বিবেচিত মানুষগুলোর নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সমাজে পুনর্বাসন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্রপতি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দীয় কারাগার কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে কারাসপ্তাহ-২০১৮ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি অনুষ্ঠান স্থলে  এসে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ আহম্মদ চৌধুরী, কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন তাকে স্বাগত জানান।

নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে আমাকেও গ্রেফতার করা হয়। আমি ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও ঢাকা কেন্দীয় কারাগারে বন্দি ছিলাম। কারাগারে কেবল অপরাধী নয়, রাজবন্দি হিসেবে অনেক নেতা-কর্মীকে জেলে কাটাতে হয়। আমাদের জাতির পিতাকেও রাজনৈতিক কারণে ১৪ বছরের বেশি সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছিল। তাই কারাবাস সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতাও কম নয়। জাতির দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় আমাদের জাতীয় চার নেতাকে ঢাকা কেন্দীয় কারাগারে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে প্রাণ দিতে হয়। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১৩টি কারাগার নতুনভাবে নির্মাণের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কারাগারের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। কারা প্রশাসনের দক্ষ নেতৃত্বের কারণে দেশের কারাগারগুলো ক্রমান্বয়ে সংশোধনাগারে পরিণত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মুক্তির পূর্বে পুনঃসামাজিকীকরণ এবং মুক্তির পর নতুন জীবন শুরুর প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশের অনুসরণে “উন্মুক্ত কারাগার” নির্মাণের পরিকল্পনা একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটি বাস্তবায়িত হলে বন্দিদের প্রাকমুক্তি পারিবারিক বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে এবং তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে যা পুনঃঅপরাধ রোধে সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস। তা ছাড়া দেশ ও জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা যেন কারাগারের ভেতরে বিশেষ কায়দায় অপরাধ কার্যক্রম চালাতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

কারা প্রশাসনের কেউ যাতে এসব অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারেও কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। এর আগে তিনি বেলুন উড়িয়ে কারা সপ্তাহ উদ্বোধন করেন এবং খোলা জীপে চড়ে কারামহাপরিদর্শকের সঙ্গে  প্যারেড  পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে বেস্ট প্রোডাক্টিভ জেল হিসেবে রাজশাহী কেন্দীয় কারাগারকে অ্যাওয়ার্ড (ক্রেস্ট) দেয়া হয়। সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন ওই ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। এ ছাড়া কাশিমপুর-২-এর ডেপুটি জেলার মাসুদ হোসেন, কুমিল্লার ডেপুটি জেলার শাহনাজ বেগম ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার তানিয়া জামানকে অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড এবং চট্টগ্রাম কেন্দীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস, বান্দরবান জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার রিজিয়া বেগম বেস্ট লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড, মহিলা কারারক্ষী তারানা পারভীনকে বেস্ট ইনস্ট্রাক্টরের পুরস্কার (ক্রেস্ট) দেয়া হয়েছে।