হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেট জেলায় হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যা প্রতিরোধে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। বন্যা ও বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনে ইতোমধ্যেই নদী খননের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকাগুলো আগাম বন্যায় তলিয়ে যায়। পাহাড়ি ঢলের পানি বাঁধ ভেঙে যখন হাওরে ঢুকে পড়ে; তখন কাটার অপেক্ষায় ছিল বোরো ধান। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে যে ফসল ঘরে তুলে আনন্দে মেতে ওঠার কথা, কৃষকরা তা হারিয়ে প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। হাওরাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকার মূল ফসল বোরো ধান। বন্যায় ফসলহানিতে স্বাভাবিকভাবেই মুষড়ে পড়েন কৃষক।
হাওরের আগাম বন্যায় প্রায় ছয় লাখ টন চাল নষ্ট হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি উপকরণ বিতরণ করে সরকার। এ ছাড়া এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শীতকালীন সবজি চাষেও বিপুল সহযোগিতা করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আগামী ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। হাওরে ফসলহানির পর তিন লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন চাল ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়।
হাওরে আগাম বন্যার মূল কারণ হিসেবে হাওরাঞ্চলের নদীগুলোর নাব্যতা সংকটকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। আর তাই হাওরাঞ্চলের নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়েছে একটি বিশেষ প্রকল্প।
সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ এ অঞ্চলের ইরি-বোরো ফসল রক্ষা ও ভরাট হওয়া নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে আটটি নদী খননের কাজ শুরু করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। আট নদীর ১১৬ কিলোমিটার এলাকা খননের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। সুনামগঞ্জের ছয়টি ও মৌলভীবাজারের দুটি নদীর খননকাজ ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী কে এম আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সিলেট অঞ্চলের হাওরগুলোর ফসল অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
সিলেট অঞ্চলের হাওরগুলোর ফসল রক্ষার লক্ষ্যে ‘হাওর এলাকায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের এ প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জ জেলার রক্তি, আপার বলাই, জাদুকাটা, পুরাতন সুরমা, চামতি ও নলজুর নদীর ৯৮ দশমিক ১২৫ কিলোমিটার এলাকা খনন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ২৪৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এ ছাড়া মৌলভীবাজার জুড়ি ও সোনাই নদীর ১৮ কিলোমিটার এলাকা খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া জানান, সুনামগঞ্জ জেলার রক্তি নদীর জামালগঞ্জের সংগ্রামপুর অংশ থেকে আবুয়া পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার খনন করা হবে, এতে ব্যয় হবে ১৭ কোটি আট লাখ টাকা। বর্তমানে এ নদীর খননকাজ চলছে।
আপার বলাই নদীর হালি হাওর এলাকায় শুরু হয়ে ধর্মপাশার সোন মড়ল পর্যন্ত খনন করা হবে প্রায় ১৬ কিলোমিটার এলাকা। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এরই মধ্যে এ নদীর খনন শুরু হয়েছে। ভারতের সীমান্তঘেঁষা জাদুকাটা নদীর বিশ্বম্ভরপুর অংশ থেকে শুরু হয়ে আপার বলাই নদী পর্যন্ত ৬ দশমিক ১২৫ কিলোমিটার নদী খননকাজ চলমান আছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
সুনামগঞ্জ শহরের কাছ থেকে শুরু হয়ে দিরাই শাল্লা হয়ে ময়মনসিংহের মিঠামইন পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার খনন করা হবে পুরাতন সুরমা নদী। এতে ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকা। এ নদীর খননকাজ আগামী সপ্তাহেই শুরু হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া। এ জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করাসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পাদন করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে দিরাই ও শাল্লা উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত চামতি নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকার খনন করার জন্য দরপত্র তৈরির কাজ চলছে, শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে। হাকালুকির ফসলহানি প্রতিরোধে জুড়ি নদীর ১০ কিলোমিটার ও সোনাই নদীর আট কিলোমিটার এলাকা খনন করা হবে। এ দুই নদীর খননকাজে ব্যয় হবে ৫৪ কোটি টাকা।