ঢাকা ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩১:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭
  • ৩৫৯ বার
হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুই হাওরের মাঝখানে শান্তিপুর গ্রাম। পশ্চিমে আঙ্গারুলি, পূর্বে খরচার হাওর। প্রতিবছর নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই হাওরের পানি নেমে যায়। এবার ডিসেম্বরেও নামেনি। তাই দূর থেকে মনে হয়, গ্রামটি পানির উপর ভাসছে। শুধু এ দুটি হাওরই নয়, সবগুলো হাওরের পানি এখনো পুরোপুরি নামেনি। এখানকার লোকজন শুকনো মৌসুমে কৃষি কাজ করেন। আর বর্ষায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এই জীবনেও এখন ছন্দপতন ঘটেছে। প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ বাড়ছে হাওরের জীবনে। বেঁচে থাকাই যেন দায় হয়ে পড়েছে হাওরের বাসিন্দাদের। যে কারণে বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে অনেকে শহরমুখী হচ্ছেন।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি হাওর বার্তাকে বলেন, আগামীতে হাওরে ধান আবাদ করা যাবে কিনা এটাই এখন হাওরবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, আগে বোরো আবাদ ঘরে তোলার শেষের দিকে বন্যা আসত। আর এখন ধান গাছে ধান না আসতেই বন্যায় সব ভেসে যাচ্ছে। অন্যদিকে নভেম্বরের শুরুতেই হাওর থেকে পানি নেমে গেলেও এখন ডিসেম্বরেও নামছে না। যদি ফসলই ফলানো না যায় তা হলে হাওরবাসী বাঁচবে কি করে? তিনি বলেন, হাওরের সাধারণ মানুষের মাছ ধরার অধিকার নেই। ইজারাদাররা হাওরের ইজারা নিয়ে সাধারণ মানুষকে মাছ ধরতে দিচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হাওরের উন্নয়নের জন্য সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রয়োজন। হাওরকে জয় করা না গেলেও কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে বিষয়ে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। হাওর অঞ্চলে মাছ চাষিদের প্রত্যাশা সারা বছরই পানি থাকুক। এতে তাদের মাছ আহরণে সুবিধা হয়। অন্যদিকে ধান চাষিরা চান যত দ্রুত হাওরের পানি নেমে যাক। তা হলে তারা ধান বা অন্য ফসল চাষ করে ঘরে তুলতে পারবেন।
এ জন্য অনেক সময় তারা পানি যাতে দ্রুত নেমে যেতে পারে সে জন্য বাঁধ কেটে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া কোনো কোনো জনগোষ্ঠী চায় হাওরে বন বা হোগলা পাতা থাকুক। আবার কোনো অংশ চায় বন কেটে ফেললেই তাদের সুবিধা হয়। এ ধরনের বহুমুখী চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী বসবাস করে হাওরে। এদের চাহিদাগুলো এক জায়গায় নিয়ে এসে সমন্বয় করাটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া হাওরে ইজারা প্রথা রয়েছে। ফলে হাওরে যখন প্রচুর পানি থাকে, তখন সবাই মাছ ধরতে পারে। কিন্তু পানি কমে গেলে ইজারাদাররা সাধারণ হাওরবাসীকে মাছ ধরতে দেয় না। এ রকম নানা সমস্যা রয়েছে হাওরে।
এ দিকে ২০১২ সালে হাওরাঞ্চলের উন্নয়নে ২০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা করা হলেও তা বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই। ১৫৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও মাত্র ৪০টি প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। অথচ এ পরিকল্পনার সঙ্গে  কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেট, জেলার প্রায় ২০ লাখ হেক্টর আয়তনের হাওরাঞ্চলের অন্তত ২ কোটি মানুষের জীবনযাত্রা জড়িত। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে হাওরাঞ্চলে যোগাযোগ, মত্স্য, বিদ্যুত্, কৃষি, বনায়ন, পানি সম্পদ, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হাওর বার্তাকে বলেন, হাওরাঞ্চল নিয়ে যে মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে হাওরবাসীর দুঃখ ঘুচবে না। তিনি বলেন, হাওরের পানিকে তার স্বাভাবিক পথে চলতে দিলে এই পানি ক্ষতির কারণ হবে না। কিন্তু পলি পড়ে নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ার কারণে পানি ছড়িয়ে পড়ে খেত খামারে। হাওর বন্যা সমস্যার সমাধানের জন্য নদী খননের কোনো বিকল্প নেই।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

আপডেট টাইম : ১০:৩১:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭
হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুই হাওরের মাঝখানে শান্তিপুর গ্রাম। পশ্চিমে আঙ্গারুলি, পূর্বে খরচার হাওর। প্রতিবছর নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই হাওরের পানি নেমে যায়। এবার ডিসেম্বরেও নামেনি। তাই দূর থেকে মনে হয়, গ্রামটি পানির উপর ভাসছে। শুধু এ দুটি হাওরই নয়, সবগুলো হাওরের পানি এখনো পুরোপুরি নামেনি। এখানকার লোকজন শুকনো মৌসুমে কৃষি কাজ করেন। আর বর্ষায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এই জীবনেও এখন ছন্দপতন ঘটেছে। প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ বাড়ছে হাওরের জীবনে। বেঁচে থাকাই যেন দায় হয়ে পড়েছে হাওরের বাসিন্দাদের। যে কারণে বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে অনেকে শহরমুখী হচ্ছেন।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি হাওর বার্তাকে বলেন, আগামীতে হাওরে ধান আবাদ করা যাবে কিনা এটাই এখন হাওরবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, আগে বোরো আবাদ ঘরে তোলার শেষের দিকে বন্যা আসত। আর এখন ধান গাছে ধান না আসতেই বন্যায় সব ভেসে যাচ্ছে। অন্যদিকে নভেম্বরের শুরুতেই হাওর থেকে পানি নেমে গেলেও এখন ডিসেম্বরেও নামছে না। যদি ফসলই ফলানো না যায় তা হলে হাওরবাসী বাঁচবে কি করে? তিনি বলেন, হাওরের সাধারণ মানুষের মাছ ধরার অধিকার নেই। ইজারাদাররা হাওরের ইজারা নিয়ে সাধারণ মানুষকে মাছ ধরতে দিচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হাওরের উন্নয়নের জন্য সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রয়োজন। হাওরকে জয় করা না গেলেও কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে বিষয়ে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। হাওর অঞ্চলে মাছ চাষিদের প্রত্যাশা সারা বছরই পানি থাকুক। এতে তাদের মাছ আহরণে সুবিধা হয়। অন্যদিকে ধান চাষিরা চান যত দ্রুত হাওরের পানি নেমে যাক। তা হলে তারা ধান বা অন্য ফসল চাষ করে ঘরে তুলতে পারবেন।
এ জন্য অনেক সময় তারা পানি যাতে দ্রুত নেমে যেতে পারে সে জন্য বাঁধ কেটে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া কোনো কোনো জনগোষ্ঠী চায় হাওরে বন বা হোগলা পাতা থাকুক। আবার কোনো অংশ চায় বন কেটে ফেললেই তাদের সুবিধা হয়। এ ধরনের বহুমুখী চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী বসবাস করে হাওরে। এদের চাহিদাগুলো এক জায়গায় নিয়ে এসে সমন্বয় করাটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া হাওরে ইজারা প্রথা রয়েছে। ফলে হাওরে যখন প্রচুর পানি থাকে, তখন সবাই মাছ ধরতে পারে। কিন্তু পানি কমে গেলে ইজারাদাররা সাধারণ হাওরবাসীকে মাছ ধরতে দেয় না। এ রকম নানা সমস্যা রয়েছে হাওরে।
এ দিকে ২০১২ সালে হাওরাঞ্চলের উন্নয়নে ২০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা করা হলেও তা বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই। ১৫৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও মাত্র ৪০টি প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। অথচ এ পরিকল্পনার সঙ্গে  কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেট, জেলার প্রায় ২০ লাখ হেক্টর আয়তনের হাওরাঞ্চলের অন্তত ২ কোটি মানুষের জীবনযাত্রা জড়িত। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে হাওরাঞ্চলে যোগাযোগ, মত্স্য, বিদ্যুত্, কৃষি, বনায়ন, পানি সম্পদ, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হাওর বার্তাকে বলেন, হাওরাঞ্চল নিয়ে যে মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে হাওরবাসীর দুঃখ ঘুচবে না। তিনি বলেন, হাওরের পানিকে তার স্বাভাবিক পথে চলতে দিলে এই পানি ক্ষতির কারণ হবে না। কিন্তু পলি পড়ে নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ার কারণে পানি ছড়িয়ে পড়ে খেত খামারে। হাওর বন্যা সমস্যার সমাধানের জন্য নদী খননের কোনো বিকল্প নেই।