বয়স হলেও এখনো সজীব। বিশাল বিশাল ডালপালা প্রসারিত করে ক্লান্ত পথিককে ছায়া দিয়ে পশুপাখিকে খাদ্য জুগিয়ে নিজের বিশালতাকে প্রমাণ দিয়ে দাঁড়িয়ে শতবর্ষী পাকুড়। সম্প্রতি নওগাঁ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীতে পাকুড়গাছটির একটি ডাল ভেঙে পড়ে। এ কারণে মূল গাছটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেন মান্দা উপজেলার মান্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। ইউপি কার্যালয়ের সামনে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটি নিলাম করে ইতিমধ্যে বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কথিত ঝুঁকির অজুহাত দেখিয়ে জেলা পরিষদের রাস্তার গাছটি কেটে নেওয়ার চেষ্টা করছেন স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ হিন্দোল। এ ঘটনায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার খাগড়া সাজির মোড় হতে কুসুম্বা পর্যন্ত জেলা পরিষদের রাস্তায় মান্দা ইউপির সামনে গাছটির অবস্থান। গত সোমবার হঠাৎ করে ইউপি চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ হিন্দোল গাছটি নিলাম দেওয়ার উদ্যোগ নেন। পরে মেরুল্লা গ্রামের আশরাফুল ইসলাম পাকুড়গাছটি নিলামে কিনে নেন মাত্র ৫৭ হাজার টাকায়। তাৎক্ষণিক শ্রমিক লাগিয়ে গাছটির ভেঙে পড়া ডালের সঙ্গে তাজা ডালপালা কাটতে শুরু করেন তিনি। এ সময় স্থানীয়রা বাধা প্রদান করলে কাটা ডালপালা একটি ট্রাক্টরে তুলে নিয়ে সটকে পড়েন আশরাফুল ইসলাম। গাছটির কমপক্ষে মূল্য দাঁড়াবে চার লক্ষাধিক টাকা। বন বিভাগকে দিয়ে মূল্য নির্ধারণ না করে তড়িঘড়ি গাছটির নিলাম দেওয়া হয়েছে। গাছটি এভাবে কেটে নেওয়া হলে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে নষ্ট হবে এলাকার সৌন্দর্য ও পরিবেশ। গাছটির নিলাম ডাক বন্ধের দাবি জানিয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ নওগাঁ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে স্থানীয়রা।
মান্দা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহসীন রেজা বলেন, ‘গাছের পাশেই আমার বাড়ি। গরমে প্রচুর মানুষ এর ছায়ায় বিশ্রাম নেয়। এ কারণে গোড়ার চারপাশ বাঁধাই করে দেওয়া হয়েছে। সামান্য একটা ডাল ভাঙলে কখনো পুরো গাছ ঝুঁকিপূর্ণ হয় না। শত বছর ধরে গাছটা ঝড়-বাদল রুখে টিকে আছে। একে রক্ষা করার জন্য এলাকাবাসী বদ্ধপরিকর।’
মান্দা ইউপির চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ হিন্দোল বলেন, ‘ইউএনওর অনুমতি নিয়ে এলাকায় মাইকিং করে পাকুড়গাছটির প্রকাশ্যে নিলাম দেওয়া হয়েছে।’
মান্দার ইউএনও আব্দুর রহিম বলেন, ‘গাছটি ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে আবেদন করেন স্থানীয় চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ হিন্দোল। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বন বিভাগকে দিয়ে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে নিলাম দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রকাশ্য নিলামে ডাক কম হলে কিছুই করার নেই। তবে গাছটি জেলা পরিষদের কি না, জরিপের পরই তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’