ঢাকা ০৩:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোরবানির পশু নিয়ে আর কোনো শঙ্কা নেই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০৩:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ৫৯০ বার

এবার ভারত গরু দেবে না, তাই কোরবানির গরু নিয়ে সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে একটি শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে সেই শঙ্কা আর নেই। কোরবানির পশুর ঘাটতি মেটাতে ভারতসহ মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তান থেকেও এবার গরু আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সীমান্তপথে গত এক সপ্তাহ ধরে গরু আসার সংখ্যা বাড়ছে। ঈদকে সামনে রেখে সে সংখ্যা আরও বাড়বে। কোরবানির জন্য এবার দেশীয় গরু মোটাতাজাকরণের সংখ্যাও অন্যান্য বছরের চেয়ে কয়েক লাখ বেশি করা হয়েছে। ফলে কোরবানির গরু নিয়ে দুশ্চিন্তা তো কেটেছেই, এমনকি এবার বাজারে প্রয়োজনের তুলনায় গরু বেশি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গরু ও ইলিশ- এই দুটো অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানিতে দুই দেশেই সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। তবে বাণিজ্যিক কূটনীতিতে এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক ও অলিখিত সমঝোতা হয়েছে।

পবিত্র কোরবানির জন্য গরু আসছে, আর শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে যেতে শুরু করেছে পদ্মার ইলিশ। গত এক সপ্তাহ ধরে বৈধ ও অবৈধ উভয় প্রক্রিয়ায় সীমান্তপথে শুরু হয়েছে গরু-ইলিশের বাণিজ্য। ঈদের গরুর হাট বসা শুরু হলে সবার কাছে তা স্পষ্ট হবে বলে জোর দিয়ে বলছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, কোরবানির পশুর কোনো সংকট হবে না। কোরবানির জন্য দেশে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। তিনি বলেন, আসন্ন ঈদে ভারত থেকে গরু না এলেও কোরবানির পশুর কোনো সংকট হবে না। তিনি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, দেশে কৃষকের ঘরে বিক্রির উপযোগী ৩৪ লাখ গরু-মহিষ ও ৭৯ লাখ ভেড়া-ছাগল রয়েছে, যা প্রস্তুত আছে কোরবানির জন্য।

এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির গরু সরবরাহ অনেক কম হবে এবার ভারতীয় গরু আসছে না -এ রকম প্রচারণা চালাচ্ছে কয়েকটি চক্র। আতঙ্ক ও গুজব ছড়িয়ে আগেভাগে গরু কেনার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে এ চক্রটি।

জানা গেছে, ভারত সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বজায় থাকলেও যুগ যুগ ধরে চলে আসা গরু বাণিজ্য এবারও শিথিল হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত উভয় সরকারের ইতিবাচক মনোভাব ও পদক্ষেপের ফলে কড়াকড়ি সত্ত্বেও গরু বাণিজ্য এবারও চলবে। যদিও ভারতীয় খামারিদের বিরাট একটি অংশ তাদের উৎপাদিত গরু ঈদের সময়টায় বাংলাদেশে বিক্রি করার ওপর নির্ভরশীল।

ভারত থেকে গরু আমদানির জন্য সীমান্তের ৩১টি করিডোর এলাকায় আগের কঠোর অবস্থান কিছুটা শিথিল করেছে বিএসএফ। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন সীমান্তপথে প্রায় দেড় লাখ গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ঈদ ঘনিয়ে এলে গরু আমদানি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বেপারিরা। ঈদ সামনে রেখে সীমান্ত এলাকায় ভারতের ব্যবসায়ীরা গরু এনে জড়ো করছেন। যদিও অন্যান্য বছরের মতোই এবারও দু’পারেই গরু না আনার জন্য মাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। গরু নিয়ে অনানুষ্ঠানিক এ বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কোনো অবস্থাতেই যাতে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও গোলাগুলির ঘটনা না ঘটে সে বিষয়েও সতর্ক রয়েছে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়।

গত মার্চে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা সফর করে গরু চোরাচালান বন্ধের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারির পর ভারত থেকে গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় বাংলাদেশে বেড়ে যায় গরুর মাংসের দাম। গত ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের পর থেকেই সীমান্তে কঠোর অবস্থা শিথিল হতে শুরু করে। মাস তিনেকের কড়াকড়ির পর ঈদ সামনে রেখে শিথিল হয়েছে বিএসএফের নজরদারি, আর বাড়তে শুরু করেছে গরু আমদানি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় বলেন, কোরবানির পশুর সংকট কাটাতে এবার পর্যাপ্ত সময় নিয়ে সরকার নানা পরিকল্পনা নিয়েছে। আশা করি, কোনো সংকট হবে না। ৩০ লাখ গরু ও ৬৯ লাখ ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত। এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে কমপক্ষে দুই থেকে তিন লাখ গরু বেশি বাজারে উঠবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কোরবানির পশু নিয়ে আর কোনো শঙ্কা নেই

আপডেট টাইম : ০৫:০৩:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

এবার ভারত গরু দেবে না, তাই কোরবানির গরু নিয়ে সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে একটি শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে সেই শঙ্কা আর নেই। কোরবানির পশুর ঘাটতি মেটাতে ভারতসহ মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তান থেকেও এবার গরু আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সীমান্তপথে গত এক সপ্তাহ ধরে গরু আসার সংখ্যা বাড়ছে। ঈদকে সামনে রেখে সে সংখ্যা আরও বাড়বে। কোরবানির জন্য এবার দেশীয় গরু মোটাতাজাকরণের সংখ্যাও অন্যান্য বছরের চেয়ে কয়েক লাখ বেশি করা হয়েছে। ফলে কোরবানির গরু নিয়ে দুশ্চিন্তা তো কেটেছেই, এমনকি এবার বাজারে প্রয়োজনের তুলনায় গরু বেশি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গরু ও ইলিশ- এই দুটো অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানিতে দুই দেশেই সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। তবে বাণিজ্যিক কূটনীতিতে এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক ও অলিখিত সমঝোতা হয়েছে।

পবিত্র কোরবানির জন্য গরু আসছে, আর শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে যেতে শুরু করেছে পদ্মার ইলিশ। গত এক সপ্তাহ ধরে বৈধ ও অবৈধ উভয় প্রক্রিয়ায় সীমান্তপথে শুরু হয়েছে গরু-ইলিশের বাণিজ্য। ঈদের গরুর হাট বসা শুরু হলে সবার কাছে তা স্পষ্ট হবে বলে জোর দিয়ে বলছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, কোরবানির পশুর কোনো সংকট হবে না। কোরবানির জন্য দেশে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। তিনি বলেন, আসন্ন ঈদে ভারত থেকে গরু না এলেও কোরবানির পশুর কোনো সংকট হবে না। তিনি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, দেশে কৃষকের ঘরে বিক্রির উপযোগী ৩৪ লাখ গরু-মহিষ ও ৭৯ লাখ ভেড়া-ছাগল রয়েছে, যা প্রস্তুত আছে কোরবানির জন্য।

এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির গরু সরবরাহ অনেক কম হবে এবার ভারতীয় গরু আসছে না -এ রকম প্রচারণা চালাচ্ছে কয়েকটি চক্র। আতঙ্ক ও গুজব ছড়িয়ে আগেভাগে গরু কেনার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে এ চক্রটি।

জানা গেছে, ভারত সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বজায় থাকলেও যুগ যুগ ধরে চলে আসা গরু বাণিজ্য এবারও শিথিল হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত উভয় সরকারের ইতিবাচক মনোভাব ও পদক্ষেপের ফলে কড়াকড়ি সত্ত্বেও গরু বাণিজ্য এবারও চলবে। যদিও ভারতীয় খামারিদের বিরাট একটি অংশ তাদের উৎপাদিত গরু ঈদের সময়টায় বাংলাদেশে বিক্রি করার ওপর নির্ভরশীল।

ভারত থেকে গরু আমদানির জন্য সীমান্তের ৩১টি করিডোর এলাকায় আগের কঠোর অবস্থান কিছুটা শিথিল করেছে বিএসএফ। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন সীমান্তপথে প্রায় দেড় লাখ গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ঈদ ঘনিয়ে এলে গরু আমদানি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বেপারিরা। ঈদ সামনে রেখে সীমান্ত এলাকায় ভারতের ব্যবসায়ীরা গরু এনে জড়ো করছেন। যদিও অন্যান্য বছরের মতোই এবারও দু’পারেই গরু না আনার জন্য মাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। গরু নিয়ে অনানুষ্ঠানিক এ বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কোনো অবস্থাতেই যাতে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও গোলাগুলির ঘটনা না ঘটে সে বিষয়েও সতর্ক রয়েছে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়।

গত মার্চে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা সফর করে গরু চোরাচালান বন্ধের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারির পর ভারত থেকে গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় বাংলাদেশে বেড়ে যায় গরুর মাংসের দাম। গত ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের পর থেকেই সীমান্তে কঠোর অবস্থা শিথিল হতে শুরু করে। মাস তিনেকের কড়াকড়ির পর ঈদ সামনে রেখে শিথিল হয়েছে বিএসএফের নজরদারি, আর বাড়তে শুরু করেছে গরু আমদানি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় বলেন, কোরবানির পশুর সংকট কাটাতে এবার পর্যাপ্ত সময় নিয়ে সরকার নানা পরিকল্পনা নিয়েছে। আশা করি, কোনো সংকট হবে না। ৩০ লাখ গরু ও ৬৯ লাখ ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত। এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে কমপক্ষে দুই থেকে তিন লাখ গরু বেশি বাজারে উঠবে।