ঢাকা ০৭:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:০৬:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • ৪৪০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিরাজগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলে যমুনার চরসহ চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এবার শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। এর মাধ্যমে সরাসরি লাভবান হচ্ছেন চার শতাধিক চাষি। শীত সামনে রেখে লাউ, শিম, টমেটো, করলা, মুলা, পালংশাক, ফুলকপি, পাতাকপি, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক, বেগুন ইত্যাদির আবাদ করেছেন চাষিরা। তবে সবচেয়ে ভালো ফলন হয়েছে লাউ ও টমেটো। লাউয়ের বাম্পার ফলন যমুনার চরবাসীকে অবাক করে দিয়েছে।

চৌহালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর যমুনার চরাঞ্চলসহ উপজেলায় প্রায় ৪৬৫ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩১৫ মণ সবজি ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় কোটি টাকা।

জানা গেছে, যমুনার চরাঞ্চল অধ্যুষিত চৌহালী সদর, ঘোরজান, রেহাইকাওলিয়া, মুরাদপুর, নওহাটা, বয়ালকান্দি, চরপাচুরিয়া, বিনানই, বাবলাতলা, চরছোলিমাবাদ, কোদালিয়া, জ্যোতপাড়া, ওমারপুর, সোদিয়াচাদপুর, সহল, খাষপুকুরিয়া, খাষকাউলিয়াসহ অর্ধশতাধিক গ্রামে এবং উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে লাউ ও শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর সবচেয়ে বেশি লাউ ও টমেটো আবাদ করেছেন চরাঞ্চলের মানুষ।

চরের কৃষক হাসেম আলী, কুদ্দুছ, ইয়াকুব, রহম আলীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর যমুনার চরাঞ্চলে নদীভাঙন ও দফায় দফায় বন্যা হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টিও হয়েছে বারবার। যার কারণে সবজি চাষে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়েছে কৃষককে। বন্যার পানি এসে আউশ, আমন ও সবজি ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। এসব কারণে চরাঞ্চলের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েন। ওই সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের মধ্যে উপজেলা কৃষি অফিস ও এনজিও সংস্থার পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে শীতকালীন বিভিন্ন সবজির বীজ বিতরণ করা হয়। কৃষক পলিথিন, মাটির পাত্রে, ভাঙা পাত্রে বীজ বপনের ব্যবস্থা করেন, যাতে বন্যার পানি বা বৃষ্টিতে নষ্ট না হয়। বন্যার পানি সরতে সরতেই চারাগুলো বড় হয়ে যায় এবং দ্রুত ফল দিতে শুরু করে।

চৌহালীর সদরসহ সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ৩ শতাধিক কৃষক পরিবারে শীতকালীন সবজি চাষে সফলতা এসেছে। তারা এখন প্রতি বছরই শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহী। বিশেষ করে লাউ ও টমেটোর বাম্পার ফলন দেখে অনেকেই এখন সবজি চাষে আগ্রহী। অনেকেই আগামী বছর থেকে বাণিজ্যিকভিত্তিতে সবজি চাষের স্বপ্ন দেখছেন। এদিকে সবজির সরবরাহ বেশি থাকলেও দাম কমেনি।

সবজি চাষিরা নিজেদের পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সবজি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছেন।

চৌহালী সদর উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল রাজ্জাক সরকার জানান, এ বছর আমাদের এলাকায় সবজির ভালো আবাদ হয়েছে। সবজি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন এলাকার চাষিরা। অল্প পরিশ্রম ও খরচ কমে অধিক মুনাফা পাওয়ায় এলাকার অনেকেই সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিলে সবজি আবাদ এ এলাকার অর্থ উপার্জনের অন্যতম একটি মাধ্যম হতে পারে। উপজেলার কৃষকরা তাদের জীবনমান বদলে দিতে পারে।

এছাড়া উপজেলার ওমারপুর ইউনিয়নের আবদুল সালাম জানান, চলতি মৌসুমে অন্য সবজির সঙ্গে অধিকাংশ জমিতে লাউ চাষ করা হয়েছে। জমি তৈরি করে বীজ লাগানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই চারা গজিয়ে যায়। এরপর পরিচর্যা, পানি সার ও লাউয়ে লতা বিস্তারের জন্য মাচা দিলেই দেড় মাসে ফুল-ফল আসে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০টি করে লাউ সংগ্রহ করে তারা। প্রতিটি লাউ লাভজনকভাবে বিক্রি করা যাচ্ছে। লাউ বিক্রি চলবে আরও প্রায় দেড় মাস। তিনি আরও জানান, ৮০ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করতে তার খরচ হয়েছে মাত্র ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। এবার লাউ বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা মুনাফা করার আশা করছি। এ পর্যন্ত লাউ বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।

এ ব্যাপারে চৌহালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আঃ হাই জানান, এ উপজেলায় লাউ, টমেটোসহ ৪৬৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। এ চাষে সফলতা দেখে এরই মধ্যে অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবজি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ছোট আকারে সবজি চাষ প্রকল্প গ্রহণ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে

আপডেট টাইম : ০৯:০৬:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিরাজগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলে যমুনার চরসহ চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এবার শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। এর মাধ্যমে সরাসরি লাভবান হচ্ছেন চার শতাধিক চাষি। শীত সামনে রেখে লাউ, শিম, টমেটো, করলা, মুলা, পালংশাক, ফুলকপি, পাতাকপি, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক, বেগুন ইত্যাদির আবাদ করেছেন চাষিরা। তবে সবচেয়ে ভালো ফলন হয়েছে লাউ ও টমেটো। লাউয়ের বাম্পার ফলন যমুনার চরবাসীকে অবাক করে দিয়েছে।

চৌহালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর যমুনার চরাঞ্চলসহ উপজেলায় প্রায় ৪৬৫ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩১৫ মণ সবজি ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় কোটি টাকা।

জানা গেছে, যমুনার চরাঞ্চল অধ্যুষিত চৌহালী সদর, ঘোরজান, রেহাইকাওলিয়া, মুরাদপুর, নওহাটা, বয়ালকান্দি, চরপাচুরিয়া, বিনানই, বাবলাতলা, চরছোলিমাবাদ, কোদালিয়া, জ্যোতপাড়া, ওমারপুর, সোদিয়াচাদপুর, সহল, খাষপুকুরিয়া, খাষকাউলিয়াসহ অর্ধশতাধিক গ্রামে এবং উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে লাউ ও শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর সবচেয়ে বেশি লাউ ও টমেটো আবাদ করেছেন চরাঞ্চলের মানুষ।

চরের কৃষক হাসেম আলী, কুদ্দুছ, ইয়াকুব, রহম আলীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর যমুনার চরাঞ্চলে নদীভাঙন ও দফায় দফায় বন্যা হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টিও হয়েছে বারবার। যার কারণে সবজি চাষে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়েছে কৃষককে। বন্যার পানি এসে আউশ, আমন ও সবজি ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। এসব কারণে চরাঞ্চলের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েন। ওই সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের মধ্যে উপজেলা কৃষি অফিস ও এনজিও সংস্থার পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে শীতকালীন বিভিন্ন সবজির বীজ বিতরণ করা হয়। কৃষক পলিথিন, মাটির পাত্রে, ভাঙা পাত্রে বীজ বপনের ব্যবস্থা করেন, যাতে বন্যার পানি বা বৃষ্টিতে নষ্ট না হয়। বন্যার পানি সরতে সরতেই চারাগুলো বড় হয়ে যায় এবং দ্রুত ফল দিতে শুরু করে।

চৌহালীর সদরসহ সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ৩ শতাধিক কৃষক পরিবারে শীতকালীন সবজি চাষে সফলতা এসেছে। তারা এখন প্রতি বছরই শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহী। বিশেষ করে লাউ ও টমেটোর বাম্পার ফলন দেখে অনেকেই এখন সবজি চাষে আগ্রহী। অনেকেই আগামী বছর থেকে বাণিজ্যিকভিত্তিতে সবজি চাষের স্বপ্ন দেখছেন। এদিকে সবজির সরবরাহ বেশি থাকলেও দাম কমেনি।

সবজি চাষিরা নিজেদের পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সবজি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছেন।

চৌহালী সদর উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল রাজ্জাক সরকার জানান, এ বছর আমাদের এলাকায় সবজির ভালো আবাদ হয়েছে। সবজি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন এলাকার চাষিরা। অল্প পরিশ্রম ও খরচ কমে অধিক মুনাফা পাওয়ায় এলাকার অনেকেই সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিলে সবজি আবাদ এ এলাকার অর্থ উপার্জনের অন্যতম একটি মাধ্যম হতে পারে। উপজেলার কৃষকরা তাদের জীবনমান বদলে দিতে পারে।

এছাড়া উপজেলার ওমারপুর ইউনিয়নের আবদুল সালাম জানান, চলতি মৌসুমে অন্য সবজির সঙ্গে অধিকাংশ জমিতে লাউ চাষ করা হয়েছে। জমি তৈরি করে বীজ লাগানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই চারা গজিয়ে যায়। এরপর পরিচর্যা, পানি সার ও লাউয়ে লতা বিস্তারের জন্য মাচা দিলেই দেড় মাসে ফুল-ফল আসে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০টি করে লাউ সংগ্রহ করে তারা। প্রতিটি লাউ লাভজনকভাবে বিক্রি করা যাচ্ছে। লাউ বিক্রি চলবে আরও প্রায় দেড় মাস। তিনি আরও জানান, ৮০ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করতে তার খরচ হয়েছে মাত্র ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। এবার লাউ বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা মুনাফা করার আশা করছি। এ পর্যন্ত লাউ বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।

এ ব্যাপারে চৌহালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আঃ হাই জানান, এ উপজেলায় লাউ, টমেটোসহ ৪৬৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। এ চাষে সফলতা দেখে এরই মধ্যে অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবজি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ছোট আকারে সবজি চাষ প্রকল্প গ্রহণ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।