ঢাকা ১২:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তামাকের আবাদ কমেছে নীলফামারীতে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০১:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মার্চ ২০১৮
  • ৪১৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ লাভ বেশি হওয়ায় তামাক আবাদ করছেন নীলফামারীর কৃষকরা। তবে তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনে দিনে দিনে আবাদ অনেক কমে এসেছে। সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের হাতিবান্ধা গ্রামের তামাক চাষী আবু জাহেদ আলী জানান, এবার তিনি সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। তবে আগামীতে আবাদ আরো কমিয়ে দেবেন বলে জানান তিনি।

সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম জানান, এবার তিনি তামাক করেছেন আড়াই বিঘা জমিতে।

Related image

তিনি জানান, ধান আবাদ করে লাভ বেশি হয় না। যার কারণে তামাক আবাদ করা হয়। তবে গতবার ৪বিঘা জমিতে করলেও এবার কম জমিতে আবাদ করেছেন বলে জানান তিনি।

কৃষক সুলতান আলী জানান, তিনি গতবার তামাক আবাদ করলেও এবার করেননি। তাই এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন।

নীলফামারীর টুপামারী, রামনগরেই নয় পলাশবাড়ি, খোকশাবাড়ি, লক্ষ্মীচাপ, চওড়া বড়গাছা, কুন্দপুকুর, সংগলশী, সোনারায়, ডোমার উপজেলার হরিণচড়া, সোনারায়, বোড়াগাড়ি, পাঙ্গামটকপুর, জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি, টেঙ্গনমারী, খুটামারা, কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই, পুটিমারী, বড়ভিটা, রণচন্ডি, গাড়াগ্রাম, সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি, খাতামধুপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে তামাক করছেন চাষীরা।

স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি বিভাগের পরামর্শ এবং সচেতনতা তৈরি হওয়ায় দিন দিন তামাক আবাদের পরিমাণ কমছে। তবে লাভ বেশি হওয়ায় অনেক চাষী এখনো তামাক আবাদ করছেন।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় মোট আবাদী জমির পরিমাণ ১ লাখ ২৪ হাজার ৯২২ হেক্টর। এর মধ্যে চলতি বছরে ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে তামাক।

Related image

এর আগে ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর, ২০১৬ সালে ৩ হাজার ৯৭০ হেক্টর, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ৩৮৫ হেক্টর ও ২০১৪ সালে ৪ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে তামাক আবাদ হয়।

নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিব আবেদীন হিরু জানান, তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার জন্য কৃষকদের সব সময়ই পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা, সরিষা, মুগডালসহ বিভিন্ন শষ্য করার উৎসাহ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। এগুলোতে লাভও বেশি।

তিনি জানান, কৃষকরা তামাক চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে দিন দিন। তাই আগের মত যেখানে সেখানে আর তামাক ক্ষেত চোখে পড়ে না।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তামাকের চারা রোপণ থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত এমনকি বিক্রি করা পর্যন্ত তামাকের ক্ষতিকর গন্ধ গ্রহণ করতে হয় মানুষকে। এছাড়া চর্ম রোগ, এ্যাজমা, নাকের ভেতরে প্রদাহ তৈরি হয় এর ফলে।

নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আসাদ আলম জানান, তামাকের ফলে নাক, মুখ, হাত এবং ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে মানুষ মৃত্যুর দিকে ধাপিত হয়।

Image result for তামাকের ছবি

জানতে চাইলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সিভিল সার্জন ডা. রণজিৎ কুমার বর্মণ জানান, তামাক গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তামাকের নিকোটিন শ্বাসনালীর ক্ষতি করে। যার ফলে শ্বাসপ্রশাস নিতে কষ্ট হয়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তিনি বলেন, তাদের মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা তামাকের কুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালান। তামাক আবাদে নিরুৎসাহিত করতে কৃষকদেরও পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

এব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারীর উপ-পরিচালক আবুল কাশেম আযাদ জানান, দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তামাক চাষে কৃষকরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

তামাকের আবাদ কমেছে নীলফামারীতে

আপডেট টাইম : ০৫:০১:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মার্চ ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ লাভ বেশি হওয়ায় তামাক আবাদ করছেন নীলফামারীর কৃষকরা। তবে তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনে দিনে দিনে আবাদ অনেক কমে এসেছে। সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের হাতিবান্ধা গ্রামের তামাক চাষী আবু জাহেদ আলী জানান, এবার তিনি সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। তবে আগামীতে আবাদ আরো কমিয়ে দেবেন বলে জানান তিনি।

সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম জানান, এবার তিনি তামাক করেছেন আড়াই বিঘা জমিতে।

Related image

তিনি জানান, ধান আবাদ করে লাভ বেশি হয় না। যার কারণে তামাক আবাদ করা হয়। তবে গতবার ৪বিঘা জমিতে করলেও এবার কম জমিতে আবাদ করেছেন বলে জানান তিনি।

কৃষক সুলতান আলী জানান, তিনি গতবার তামাক আবাদ করলেও এবার করেননি। তাই এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন।

নীলফামারীর টুপামারী, রামনগরেই নয় পলাশবাড়ি, খোকশাবাড়ি, লক্ষ্মীচাপ, চওড়া বড়গাছা, কুন্দপুকুর, সংগলশী, সোনারায়, ডোমার উপজেলার হরিণচড়া, সোনারায়, বোড়াগাড়ি, পাঙ্গামটকপুর, জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি, টেঙ্গনমারী, খুটামারা, কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই, পুটিমারী, বড়ভিটা, রণচন্ডি, গাড়াগ্রাম, সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি, খাতামধুপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে তামাক করছেন চাষীরা।

স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি বিভাগের পরামর্শ এবং সচেতনতা তৈরি হওয়ায় দিন দিন তামাক আবাদের পরিমাণ কমছে। তবে লাভ বেশি হওয়ায় অনেক চাষী এখনো তামাক আবাদ করছেন।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় মোট আবাদী জমির পরিমাণ ১ লাখ ২৪ হাজার ৯২২ হেক্টর। এর মধ্যে চলতি বছরে ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে তামাক।

Related image

এর আগে ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর, ২০১৬ সালে ৩ হাজার ৯৭০ হেক্টর, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ৩৮৫ হেক্টর ও ২০১৪ সালে ৪ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে তামাক আবাদ হয়।

নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিব আবেদীন হিরু জানান, তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার জন্য কৃষকদের সব সময়ই পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা, সরিষা, মুগডালসহ বিভিন্ন শষ্য করার উৎসাহ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। এগুলোতে লাভও বেশি।

তিনি জানান, কৃষকরা তামাক চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে দিন দিন। তাই আগের মত যেখানে সেখানে আর তামাক ক্ষেত চোখে পড়ে না।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তামাকের চারা রোপণ থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত এমনকি বিক্রি করা পর্যন্ত তামাকের ক্ষতিকর গন্ধ গ্রহণ করতে হয় মানুষকে। এছাড়া চর্ম রোগ, এ্যাজমা, নাকের ভেতরে প্রদাহ তৈরি হয় এর ফলে।

নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আসাদ আলম জানান, তামাকের ফলে নাক, মুখ, হাত এবং ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে মানুষ মৃত্যুর দিকে ধাপিত হয়।

Image result for তামাকের ছবি

জানতে চাইলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সিভিল সার্জন ডা. রণজিৎ কুমার বর্মণ জানান, তামাক গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তামাকের নিকোটিন শ্বাসনালীর ক্ষতি করে। যার ফলে শ্বাসপ্রশাস নিতে কষ্ট হয়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তিনি বলেন, তাদের মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা তামাকের কুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালান। তামাক আবাদে নিরুৎসাহিত করতে কৃষকদেরও পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

এব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারীর উপ-পরিচালক আবুল কাশেম আযাদ জানান, দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তামাক চাষে কৃষকরা।