হাওর বার্তা ডেস্কঃ রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে গেছে। চলতি বোরো মৌসুমে সেচ দিতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষকরা। জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প চালু থাকলেও আমরুলবাড়ীতে তা স্থাপন করা হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পানির স্তর স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত পানির স্তর নিচে নেমে যায়। বিশেষ করে বোরো মৌসুম শুরু হলে পানির স্তর স্বাভাবিক থাকে না। এতে কৃষকদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। এ সময় হস্তচালিত নলকূপ থেকে স্বাভাবিক পানি ওঠে না। ওই সময় পানির চাহিদা পূরণ করতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প থেকে সেচ সুবিধা দেওয়া হয়। এর মধ্যে উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৬৮টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এলাকা আমরুলবাড়ী ও রামনাথপুর এ থেকে বাদ পড়ে গেছে। এসব এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের দাবি জানানো হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বরেন্দ্র এলাকার সুবিধাবঞ্চিত অন্তত ১০টি গ্রামে চলতি মৌসুমে শ্যালো মেশিন ও হস্তচালিত টিউবওয়েল দিয়ে পানি ওঠে না। ফলে কৃষকরা তাদের বোরোক্ষেত রক্ষায় সেচকাজ চালাতে ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত মাটি গর্ত করে সেচ পাম্প স্থাপন করে। কিন্তু কোথাও কোথাও এ পদ্ধতি অবলম্বন করে কাজ হচ্ছে না। মাটি খুঁড়ে স্থাপন করা মেশিন বিকট শব্দ করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের এমন অবর্ণনীয় চিত্র দেখা যায় মিরাপাড়া, সরকারপাড়া, আমরুলবাড়ী, পঞ্চায়েতপাড়া, রাধানগর ও মুকসিদপুরে। খাওয়ার পানি থেকে শুরু করে গৃহস্থালি কাজের জন্য সেচকাজে ব্যবহৃত শ্যালো মেশিনের পানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে মানুষজনকে।
গতকাল শনিবার আমরুলবাড়ী গিয়ে দেখা যায়, দিগন্তজোড়া সবুজ ফসলের মাঠে বোরোক্ষেতে সেচ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। ধানের ক্ষেত বাঁচাতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কৃষকরা ঝুঁকি নিয়ে গর্ত করে শ্যালো মেশিন স্থাপন করেছে। যারা ফসল বাঁচাতে ১০ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে গর্ত করে মেশিন স্থাপন করেছে শুধু তারাই জমিতে সেচ দিতে পারছে। আমরুলবাড়ী এলাকায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প ও পল্লী বিদ্যুতের সংযোগের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। রাত জেগে তারা বোরোক্ষেতে সেচ দিচ্ছে।
আমরুলবাড়ীর ভেকুয়ারপাতারের কৃষক নির্মল রায় (৫০) এবারে তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। কিন্তু সেচযন্ত্রের জন্য জ্বালানি খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এবারে পানির স্তর গতবারের চেয়ে আরো নিচে নামি গেইছে। গর্ত খুঁড়ি মেশিন বসানোর পরও পানি ওঠোছে না। তার ওপর ডিজেল কিনতে হচ্ছে ৬৭ টাকা লিটারে। এই এলাকায় বরেন্দ্র প্রকল্প থাকলে আমাদের এই সমস্যা থাকত না।’
একই এলাকার পঞ্চায়েতপাড়ার কৃষক শামসুল হক (৪৭) বলেন, ‘প্রত্যেক বছর বোরো ক্ষ্যাতোত বড় করি গর্ত খুঁড়ি মেশিন বসাতে হয়। তা না হলে পানি অ্যাকনাও (সামান্য) বাইর হয় না। অ্যাতে হামার সমস্যা হয়। অনেক সময় মেশিন গরম হয়ে যায়। তার ওপর অন্ধকার রাইতোত গর্তোত ওঠানামা করতে ভয় নাগে।’
ওই এলাকার গুদামপাড়ার কৃষক দিজেন্দ্র নাথ রায় (৭০) বলেন, ‘এবারে পাঁচ বিঘা জমি আবাদ কইরবার যায়া বিপদোত পড়ি গেছি। ভালোভাবে ধানোত পানি দিবার পারুছি না। কারণ মই দিয়া নিচোত (গর্তে) নাইমবার (নামতে হয়) নাগে।’ তিনি আরো বলেন, ‘খরা হইলে পানির লেয়ার আরো নিচোত নামি যায়। অ্যাতে ফসল বাঁচাইতে হামাক হিমশিম খাবার নাগে।’
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের (বিএমডিএ) সহকারী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে গভীর নলকূপ স্থাপনপ্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তে অনুমতি পাওয়া গেলে চাহিদা অনুয়ায়ী ওই সব এলাকায় নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।
বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবার রহমান বলেন, ‘এটি প্রাকৃতিক সমস্যা। খরা মৌসুম শুরু হলে ভারত থেকে বয়ে আসা নদ-নদীর পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে নদীগুলো শুকিয়ে যায়। যার প্রভাবে এ অঞ্চলে পানির স্বাভাবিক স্তর নেমে যায়। এ মুহূর্তে কৃষকদের বোরোক্ষেত পানিতে ডুবিয়ে না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। একবার পানি দেওয়ার পর ক্ষেত শুকানোর পর আবার সেচ দিতে বলা হয়। যাতে পানির ব্যবহার স্বাভাবিক থাকে।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ