পঞ্চগড়ে দৃষ্টিনন্দন ফুলে ছেয়ে গেছে ঢেমশীর মাঠ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গোলাপী রংঙ্গের দৃষ্টি নন্দন ফুলে ছেয়ে গেছে ঢেমশী মাঠ। ঢেমশীর ইংরেজি নাম বাকহুয়িট। এ ফসলটি এক সময়ে এ অঞ্চলে বেশ চাষ হতো। কালের বিবর্তনে ঢেমশী হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এর নামও ভুলে যেতে বসেছে নতুন প্রজন্ম। সভ্যতার ক্রমাগত পরিবর্তন ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার অব্যাহত প্রচেষ্টা মানুষকে পেছনে তাকানো থেকে বিমুখ করে রেখেছে।

ঢেমশীর উপকারিতা সম্পর্কে কৃষিবিদদের গবেষণা শেষে বেরিয়ে এসেছে এর উপকারের নানা দিক। এটি অবগত হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অরগেনিক প্রডাক্ট এসোসিয়েশন কৃষকদের মাঝে নতুন করে ঢেমশী চাষে উদ্ধুদ্ধ করে।

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সামছুল হক জানান, পঞ্চগড় জেলায় এ বছর ৫ হেক্টর জমিতে ঢেমশীর চাষ হয়েছে। সাধারনত ঢেমশী চাষে সারের প্রয়োজন হয় না। বীজ বপনের সময় থেকে ৮০/৮৫ দিনের মধ্যে ঢেমশী কর্তন করা যায়। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে এ জেলায় ঢেমশীর চাষ সম্প্রসারণ করা সম্ভব বলে কৃষি কর্মকর্তা জানান।

জাপান এবং বিশ্বের অন্য দেশে ঢেমশী রাজকীয় খাবার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ঢেমশীর চাল জাপান ও সৌদি আরবে বাংলাদেশী টাকায় ৫১০ থেকে ৬ শ’ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ঢেমশী বিশ্বে এক ব্যতিক্রম খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ঢেমশীতে রয়েছে নানাধরনের উপকারিতা। হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস সহ মহিলাদের নানাবিধ রোগ প্রতিরোধে ঢেমশী এক অনন্য ওষুধ। ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, শাকসবজি এবং ফলের পুষ্টিকর উপাদান ঢেমশীর মধ্যে রয়েছে।

বিশ্বের প্রসিদ্ধ মধু উৎপাদিত হয় ঢেমশীর ফুল থেকে। ঢেমশীর বিদ্যমান চাষ হচ্ছে পোলান্ড,রোমানিয়া, জাপান, কোরিয়া, ফ্রান্স, ইন্ডিয়া এবং আমেরিকায়। কৃষি কর্মকর্তা সামছুল হক জানান, ঢেমশীর চাল ও মধু বিদেশে রফতানি করে প্রচুর ফরেন কারেন্সি আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।

ভোলায় সবজির বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
জেলায় চলতি শীত মৌসুমের সবজি’র বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত জমিতে আবাদ হওয়ায় কৃষকদের মুখেও হাসি ফুটেছে। এবছর সবজির দাম ভালো থাকায় কৃষকদের আগ্রহও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার ৭ উপজেলায় ৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গতকাল পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৬ হেক্টর জমি বেশি। আগামী মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আবাদ চলবে। তাই সামনের দিকে আবাদ আরো বাড়বে বলে কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়।

সূত্র আরো জানায়, খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ এ জেলায় প্রতিবছরই সবজির বাম্পার ফলনে টার্গেট অতিক্রম করে। বিগত বছরে জেলার ৭ উপজেলায় শীতকালিন সবজি উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৩ মে:টন। এবছর ১ লাখ ৬ হাজার ৬৪ টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃত্যুঞ্জয় তালুকদার বাসস’কে জানান, জেলায় মোট সবজি আবাদের মধ্যে সদর উপজেলায় হয়েছে ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে, দৌলতখানে ৪২৫ হেক্টর, বোরহানউদ্দিনে ১২০০ হেক্টর, তজুমুদ্দিনে ৪৫০ হেক্টর, লালমোহনে ৯৫০ হেক্টর,চরফ্যাসনে ২ হাজার ২৬০ হেক্টর ও মনপুরায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে গতকাল পর্যন্ত আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, এবছর সবজির পার হেক্টর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ মে:টন করে। সামনের দিনগুলোতে আরো আবাদের মাধ্যমে এবছর রেকর্ড পরিমান সবজি উৎপাদন হবে বলে তারা আশা করছেন।

সদর উপজেলার ধনীয়া ইউনিয়নের সবজি চাষি মোশারেফ হোসেন, আলী আহমেদ ও রহমান গাজী বলেন, তারা প্রত্যেকে এবছর প্রায় ১ একর জমিতে ফুল কপি, পালং শাক, লাল শাক ও বটবটির চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে ৪বার সবজি বিক্রি করেছেন। এখন পর্যন্ত সবজির বাজার দর ভালো থাকায় তাদের লাভ ভালো হচ্ছে। আরো ২ থেকে ৩ বার এখান থেকে সবজি বিক্রি করতে পারবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের বটতলা এলাকার চাষি আজাহার হাওলাদার বলেন, তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে সবজির চাষ করছেন। এবছর দেড় একর জমিতে লাউ, শিম, ফুলকপি’র চাষ করেছেন। এবারের মত ভালো দাম কোন বছর পাননি। এখন পর্যন্ত তার এক লাখ টাকার বেশি লাভ হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা বাসস’কে বলেন, শীতকালিন সবজির বর্তমান মাঠের অবস্থা ভালো রয়েছে। বিশেষ করে শিমের ফলন এবছর ব্যাপক হচ্ছে। বাজার দামও ভালো রয়েছে। এছাড়া কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা সকল সবজির রোগ-বালাই দমনে মাঠ পর্যবেক্ষণসহ সব ধরনের পরামর্শ সেবা দিয়ে আসছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর