হাওর বার্তা ডেস্কঃ বর্ষা মওসুমে ক্ষনিকের জন্য যৌবনবর্তী হয়ে পদ্মা এখন আবার বিশাল বালিচরের নীচে চাপা পড়ছে। গত মাস থেকেই চরের বিস্তৃতি বাড়ছে। যতদিন যাচ্ছে কমছে পানি। বাড়ছে চর। সেই জেগে ওঠা চরে যেখানে একটু পলি পড়েছে সেখানে আবাদের নেমেছে কৃষক। ক’দিন আগে যেখানে চলেছে নৌকা এখন সেখানে চলছে ট্রাক্টর।
চাষ দিয়ে জমি তৈরী করা হচ্ছে। চর জমিদাররা লাঠিয়াল নিয়ে হামলে পড়েছে। ফি বছর এমনটি হয়। চলে চরের জবর দখল। চরের প্রকৃত বাসিন্দারা এসব জমিতে কামলা খাটে। নদী ভাঙ্গনে সব হারানো এসব মানুষকে প্রশাসন থেকে পুর্নবাসনের জন্য নদীর মাঝ বরাবর জেগে ওঠা চরে যা মধ্যচর নামে পরিচিত ঘরের জায়গা দেয়া হয়। গত ক’বছরে গড়ে ওঠে কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি। কথা ছিল এরাই চরের জমি পাবে। কিন্তু কাযত তা হয়নি।
সরেজমিন পদ্মার চরে গিয়ে দেখা যায়, পলি মাটিতে আবাদ শুরু হয়েছে বিভিন্ন ফসলের। গত মাস থেকে পানি নেমে যাবার সাথে থকথকে কাদায় জমি তৈরী করে ছড়ানো হয়েছিল মাস কলাই। আবাদ ভালই হয়েছে। এটি ঘরে তোলার পর আবাদ হবে মশুর সরিষা ছোলা মটর সহ বিভিন্ন শস্য। আবাদ হবে গম ও বোরো ধানের। এসবের প্রস্তুতি চলছে।
চরের বিস্তৃতি বাড়ায় ট্রাক্টর দিয়ে জমি তৈরী হচ্ছে। এরপর সেচের জন্য বসবে নদীর বুক ফুড়ে শ্যালো মেশিন। চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ হতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী পবা চারঘাট বাঘা পাবনার লালপুর ও হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে পর্যন্ত হাজার হাজার হেক্টর চরের জমিতে শুরু হয়েছে অন্য রকম কৃষি কর্মযজ্ঞ।
প্রতি বছর বিপুল পরিমান রবিশস্য ধান উৎপাদন হলেও চরের এসব জমির ফসলের হিসাব কৃষি বিভাগের খাতায় কোন সময় থাকেনা। এনিয়ে ভাবনাও নেই তাদের। পদ্মা চরের জমি আবার কোথাও সরকারী ভাবে চাষাবাদের জন্য লীজ দেয়া হয়। বিভিন্ন সমিতির নামে কৃষকরা একত্রিত হয়ে চাষাবাদ করে। চরের বেগুন কীটনাশক বিহিন টমেটো, করল্লা, পটলের আবাদও স্বাদের হয়।
এসবের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশী। ফারাক্কা দিয়ে পদ্মাকে মেরে ফেলার সাথে সাথে বদলে গেছে নদী কেন্দ্রীক হাজার হাজার মানুষের পেশা। নৌকার মাঝি জেলে সবাই বেঁচে থাকার তাগিদে পেশা বদলেছে। নৌকা জাল ছেড়ে রিক্সার প্যাডেলে পা রেখেছে কিংবা অন্য কোন কাজে লেগেছে। যারা বাপ দাদার পেশাকে ছাড়তে পারেননি তারা বর্ষায় ভরা পদ্মায় নৌকা জালনিয়ে ভাসে। মাছ ধরে।
শুকনো মওসুমে নদীর চরে কোদাল কাস্তে নিয়ে ঘাম ঝরিয়ে মরা পদ্মার বালিচরে মরুদ্যান করে তোলে। ফসল ফলানো স্বপ্ন দেখে। সব মিলিয়ে যা আবাদ হয় তার পরিমানও কম নয়। চরে গড়ে উঠেছে গোচারন ভুমি। প্রচুর গরু লালন পালন করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে মরা পদ্মার চরজুড়ে ব্যাস্ততা। পদ্মার চরে চাষাবাদে ফসলের প্রাপ্তিরও ক্ষনিকের আনন্দ হলেও নদী যে ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে তার বেদনা কম নয়।
নদী কেন্দ্রীক জীবীকা নির্ভর মানুষের কথা হলো আমরা সারা বছর ভরা পদ্মা দেখতে চায়। পদ্মা মরে যাবার সাথে যে ভয়াবহ বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে পরিত্রান চায়।