হাওর বার্তা ডেস্কঃ অথৈ পানিতে ছোট ছোট দ্বীপের মতো ভেসে থাকা হাওরাঞ্চলের গ্রামগুলো এখন চরম ঝুঁকিতে। নিরাপত্তাহীনতায়ও বেসামাল সেখানকার মানুষজন। প্রাকৃতিক বৈরিতা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সুবিধার অভাবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও। চারিগ্রামে ফাইভ মার্ডারের ঘটনার পর আতঙ্ক আর উদ্বেগ গ্রাস করেছে সমগ্র হাওরাঞ্চলকে।
দিনে-দুপুরে চারিগ্রামে দুই দলের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত ও অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় উভয়পক্ষের মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় ২৫০ জনকে।
‘আমাদের গ্রামে এখন আর কোনো পুরুষ নেই, পুরো এলাকাই পুরুষশূন্য। মামলায় গ্রেফতার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছে লোকজন’- এভাবেই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন কিশোরগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাওন শাহরিয়ার।
হাওরের মানুষ এখন জীবনের নিরাপত্তার বিষয়েই বেশি চিন্তিত। অতিবৃষ্টি বা বন্যার মতো দুযোগের চেয়ে আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা বেশি ভাবাচ্ছে তাদেরকে’।
কিশোরগঞ্জের পূ্র্বাঞ্চলীয় ইটনা, মিটামন, অষ্টগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ ও দুর্গম হাওরাঞ্চল জেলার মোট আয়তনের প্রায় তিনভাগের একভাগ হলেও প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা সেখানে অপ্রতুল। নাগরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার নয়। শত শত মানুষ দিনের বেলায় প্রকাশ্য লড়াই করে নিজেদের মধ্যে খুন-জখম করলেও সেটি ফেরাতে পারেননি আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিতরা।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাওরবাসী বলছেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিরূপ পরিবেশের প্রতিকূল জীবনের পাশাপাশি নাগরিক নিরাপত্তাহীনতা, সামাজিক সুরক্ষার অভাব ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি বেড়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে হাওরের জীবন-যাপন। প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রাণবৈচিত্র্য ও পর্যটন সম্ভাবনার হাওরাঞ্চলের উন্নয়ন-অগ্রগতি, আধুনিকায়ন ও সমৃদ্ধি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
ইটনার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অপরেশ তলাপাত্র বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোতে নৌ-পথে দ্রুত যাতায়াতে যথেষ্ট সংখ্যক আধুনিক নৌ-যান পুলিশের নেই। মান্ধাতার আমলের নৌকা দিয়ে পুরো হাওরাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও অসম্ভব’।
‘শুধু আইন-শৃঙ্খলাজনিত নিরাপত্তাহীনতাই নয়, চিকিৎসা ও অন্যান্য প্রয়োজনে যাতায়াতেও মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই’- বলেন।
বাংলানিউজ