ঢাকা ১২:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জেল থেকেই হাজিরা চলবে খালেদা জিয়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:১৩:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • ৩১০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা টাকা আত্মসাতের দায়ে দণ্ডিত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাবন্দী। তার বিরুদ্ধে থাকা আরও ৩৫ মামলার মধ্যে ১৯টির বিচার কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য রয়েছে। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য রয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারি। এ ছাড়া গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ঠিক করা হয়েছে ৪ মার্চ। ধার্য তারিখের আগে মুক্তি না পেলে এসব মামলায় হাজিরা দিতে কারাগার থেকেই আদালতে যেতে হবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। আইনজ্ঞরা বলেন, আসামি জামিনে থাকলে তিনি নিজ দায়িত্বে আদালতে হাজির হবেন।

আর কারাগারে থাকলে তাকে আদালতে হাজির করার দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষের। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার শুনানির জন্য খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে আদালতের নির্দেশনা এরই মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে। উপ-কারা মহাপরিদর্শক মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, শাহবাগ থানার একটি মামলায় ১৮ ফেব্রুয়ারি ও তেজগাঁও থানার আরেক মামলায় ৪ মার্চ খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করাতে আদালত থেকে চিঠি এসেছে। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের সার্টিফায়েড কপি না পাওয়ায় গতকালও আপিল করতে পারেননি খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। আজ রায়ের কপি পাওয়ার আশা করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ছাড়াও নাইকো দুর্নীতি, গ্যাটকো দুর্নীতি, বড়পুকুরিয়া খনি দুর্নীতির মামলাগুলো দায়ের হয়েছিল। খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী। এ মামলা দায়েরের পরদিনই খালেদাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরের বছর ১৩ মে খালেদাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালতে মামলাটির অভিযোগ গঠনের শুনানি চলছে। গত ২১ জানুয়ারি বিচারক ৪ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন। আর বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলারও অভিযোগ গঠনের শুনানি চলছে ঢাকার দুই নম্বর বিশেষ জজ হোসনে আরা বেগমের আদালতে। ১৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেছেন বিচারক। এ মামলাটি খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুদক দায়ের করে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ওই বছরের ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয় আদালতে।

জানতে চাইলে সাবেক আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ হাওর বার্তাকে বলেন, কোনো মামলা যদি অভিযোগ গঠন পর্যায়ে থাকে তাহলে আসামির উপস্থিতি ছাড়া সেই মামলার বিচার এগিয়ে নেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আসামি কারাগারে থাকলে নির্ধারিত তারিখে জেল কর্তৃপক্ষ আসামিকে আদালতে হাজির করবে। তবে আসামিকে আদালতে হাজির করতে যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে রাষ্ট্রপক্ষ বা আসামিপক্ষ; যে কোনো এক পক্ষ আদালতে সময় আবেদন করলেও সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক হাওর বার্তাকে বলেন, আসামি কারাগারে থাকলেও যদি তার বিরুদ্ধে কোনো মামলায় শুনানির তারিখ পড়ে তাহলে তাকে আদালতে হাজির করতে হবে। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী আসামি যদি জামিনে থাকেন তাহলে তিনি নিজ দায়িত্বে ধার্য তারিখে হাজির হবেন। যদি উপস্থিত না হন তাহলে আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারে। আর আসামি যদি কারাগারে থাকেন সে ক্ষেত্রে হাজিরের নোটিস কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ আসামিকে আদালতে হাজির করবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য হবে বলে জানান তিনি।

বিচারাধীন আরও ১৯ মামলা : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও ৩৫টি মামলা রয়েছে; যার মধ্যে দুর্নীতি, গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, নাশকতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১৯টি মামলার বিচারকাজ চলছে। এ মামলাগুলোর মধ্যে ১৪টি শুনানির জন্য পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে পাঠানো হয়েছে ৪ জানুয়ারি। এই এজলাসেই বিচার শেষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারও শেষ পর্যায়ে রয়েছে এই এজলাসেই। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেছেন বিচারক। মামলার নথিসূত্রে দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এখন যে ৩৫টি মামলা রয়েছে, এর মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে আছে ৪টি। সেগুলো হলো জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা। ৪টি মামলা-ই সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে করা। বাকি ৩০টি মামলা হয়েছে ২০১৪ সালের পর। এসব মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ৩০টির মধ্যে ২৫টি মামলা-ই হয়েছে ঢাকায়। ৩টি কুমিল্লায় এবং পঞ্চগড় ও নড়াইলে ১টি করে মামলা দয়ের হয়েছে।

এর মধ্যে নাশকতা ও বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগে কুমিল্লার আদালতে থাকা ২টি মামলার মধ্যে ১টি উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে। অন্যটিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানহানির অভিযোগে করা একটি মামলা বর্তমানে স্থগিত। নড়াইলে মানহানির অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মানচিত্র ও জাতীয় পতাকাকে অবমাননার অভিযোগে ঢাকার আদালতে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর মানহানির মামলা করেন ‘জননেত্রী পরিষদের’ সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। এ মামলায় ১২ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এটি বিশেষ এজলাসে বিচারাধীন আছে। ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট সাংবাদিক গাজী জহিরুল ইসলাম মামলা করেন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি পরোয়ানা জারিসংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ১টি মামলা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী। এ মামলাটি অভিযোগ গঠন পর্যায়ে এসে হাই কোর্টের আদেশে বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। ব্যাংকঋণ খেলাপের অভিযোগে সোনালী ব্যাংক খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মামলা করে। আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে পক্ষ করা হয়। মামলাটি ঢাকার অর্থঋণ আদালতে সাক্ষ্য পর্যায়ে বিচারাধীন আছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপিসহ ২০ দলের ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় বাসে আগুন, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, মানুষ হত্যাসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় ঢাকায় করা ১০টি মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এসব মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানায় ২টি ও দারুসসালাম থানায় ৮টি মামলা রয়েছে। এই ১০টি মামলার মধ্যে ৮টি ঢাকার বিশেষ আদালতে এবং অন্য ২টি মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি পর্যায়ে রয়েছে।

২০১৫ সালে গুলশানে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে পেট্রলবোমা হামলার অভিযোগে করা ১টি মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা আছে।

রায়ের কপির অপেক্ষায় খালেদার আইনজীবীরা : খালেদা জিয়ার সই নেওয়ার জন্য কারাগারে ওকালতনামা পৌঁছে দিলেও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের কপি না পাওয়ায় গতকালও আপিল করতে পারেননি তার আইনজীবীরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানান, রায়ের কপি পেলে তারা বুধ বা বৃহস্পতিবার আপিল জমা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সানাউল্লাহ মিয়াসহ চার আইনজীবী কারাগারের সামনে যান। পরে সেখান থেকে যান কারা অধিদফতরে। সে সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘কিছু কাগজপত্রে ম্যাডামের সই লাগবে। এ কাজেই এসেছি। বেরিয়ে এসে আপনাদের সঙ্গে কথা বলব।’ প্রায় ৪৫ মিনিট পর তারা কারা অধিদফতর থেকে কারাগারের মূল ফটকে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি না পাওয়ায় বিকাল ৩টার দিকে তিনি ফিরে যান। সানাউল্লাহ মিয়া সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামীকাল এ মামলার রায়ের কপি পেলে আমরা জামিনের জন্য আবেদন করব।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জেল থেকেই হাজিরা চলবে খালেদা জিয়া

আপডেট টাইম : ০৩:১৩:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা টাকা আত্মসাতের দায়ে দণ্ডিত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাবন্দী। তার বিরুদ্ধে থাকা আরও ৩৫ মামলার মধ্যে ১৯টির বিচার কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য রয়েছে। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য রয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারি। এ ছাড়া গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ঠিক করা হয়েছে ৪ মার্চ। ধার্য তারিখের আগে মুক্তি না পেলে এসব মামলায় হাজিরা দিতে কারাগার থেকেই আদালতে যেতে হবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। আইনজ্ঞরা বলেন, আসামি জামিনে থাকলে তিনি নিজ দায়িত্বে আদালতে হাজির হবেন।

আর কারাগারে থাকলে তাকে আদালতে হাজির করার দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষের। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার শুনানির জন্য খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে আদালতের নির্দেশনা এরই মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে। উপ-কারা মহাপরিদর্শক মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, শাহবাগ থানার একটি মামলায় ১৮ ফেব্রুয়ারি ও তেজগাঁও থানার আরেক মামলায় ৪ মার্চ খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করাতে আদালত থেকে চিঠি এসেছে। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের সার্টিফায়েড কপি না পাওয়ায় গতকালও আপিল করতে পারেননি খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। আজ রায়ের কপি পাওয়ার আশা করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ছাড়াও নাইকো দুর্নীতি, গ্যাটকো দুর্নীতি, বড়পুকুরিয়া খনি দুর্নীতির মামলাগুলো দায়ের হয়েছিল। খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী। এ মামলা দায়েরের পরদিনই খালেদাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরের বছর ১৩ মে খালেদাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালতে মামলাটির অভিযোগ গঠনের শুনানি চলছে। গত ২১ জানুয়ারি বিচারক ৪ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন। আর বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলারও অভিযোগ গঠনের শুনানি চলছে ঢাকার দুই নম্বর বিশেষ জজ হোসনে আরা বেগমের আদালতে। ১৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেছেন বিচারক। এ মামলাটি খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুদক দায়ের করে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ওই বছরের ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয় আদালতে।

জানতে চাইলে সাবেক আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ হাওর বার্তাকে বলেন, কোনো মামলা যদি অভিযোগ গঠন পর্যায়ে থাকে তাহলে আসামির উপস্থিতি ছাড়া সেই মামলার বিচার এগিয়ে নেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আসামি কারাগারে থাকলে নির্ধারিত তারিখে জেল কর্তৃপক্ষ আসামিকে আদালতে হাজির করবে। তবে আসামিকে আদালতে হাজির করতে যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে রাষ্ট্রপক্ষ বা আসামিপক্ষ; যে কোনো এক পক্ষ আদালতে সময় আবেদন করলেও সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক হাওর বার্তাকে বলেন, আসামি কারাগারে থাকলেও যদি তার বিরুদ্ধে কোনো মামলায় শুনানির তারিখ পড়ে তাহলে তাকে আদালতে হাজির করতে হবে। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী আসামি যদি জামিনে থাকেন তাহলে তিনি নিজ দায়িত্বে ধার্য তারিখে হাজির হবেন। যদি উপস্থিত না হন তাহলে আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারে। আর আসামি যদি কারাগারে থাকেন সে ক্ষেত্রে হাজিরের নোটিস কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ আসামিকে আদালতে হাজির করবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য হবে বলে জানান তিনি।

বিচারাধীন আরও ১৯ মামলা : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও ৩৫টি মামলা রয়েছে; যার মধ্যে দুর্নীতি, গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, নাশকতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১৯টি মামলার বিচারকাজ চলছে। এ মামলাগুলোর মধ্যে ১৪টি শুনানির জন্য পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে পাঠানো হয়েছে ৪ জানুয়ারি। এই এজলাসেই বিচার শেষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারও শেষ পর্যায়ে রয়েছে এই এজলাসেই। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেছেন বিচারক। মামলার নথিসূত্রে দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এখন যে ৩৫টি মামলা রয়েছে, এর মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে আছে ৪টি। সেগুলো হলো জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা। ৪টি মামলা-ই সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে করা। বাকি ৩০টি মামলা হয়েছে ২০১৪ সালের পর। এসব মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ৩০টির মধ্যে ২৫টি মামলা-ই হয়েছে ঢাকায়। ৩টি কুমিল্লায় এবং পঞ্চগড় ও নড়াইলে ১টি করে মামলা দয়ের হয়েছে।

এর মধ্যে নাশকতা ও বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগে কুমিল্লার আদালতে থাকা ২টি মামলার মধ্যে ১টি উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে। অন্যটিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানহানির অভিযোগে করা একটি মামলা বর্তমানে স্থগিত। নড়াইলে মানহানির অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মানচিত্র ও জাতীয় পতাকাকে অবমাননার অভিযোগে ঢাকার আদালতে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর মানহানির মামলা করেন ‘জননেত্রী পরিষদের’ সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। এ মামলায় ১২ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এটি বিশেষ এজলাসে বিচারাধীন আছে। ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট সাংবাদিক গাজী জহিরুল ইসলাম মামলা করেন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি পরোয়ানা জারিসংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ১টি মামলা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী। এ মামলাটি অভিযোগ গঠন পর্যায়ে এসে হাই কোর্টের আদেশে বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। ব্যাংকঋণ খেলাপের অভিযোগে সোনালী ব্যাংক খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মামলা করে। আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে পক্ষ করা হয়। মামলাটি ঢাকার অর্থঋণ আদালতে সাক্ষ্য পর্যায়ে বিচারাধীন আছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপিসহ ২০ দলের ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় বাসে আগুন, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, মানুষ হত্যাসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় ঢাকায় করা ১০টি মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এসব মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানায় ২টি ও দারুসসালাম থানায় ৮টি মামলা রয়েছে। এই ১০টি মামলার মধ্যে ৮টি ঢাকার বিশেষ আদালতে এবং অন্য ২টি মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি পর্যায়ে রয়েছে।

২০১৫ সালে গুলশানে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে পেট্রলবোমা হামলার অভিযোগে করা ১টি মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা আছে।

রায়ের কপির অপেক্ষায় খালেদার আইনজীবীরা : খালেদা জিয়ার সই নেওয়ার জন্য কারাগারে ওকালতনামা পৌঁছে দিলেও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের কপি না পাওয়ায় গতকালও আপিল করতে পারেননি তার আইনজীবীরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানান, রায়ের কপি পেলে তারা বুধ বা বৃহস্পতিবার আপিল জমা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সানাউল্লাহ মিয়াসহ চার আইনজীবী কারাগারের সামনে যান। পরে সেখান থেকে যান কারা অধিদফতরে। সে সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘কিছু কাগজপত্রে ম্যাডামের সই লাগবে। এ কাজেই এসেছি। বেরিয়ে এসে আপনাদের সঙ্গে কথা বলব।’ প্রায় ৪৫ মিনিট পর তারা কারা অধিদফতর থেকে কারাগারের মূল ফটকে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি না পাওয়ায় বিকাল ৩টার দিকে তিনি ফিরে যান। সানাউল্লাহ মিয়া সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামীকাল এ মামলার রায়ের কপি পেলে আমরা জামিনের জন্য আবেদন করব।’