হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণীত বাংলা বর্ণমালার ‘বর্ণপরিচয়’ কিংবা সীতানাথ বসাক প্রণীত ‘আদর্শ লিপি’ যেমন ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয়; তেমনি বর্তমানে বাংলা কিবোর্ডের ‘বিজয়’ও বাঙালীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যিনি এর একক কৃতিত্ব দাবিদার, তিনি হলেন মোস্তাফা জব্বার। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই অমূল্য কাজটি নিরলসভাবে করে যাচ্ছেন। একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা জব্বার এবার যুদ্ধ নেমেছেন বর্ণমালা নিয়ে।
আমি দেখেছি, দিনের পর দিন অসীম ধৈর্য ধরে নিমগ্ন হয়ে ‘অ’ বর্ণের শীর্ষ তীর তৈরি করছেন। অক্ষরকে নতুনভাবে রূপ দিয়ে অপরূপ করে সাজিয়েও তৃপ্তি পাচ্ছেন না, যুক্তাক্ষর সমস্যা সমাধান মনপুত হচ্ছে না। নানান সমস্যা অতিক্রম করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আবার ‘অ’র অগ্রমাথা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। ডুবে যাচ্ছেন গভীর নেশায়। কামার-কুমারের শৈল্পিক নান্দনিকতায় এই বর্ণশ্রমিক নির্মাণ করছেন আমাদের স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণ। সেই সাথে যুক্ত করছেন প্রযুক্তির নিত্য নতুন মাত্রা। এ যেনো জব্বারের বলীখেলার মতো আরেক জব্বারের আশ্চর্য বর্ণখেলা!
বাংলা হরফ সিসার প্রযুক্তিতে যুক্ত হয় পঞ্চানন কর্মকার ও চার্লস উইনকিন্সের হাত ধরে ১৭৭৮ সালে। আর তা ১৯৮৭ সালে ‘রহস্যময়’ প্রযুক্তির রূপ দেন কম্পিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যারের উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার। বিজয় কীবোর্ডের এ বিজয় যেনো বাংলার বিজয়! যা কম্পিউটারের মাধ্যমে মুদ্রণ ও প্রকাশনায় বৈপ্লবিক উত্তরণ এনে দিয়েছে। শুধু বাংলা বর্ণমালায় নয়; তিনি কম্পিউটারে চাকমা লিপিমালা তৈরি করেছেন। আমার কাছে কয়েকটি আদিবাসী বর্ণমালা আছে। তা-ও তিনি কম্পিউটার লিপির আকারে লিপিবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলো আর তাঁকে দেয়া হয়নি। আমাদের প্রিয় মানুষদের মধ্যে একজন মোস্তাফা জব্বার।