ঢাকা ০১:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩১:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৬০৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকালের ভোরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষায় ১ হাজার ৮৮টি বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে চলতি বছর ২৮ ফেব্রয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু গত পরশু পর্যন্ত মাত্র একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। বাঁধ বিপর্যয়ে গত বছর শতভাগ ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর এবারো বাঁধ নির্মাণে গরিমসি তাই হওরবাসীর উদ্বেগের কারণ হওয়াই স্বাভাবিক।

সুনামগঞ্জের ৩৬টি বৃহৎ হাওরসহ জেলার ১৫৪টি হাওররক্ষা বাঁধের কাজ নিয়ে এবারো লেজেগোবরে অবস্থা হওয়ার খবর জানানো হয়েছে পত্রিকার উল্লিখিত রিপোর্টে। নীতিমালা অনুযায়ী, এবার হাওররক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসির) মাধ্যমে করার কথা। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন এবং ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরুর কথা ছিল। নির্ধারিত সময় পার হলেও বাঁধের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। শুধু তাই নয়, পিআইসি গঠন নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে ফসল রক্ষা বাঁধগুলো মানসম্মতভাবে নির্মিত না হলে আবারো বিপদের আশঙ্কা দেখছেন কৃষকরা।

অবিলম্বে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু করা, বাঁধ নির্মাণে সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্তি ও দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে স্থান না দেয়ার দাবিতে গত রবিবার সুনামগঞ্জে একটি সংগঠন মানববন্ধন করেছে। তাদের উল্লিখিত দাবিগুলো আসলে গোটা হাওরবাসীরই দাবি। এর সঙ্গে আমরাও একমত। হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে গেল বছর তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জের হাওরের শতভাগ ফসল। ওই সময়ে প্রায় দুই লাখ টন বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

Related image

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই বাঁধ ভাঙার ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টিও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ঠিকাদাররা নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ রেখে বিল তুলে নিয়েছে। গত বছর বাঁধ ভাঙার ঘটনায় দুদক অনুসন্ধান করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৫ কর্মকর্তা এবং ৪৬ ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠানসহ ৬১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিল। মামলায় সুনামগঞ্জ পাউবোর বেশ কিছু কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দুদকের অভিযানের পর হাওরে বাঁধ নির্মাণে নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরবে এমনটাই আশা করেছিলাম আমরা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এবারো যথারীতি বাঁধ নির্মাণ শুরু করায় গরিমসি, বাস্তবায়ন কমিটি গঠন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ। ফসল রক্ষাসহ বৃহত্তর জনবসতি বন্যার কবল থেকে রক্ষায় বাঁধের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক সময়ে এবং মানসম্মতভাবে বাঁধগুলো নির্মাণ করা খুবই জরুরি। সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষা বাঁধগুলোর নির্মাণকাজ যেন দ্রত শুরু ও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়, তা নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি দরকার।

হাওরবাসীর স্বার্থ সংরক্ষণ ও সেখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষার জন্য সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। পাউবোসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের সৎ ও নিষ্ঠাবান হওয়াটাও জরুরি। কারণ যত ভালো পরিকল্পনাই হোক, বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা যদি অসৎ হন, তাহলে তা সাধারণ মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে, প্রতি বছর বন্যায় বাঁধ ভেঙে কৃষকের ফসল নষ্ট হবে। সরকার এসব দিকে নজর দেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিবে

আপডেট টাইম : ০৪:৩১:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকালের ভোরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষায় ১ হাজার ৮৮টি বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে চলতি বছর ২৮ ফেব্রয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু গত পরশু পর্যন্ত মাত্র একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। বাঁধ বিপর্যয়ে গত বছর শতভাগ ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর এবারো বাঁধ নির্মাণে গরিমসি তাই হওরবাসীর উদ্বেগের কারণ হওয়াই স্বাভাবিক।

সুনামগঞ্জের ৩৬টি বৃহৎ হাওরসহ জেলার ১৫৪টি হাওররক্ষা বাঁধের কাজ নিয়ে এবারো লেজেগোবরে অবস্থা হওয়ার খবর জানানো হয়েছে পত্রিকার উল্লিখিত রিপোর্টে। নীতিমালা অনুযায়ী, এবার হাওররক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসির) মাধ্যমে করার কথা। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন এবং ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরুর কথা ছিল। নির্ধারিত সময় পার হলেও বাঁধের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। শুধু তাই নয়, পিআইসি গঠন নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে ফসল রক্ষা বাঁধগুলো মানসম্মতভাবে নির্মিত না হলে আবারো বিপদের আশঙ্কা দেখছেন কৃষকরা।

অবিলম্বে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু করা, বাঁধ নির্মাণে সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্তি ও দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে স্থান না দেয়ার দাবিতে গত রবিবার সুনামগঞ্জে একটি সংগঠন মানববন্ধন করেছে। তাদের উল্লিখিত দাবিগুলো আসলে গোটা হাওরবাসীরই দাবি। এর সঙ্গে আমরাও একমত। হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে গেল বছর তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জের হাওরের শতভাগ ফসল। ওই সময়ে প্রায় দুই লাখ টন বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

Related image

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই বাঁধ ভাঙার ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টিও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ঠিকাদাররা নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ রেখে বিল তুলে নিয়েছে। গত বছর বাঁধ ভাঙার ঘটনায় দুদক অনুসন্ধান করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৫ কর্মকর্তা এবং ৪৬ ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠানসহ ৬১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিল। মামলায় সুনামগঞ্জ পাউবোর বেশ কিছু কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দুদকের অভিযানের পর হাওরে বাঁধ নির্মাণে নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরবে এমনটাই আশা করেছিলাম আমরা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এবারো যথারীতি বাঁধ নির্মাণ শুরু করায় গরিমসি, বাস্তবায়ন কমিটি গঠন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ। ফসল রক্ষাসহ বৃহত্তর জনবসতি বন্যার কবল থেকে রক্ষায় বাঁধের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক সময়ে এবং মানসম্মতভাবে বাঁধগুলো নির্মাণ করা খুবই জরুরি। সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষা বাঁধগুলোর নির্মাণকাজ যেন দ্রত শুরু ও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়, তা নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি দরকার।

হাওরবাসীর স্বার্থ সংরক্ষণ ও সেখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষার জন্য সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। পাউবোসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের সৎ ও নিষ্ঠাবান হওয়াটাও জরুরি। কারণ যত ভালো পরিকল্পনাই হোক, বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা যদি অসৎ হন, তাহলে তা সাধারণ মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে, প্রতি বছর বন্যায় বাঁধ ভেঙে কৃষকের ফসল নষ্ট হবে। সরকার এসব দিকে নজর দেবে, এটাই প্রত্যাশা।