ঢাকা ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভৈরব রেলসেতু ধ্বংসের ৪৬ বছর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০৭:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭
  • ৫৮২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভৈরব রেলসেতু ধ্বংসের ৪৬ বছর আজ। ১৯৭১ সালের এই দিন দুপুর দেড়টা থেকে দুইটার দিকে ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথের ভৈরবের মেঘনা নদীর উপর নির্মিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেলসেতুটি শক্তিশালী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয় পাকবাহিনী।

এতে রেলসেতুর ভৈরব পাড়ের দুইটি স্প্যান ও আশুগঞ্জ পাড়ের একটি স্প্যান জয়েন্ট খুলে পানিতে পড়ে যায়। জানাযায়, পূর্বদিক থেকে পশ্চিমে রাজধানী ঢাকার দিকে অগ্রসরমান বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর অগ্রগামীতায় বাঁধা সৃষ্টি করতে হানাদার বাহিনী এই সেতুটি ধ্বংস করে দেয়। এর আগে ২ ডিসেম্বর ভারতীয় যুদ্ধ বিমান দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর ভৈরবস্থ সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর কয়েকবার হামলা চালায়।

৮ ডিসেম্বর পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর পূর্বাঞ্চল সেক্টর আখাউড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চরম মার খেয়ে প্রায় ১০/১২ হাজার পাকসেনা আশুগঞ্জ পাড়ি দিয়ে ভৈরব আশ্রয় নেয়। হানাদার বাহিনীর ধারণা ছিল ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা রেলসেতু দিয়ে হেঁটে ভৈরবে আক্রমণ করবে। যে কারণে ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে তারা ডিনামাইট দিয়ে সেতুর তিনটি স্প্যান ভেঙ্গে দেয়।

এ ছাড়া এদিন তারা ভৈরবের তৎকালীন ন্যাশনাল বর্তমান সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারি ডিনামাইটের মাধ্যমে উড়িয়ে দিয়ে দেয়। এছাড়াও এদিন হানাদারা ভৈরব টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, রেলওয়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মারাত্মক ক্ষতি করে।

পরে দেশ স্বাধীন হবার দুই বছর পর পূনঃনির্মাণ শেষে ১৯৭৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেতুটির উদ্বোধন করেন। তখন সেতুটির নামকরণ করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার আব্দুল হালিমের নামে ‘শহীদ আবদুল হালিম রেলওয়ে সেতু’।

জানা যায়, তৎকালীন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেতুটির নামকরণ হওয়ার কথা ছিলো বঙ্গবন্ধুর নামে। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সেতু উদ্বোধন করতে গিয়ে জানতে পারলেন এখানে যুদ্ধ চলাকালীন এক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। তার নাম হাবিলদার আব্দুল হালিম। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত পাল্টে সেতুটির নামকরণ করেন ‘শহীদ আবদুল হালিম রেলওয়ে সেতু’।

মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার শহীদ আব্দুল হালিমের বাড়ি চাঁদপুরের তরপুচণ্ডী গ্রামে। তার বাবার নাম আলী হোসেন। হাবিলদার আব্দুল হালিম মুক্তিযুদ্ধের সময় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ৭১ সালের ২৩ নভেম্বর তৎকালীন কুমিল্লা জেলার কসবা থানার চাঁদপুর গ্রামে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভৈরব রেলসেতু ধ্বংসের ৪৬ বছর

আপডেট টাইম : ০৫:০৭:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভৈরব রেলসেতু ধ্বংসের ৪৬ বছর আজ। ১৯৭১ সালের এই দিন দুপুর দেড়টা থেকে দুইটার দিকে ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথের ভৈরবের মেঘনা নদীর উপর নির্মিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেলসেতুটি শক্তিশালী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয় পাকবাহিনী।

এতে রেলসেতুর ভৈরব পাড়ের দুইটি স্প্যান ও আশুগঞ্জ পাড়ের একটি স্প্যান জয়েন্ট খুলে পানিতে পড়ে যায়। জানাযায়, পূর্বদিক থেকে পশ্চিমে রাজধানী ঢাকার দিকে অগ্রসরমান বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর অগ্রগামীতায় বাঁধা সৃষ্টি করতে হানাদার বাহিনী এই সেতুটি ধ্বংস করে দেয়। এর আগে ২ ডিসেম্বর ভারতীয় যুদ্ধ বিমান দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর ভৈরবস্থ সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর কয়েকবার হামলা চালায়।

৮ ডিসেম্বর পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর পূর্বাঞ্চল সেক্টর আখাউড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চরম মার খেয়ে প্রায় ১০/১২ হাজার পাকসেনা আশুগঞ্জ পাড়ি দিয়ে ভৈরব আশ্রয় নেয়। হানাদার বাহিনীর ধারণা ছিল ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা রেলসেতু দিয়ে হেঁটে ভৈরবে আক্রমণ করবে। যে কারণে ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে তারা ডিনামাইট দিয়ে সেতুর তিনটি স্প্যান ভেঙ্গে দেয়।

এ ছাড়া এদিন তারা ভৈরবের তৎকালীন ন্যাশনাল বর্তমান সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারি ডিনামাইটের মাধ্যমে উড়িয়ে দিয়ে দেয়। এছাড়াও এদিন হানাদারা ভৈরব টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, রেলওয়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মারাত্মক ক্ষতি করে।

পরে দেশ স্বাধীন হবার দুই বছর পর পূনঃনির্মাণ শেষে ১৯৭৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেতুটির উদ্বোধন করেন। তখন সেতুটির নামকরণ করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার আব্দুল হালিমের নামে ‘শহীদ আবদুল হালিম রেলওয়ে সেতু’।

জানা যায়, তৎকালীন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেতুটির নামকরণ হওয়ার কথা ছিলো বঙ্গবন্ধুর নামে। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সেতু উদ্বোধন করতে গিয়ে জানতে পারলেন এখানে যুদ্ধ চলাকালীন এক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। তার নাম হাবিলদার আব্দুল হালিম। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত পাল্টে সেতুটির নামকরণ করেন ‘শহীদ আবদুল হালিম রেলওয়ে সেতু’।

মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার শহীদ আব্দুল হালিমের বাড়ি চাঁদপুরের তরপুচণ্ডী গ্রামে। তার বাবার নাম আলী হোসেন। হাবিলদার আব্দুল হালিম মুক্তিযুদ্ধের সময় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ৭১ সালের ২৩ নভেম্বর তৎকালীন কুমিল্লা জেলার কসবা থানার চাঁদপুর গ্রামে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হন।