কিভাবে তারা হারিয়ে গেলেন, পরিবার এখনও জানে না। তারা মারা গেছেন নাকি বেঁচে আছেন—সেটিও স্পষ্ট নয়। দুই মাসের বেশি সময় নিখোঁজ থাকার পর ভারতের মেঘালয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের সন্ধান পাওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে নিখোঁজ এমন রাজনৈতিক নেতাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।
এই রকম নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী চৌধুরী আলম, সাবেক সংসদ সদস্য ও লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম হিরু, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি কেএম শামীম আকতার, তেজগাঁওয়ের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড (সাবেক ৩৮) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমন, ঢাকা মহানগর ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী নূর মোহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হল ছাত্রদলের সাবেক সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক শামীম হাসান সোহেল, সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টু প্রমুখ।
এর আগে গত বছরের ১৬ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক অপহরণের ৩৫ ঘণ্টা পর ফেরত পাওয়ার ঘটনা ঘটে।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে বনানীতে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীকে একদল ব্যক্তি ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি এখনও নিখোঁজ। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা জানান, ‘বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের সন্ধান পাওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছি। প্রত্যাশা করছি আমার স্বামী ফিরে আসবে। তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য সিলেটে বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর এলাকার মসজিদে দোয়া-মাহফিল ও মোনাজাত করা হচ্ছে।’
২০১০ সালের ২৫ জুন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৫৬ নম্বর (সাবেক) ওয়ার্ড কমিশনার বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমকে ঢাকার ইন্দিরা রোড থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে একদল ব্যক্তি ধরে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে ঢাকার শাজাহানপুরের বাসায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। চৌধুরী আলমের ছেলে আবু সাহাদত চৌধুরী শাওন বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমদ ফিরে আসায় আমরা আশা করছি বাবাও ফিরে আসবেন। এজন্য আমরা সরকারের সুদৃষ্টি চাচ্ছি। আমরা জানি না বাবা মারা গেছেন নাকি বেঁচে আছেন।’
২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর কুমিল্লার লাকসাম থেকে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম হিরুকে একদল ব্যক্তি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর খোঁজ মেলেনি। সাইফুলের মামাতো ভাই অ্যাডভোকেট বদিউল আলম সুজন বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমদের সন্ধান পাওয়ায় আমরা আশা করছি আমাদের ভাইও ফিরে আসবেন। ভাই যেনো ফিরে আসেন, এজন্য আজ (শুক্রবার) স্থানীয় মসজিদে মিলাদ দেয়া হয়েছে। আমরা আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করছি সাইফুল যেন ফিরে আসেন।’
গত ১১ ডিসেম্বর পল্লবীর বি ব্লকের ৯ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ি থেকে রাত একটার দিকে ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয় দিয়ে কে বা কারা সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুকে ধরে নিয়ে যায়। পিন্টুর ভাই ইসমাইল রেজা জানান, পুলিশ, র্যাব ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলে কেউই পিন্টুর সন্ধান দিতে পারেনি। পিন্টুর বোন রেহানা বানু মুন্নী গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘ভাই যেনো ফিরে আসে-এজন্য আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে দোয়া করছি। ভাই ফিরে আসা ছাড়া আমাদের আর কোন আঁকুতি নেই।’
একইভাবে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল শাখার যুগ্ম সম্পাদক তরিকুল ইসলাম ঝন্টু (২৮), স্বেচ্ছাসেবক দল তেজগাঁও থানা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আদনান চৌধুরী, উত্তরার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত মারিয়ামের ছাত্র তানভীর হাসান অঞ্জন (২২), চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল আলম সিরাজ, যাত্রাবাড়ীর বিএনপি নেতা কাজী আতাউর রহমান লিঠু, যুবলীগ নেতা লিয়াকত হোসেন, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমেদ দিনার ও জুনেদ আহমেদসহ শতাধিক নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনরা আশায় বুক বাঁধছেন তাদের ফিরে আসার অপেক্ষায়।