ঢাকা ১২:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইফা ডিজির দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০১:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ৩০৮ বার

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক সামীম মো. আফজালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তিনিসহ মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পের আরও ৩৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মৌখিক নির্দেশে সরকারি চাকরিতে দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, ফিল্ড অফিসার পদে অতিরিক্ত নিয়োগ, প্রশিক্ষণের অর্থ আত্মসাৎ, ভুয়া বিল করে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

এমনকি তার এ অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে প্রকল্প পরিচালক এ এম এম সিরাজুল ইসলামের যোগসাজশও রয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

অভিযোগ অনুসন্ধানে মঙ্গলবার কমিশন থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু নথিপত্র চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও দুদক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

অভিযোগে বলা হয়, মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পে নিয়োগপত্র ছাড়াই বছরের পর বছর কাজ করছেন ৩৮ কর্মকর্তা। মৌখিক নির্দেশে ব্যবহার করছেন প্রকল্পের মোটরবাইক। তাদের স্বাক্ষরেই ব্যাংক থেকে তোলা হচ্ছে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা।

ইফা ডিজির মৌখিক নির্দেশে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে সরকারি কোনো নিয়োগপত্র ছাড়াই দায়িত্ব পালন করে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন ১২ ফিল্ড অফিসার, ২৩ ফিল্ড সুপারভাইজার ও তিন মাস্টার ট্রেইনার। ২০১১ সালের জুন থেকে দায়িত্ব পালন করছেন তারা।

এছাড়াও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ভাতা হিসেবে প্রকল্পে রাখা সোয়া কোটি টাকা শিক্ষকদের না দিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে। দাওয়াতি মাহফিল নামক অনুষ্ঠানের নামে এ টাকা খরচ দেখানো হচ্ছে। এ মাহফিলে শিক্ষকদের নিজ খরচে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।

প্রকল্পে ভুয়া কেন্দ্র দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ঢাকা শহরে দুই হাজার ও চট্টগ্রাম শহরে দেড় হাজার কেন্দ্র রয়েছে কাগজে-কলমে। ঢাকার দুই হাজার কেন্দ্রের মধ্যে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ৪০টি, দক্ষিণ গেটে ২০টি ও কমলাপুর রেলস্টেশনে ১০টি কেন্দ্রের কথা বলা হয়েছে। এভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাসে ৭০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে কমিশন থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে নথিপত্র চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. জুলফিকার আলী এ নোটিশ করেছেন। নোটিশে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাহিদা অনুসারে নথিপত্র সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পের প্রজেক্ট কনসেপ্ট পেপার, অনুমোদিত ডিপিপি, আইএমইডি কর্তৃক প্রজেক্ট মূল্যায়ন প্রতিবেদন, প্রকল্পে নিয়োজিত ১২ জন ফিল্ড অফিসার, ২৩ জন ফিল্ড সুপারভাইজর ও তিন জন মাস্টার ট্রেইনার নিয়োগ সংক্রান্ত নথি ও নোটশিট। ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির বিলের কপি, প্রশিক্ষণ ও ভ্রমণভাতা খাতে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত বরাদ্দকৃত বাজেট ও বিল ভাউচার, বর্ধিত খাতসমূহের খরচের হিসাব বিবরণীর সত্যায়িত ছায়ালিপি দুদকে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে বর্ধিত প্রকল্পের কেন্দ্রসমূহের পূর্ণ ঠিকানা ও প্রকল্প পরিচালকসহ ওই সব কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম-ঠিকানা, মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পের সভার নোটিশ, রেজুলেশন ও অনুমোদন সংশ্লিষ্ট যাবতীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত ছায়ালিপি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৯২ সাল থেকে সারাদেশে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রকল্পটির এখন পঞ্চম ধাপ শেষ হয়েছে। ৬৪৩ কোটি টাকার এ প্রকল্পে সারাদেশের ৪৩ হাজার মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন কর্মরত আছেন। প্রায় ১২ লাখ শিশু লেখাপড়া করছে এ প্রকল্পের অধীন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ইফা ডিজির দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক

আপডেট টাইম : ১২:০১:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক সামীম মো. আফজালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তিনিসহ মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পের আরও ৩৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মৌখিক নির্দেশে সরকারি চাকরিতে দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, ফিল্ড অফিসার পদে অতিরিক্ত নিয়োগ, প্রশিক্ষণের অর্থ আত্মসাৎ, ভুয়া বিল করে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

এমনকি তার এ অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে প্রকল্প পরিচালক এ এম এম সিরাজুল ইসলামের যোগসাজশও রয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

অভিযোগ অনুসন্ধানে মঙ্গলবার কমিশন থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু নথিপত্র চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও দুদক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

অভিযোগে বলা হয়, মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পে নিয়োগপত্র ছাড়াই বছরের পর বছর কাজ করছেন ৩৮ কর্মকর্তা। মৌখিক নির্দেশে ব্যবহার করছেন প্রকল্পের মোটরবাইক। তাদের স্বাক্ষরেই ব্যাংক থেকে তোলা হচ্ছে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা।

ইফা ডিজির মৌখিক নির্দেশে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে সরকারি কোনো নিয়োগপত্র ছাড়াই দায়িত্ব পালন করে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন ১২ ফিল্ড অফিসার, ২৩ ফিল্ড সুপারভাইজার ও তিন মাস্টার ট্রেইনার। ২০১১ সালের জুন থেকে দায়িত্ব পালন করছেন তারা।

এছাড়াও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ভাতা হিসেবে প্রকল্পে রাখা সোয়া কোটি টাকা শিক্ষকদের না দিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে। দাওয়াতি মাহফিল নামক অনুষ্ঠানের নামে এ টাকা খরচ দেখানো হচ্ছে। এ মাহফিলে শিক্ষকদের নিজ খরচে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।

প্রকল্পে ভুয়া কেন্দ্র দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ঢাকা শহরে দুই হাজার ও চট্টগ্রাম শহরে দেড় হাজার কেন্দ্র রয়েছে কাগজে-কলমে। ঢাকার দুই হাজার কেন্দ্রের মধ্যে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ৪০টি, দক্ষিণ গেটে ২০টি ও কমলাপুর রেলস্টেশনে ১০টি কেন্দ্রের কথা বলা হয়েছে। এভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাসে ৭০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে কমিশন থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে নথিপত্র চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. জুলফিকার আলী এ নোটিশ করেছেন। নোটিশে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাহিদা অনুসারে নথিপত্র সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পের প্রজেক্ট কনসেপ্ট পেপার, অনুমোদিত ডিপিপি, আইএমইডি কর্তৃক প্রজেক্ট মূল্যায়ন প্রতিবেদন, প্রকল্পে নিয়োজিত ১২ জন ফিল্ড অফিসার, ২৩ জন ফিল্ড সুপারভাইজর ও তিন জন মাস্টার ট্রেইনার নিয়োগ সংক্রান্ত নথি ও নোটশিট। ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির বিলের কপি, প্রশিক্ষণ ও ভ্রমণভাতা খাতে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত বরাদ্দকৃত বাজেট ও বিল ভাউচার, বর্ধিত খাতসমূহের খরচের হিসাব বিবরণীর সত্যায়িত ছায়ালিপি দুদকে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে বর্ধিত প্রকল্পের কেন্দ্রসমূহের পূর্ণ ঠিকানা ও প্রকল্প পরিচালকসহ ওই সব কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম-ঠিকানা, মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পের সভার নোটিশ, রেজুলেশন ও অনুমোদন সংশ্লিষ্ট যাবতীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত ছায়ালিপি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৯২ সাল থেকে সারাদেশে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রকল্পটির এখন পঞ্চম ধাপ শেষ হয়েছে। ৬৪৩ কোটি টাকার এ প্রকল্পে সারাদেশের ৪৩ হাজার মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন কর্মরত আছেন। প্রায় ১২ লাখ শিশু লেখাপড়া করছে এ প্রকল্পের অধীন।