ঢাকা ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপির শীর্ষনেতাদের বছরের বেশিরভাগ সময় কেটেছে আদালতের বারান্দায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৮:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জানুয়ারী ২০১৮
  • ২৪২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপির শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বছরের বেশিরভাগ সময় কেটেছে আদালতের বারান্দায়। আগের বছরগুলোয় দায়ের করা বেশিরভাগ মামলার চার্জশিট এবং অনেক মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও পড়েন মামলার জালে। অপরদিকে ২০১৭ সালে আন্দোলন কর্মসূচি প্রণয়ন, সাংগঠনিক পুনর্গঠনসহ সার্বিকভাবে দলকে গোছানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছে বিএনপি।

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি সোচ্চার থাকলেও সে দাবি আদায়ে দলটির কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। তবে শীর্ষনেতাদের বক্তব্য ও দলীয় কর্মসূচির মধ্যে ফুটে উঠেছে দলটির নির্বাচনমুখী মনোভাব। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি অংশ নেবে এবং জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার সম্ভাব্য রায়কে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ লক্ষ করা গেছে। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে টানা তিন মাস লন্ডনে অবস্থান শেষে ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও তাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরের রাস্তায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক জমায়েত হন। এরপর ৭ নভেম্বর উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিপুল জমায়েত বিএনপির শীর্ষনেতাদের দারুণভাবে চাঙ্গা করে।

খালেদা জিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাওয়ার পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া পর্যন্ত সড়কে রীতিমতো জনতার ঢল নামে। ২০১৭ সালে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে বিএনপি বেশ গুরুত্ব পায়। খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, মার্কিন পলিটিক্যাল আন্ডার সেক্রেটারি টমাস এ শ্যাননসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নেতা ও কূটনীতিক।

চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে ১৫ জুলাই লন্ডন যান খালেদা জিয়া। সেখানে অবস্থানকালে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। দেশে ফিরে পরদিনই তিনি আদালতে হাজিরা দেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে বছরের শেষদিকে প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজিরা দিতে হয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ কার্যদিবস আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন তিনি। মামলা দুটির বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে হওয়ায় সম্ভাব্য রায় নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। এদিকে খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরের আশপাশে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ছিল নিয়মিত। একই সঙ্গে প্রতিটি হাজিরার দিন ধরপাকড় করে পুলিশ।

দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানের চেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আদালতে বেশি সময় কেটেছে। আদালত ও আইনজীবীদের চেম্বারে প্রায় প্রতিদিনই তাদের যেতে হয়েছে। বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতাকে ২০ থেকে দুই শতাধিক মামলার আসামি করা হয়েছে। এছাড়া খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেয়াকে কেন্দ্র করে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রমনা, পল্টন ও শাহবাগ থানায় নতুন করে ৩০টি মামলা দেয়া হয়েছে।

২০১৭ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহর কয়েক দফা হামলার শিকার হয়েছে। ২৮ ও ৩১ অক্টোবর ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সরকার সমর্থকদের হামলার শিকার হয়। জুনে রাঙ্গুনিয়ায় মির্জা ফখরুলের গাড়িবহর সরকার সমর্থকদের হামলার শিকার হয়। তিনি নিজেও আহত হন।

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সোচ্চার বিএনপি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে সেপথেই হাঁটছে বিএনপি। জুনে নিজ কার্যালয়ে ঘরোয়া অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চান। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে আন্দোলনের চেয়ে আলোচনার আহ্বানকে জোর দিচ্ছে দলটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে একটি বিস্তারিত রূপরেখা প্রকাশ করে বিএনপি।

‘ভিশন ২০৩০’ শীর্ষক এ রূপরেখায় বিস্তারিত তুলে ধরে দলটি। এতে আগামী দিনে দল এবং সরকার পরিচালনার সুযোগ পেলে দলটি কী কী করতে চায়, তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের ফর্মুলা দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বছরজুড়ে সম্ভাব্য এ সহায়ক সরকারের ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা ছিল রাজনৈতিক মহলে। তবে শেষ পর্যন্ত সে ফর্মুলা প্রকাশ করেনি বিএনপি।

নতুন ইসির অধীনে ২০১৭ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হন বিএনপি মনোনীত মনিরুল হক সাক্কু। ২০১৭ সালে জনস্বার্থ ইস্যুতে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মার্চে দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে দলটি।

২০১৭ সালের ২০ মে হঠাৎ খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ নিয়ে রাজনৈতিক ময়দান উত্তপ্ত হলেও বড় কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার রায় এবং রায়-পরবর্তী তাকে নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের ব্যাপারে প্রথম থেকে মুখর ছিল বিএনপি।

২০১৭ সালের প্রথমদিকে সাংগঠনিক পুনর্গঠনে মনোযোগ দেয় বিএনপি। প্রায় অর্ধশত সাংগঠনিক জেলার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলকে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা করতে ৫১টিম গঠন করা হয়। জেলা পর্যায়ে সফর করে টিমগুলো তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা চালায়। দলকে তৃণমূলে শক্তিশালী করতে নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। ১ জুলাই এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া। রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরু থেকে সরব ছিল বিএনপি।

তাদের আশ্রয় দিতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়। তাদের দুর্দশা দেখতে সেখানে ছুটে যান খালেদা জিয়া। ২০১৭ সালে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে হারিয়েছে বিএনপি- সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান মুন্নু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন, জোটের শরিক দল জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ও জিয়াউর রহমানের ছোটভাই আহমেদ কামাল প্রমুখ।

২০১৭ সাল সম্পর্কে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান হাওর বার্তাকে বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বছরটি মোটামুটি ভালোভাবে কেটেছে বিএনপির। সাংগঠনিক পুনর্গঠনে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তবে মামলার কারণে নেতাকর্মীদের প্রায় আদালতের বারান্দায় কাটাতে হয়েছে।

তিনি বলেন, গত বছরের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছরে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে চাই। নতুন বছরে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিএনপির শীর্ষনেতাদের বছরের বেশিরভাগ সময় কেটেছে আদালতের বারান্দায়

আপডেট টাইম : ১২:৩৮:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপির শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বছরের বেশিরভাগ সময় কেটেছে আদালতের বারান্দায়। আগের বছরগুলোয় দায়ের করা বেশিরভাগ মামলার চার্জশিট এবং অনেক মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও পড়েন মামলার জালে। অপরদিকে ২০১৭ সালে আন্দোলন কর্মসূচি প্রণয়ন, সাংগঠনিক পুনর্গঠনসহ সার্বিকভাবে দলকে গোছানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছে বিএনপি।

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি সোচ্চার থাকলেও সে দাবি আদায়ে দলটির কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। তবে শীর্ষনেতাদের বক্তব্য ও দলীয় কর্মসূচির মধ্যে ফুটে উঠেছে দলটির নির্বাচনমুখী মনোভাব। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি অংশ নেবে এবং জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার সম্ভাব্য রায়কে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ লক্ষ করা গেছে। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে টানা তিন মাস লন্ডনে অবস্থান শেষে ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও তাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরের রাস্তায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক জমায়েত হন। এরপর ৭ নভেম্বর উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিপুল জমায়েত বিএনপির শীর্ষনেতাদের দারুণভাবে চাঙ্গা করে।

খালেদা জিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাওয়ার পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া পর্যন্ত সড়কে রীতিমতো জনতার ঢল নামে। ২০১৭ সালে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে বিএনপি বেশ গুরুত্ব পায়। খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, মার্কিন পলিটিক্যাল আন্ডার সেক্রেটারি টমাস এ শ্যাননসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নেতা ও কূটনীতিক।

চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে ১৫ জুলাই লন্ডন যান খালেদা জিয়া। সেখানে অবস্থানকালে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। দেশে ফিরে পরদিনই তিনি আদালতে হাজিরা দেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে বছরের শেষদিকে প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজিরা দিতে হয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ কার্যদিবস আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন তিনি। মামলা দুটির বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে হওয়ায় সম্ভাব্য রায় নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। এদিকে খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরের আশপাশে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ছিল নিয়মিত। একই সঙ্গে প্রতিটি হাজিরার দিন ধরপাকড় করে পুলিশ।

দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানের চেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আদালতে বেশি সময় কেটেছে। আদালত ও আইনজীবীদের চেম্বারে প্রায় প্রতিদিনই তাদের যেতে হয়েছে। বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতাকে ২০ থেকে দুই শতাধিক মামলার আসামি করা হয়েছে। এছাড়া খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেয়াকে কেন্দ্র করে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রমনা, পল্টন ও শাহবাগ থানায় নতুন করে ৩০টি মামলা দেয়া হয়েছে।

২০১৭ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহর কয়েক দফা হামলার শিকার হয়েছে। ২৮ ও ৩১ অক্টোবর ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সরকার সমর্থকদের হামলার শিকার হয়। জুনে রাঙ্গুনিয়ায় মির্জা ফখরুলের গাড়িবহর সরকার সমর্থকদের হামলার শিকার হয়। তিনি নিজেও আহত হন।

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সোচ্চার বিএনপি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে সেপথেই হাঁটছে বিএনপি। জুনে নিজ কার্যালয়ে ঘরোয়া অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চান। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে আন্দোলনের চেয়ে আলোচনার আহ্বানকে জোর দিচ্ছে দলটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে একটি বিস্তারিত রূপরেখা প্রকাশ করে বিএনপি।

‘ভিশন ২০৩০’ শীর্ষক এ রূপরেখায় বিস্তারিত তুলে ধরে দলটি। এতে আগামী দিনে দল এবং সরকার পরিচালনার সুযোগ পেলে দলটি কী কী করতে চায়, তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের ফর্মুলা দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বছরজুড়ে সম্ভাব্য এ সহায়ক সরকারের ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা ছিল রাজনৈতিক মহলে। তবে শেষ পর্যন্ত সে ফর্মুলা প্রকাশ করেনি বিএনপি।

নতুন ইসির অধীনে ২০১৭ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হন বিএনপি মনোনীত মনিরুল হক সাক্কু। ২০১৭ সালে জনস্বার্থ ইস্যুতে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মার্চে দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে দলটি।

২০১৭ সালের ২০ মে হঠাৎ খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ নিয়ে রাজনৈতিক ময়দান উত্তপ্ত হলেও বড় কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার রায় এবং রায়-পরবর্তী তাকে নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের ব্যাপারে প্রথম থেকে মুখর ছিল বিএনপি।

২০১৭ সালের প্রথমদিকে সাংগঠনিক পুনর্গঠনে মনোযোগ দেয় বিএনপি। প্রায় অর্ধশত সাংগঠনিক জেলার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলকে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা করতে ৫১টিম গঠন করা হয়। জেলা পর্যায়ে সফর করে টিমগুলো তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা চালায়। দলকে তৃণমূলে শক্তিশালী করতে নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। ১ জুলাই এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া। রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরু থেকে সরব ছিল বিএনপি।

তাদের আশ্রয় দিতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়। তাদের দুর্দশা দেখতে সেখানে ছুটে যান খালেদা জিয়া। ২০১৭ সালে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে হারিয়েছে বিএনপি- সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান মুন্নু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন, জোটের শরিক দল জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ও জিয়াউর রহমানের ছোটভাই আহমেদ কামাল প্রমুখ।

২০১৭ সাল সম্পর্কে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান হাওর বার্তাকে বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বছরটি মোটামুটি ভালোভাবে কেটেছে বিএনপির। সাংগঠনিক পুনর্গঠনে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তবে মামলার কারণে নেতাকর্মীদের প্রায় আদালতের বারান্দায় কাটাতে হয়েছে।

তিনি বলেন, গত বছরের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছরে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে চাই। নতুন বছরে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।