অর্থ পাচারকারী, সন্ত্রাসী ব্যক্তি ও সন্ত্রাসী সংগঠন যাতে অর্থ লন্ডারিং করার সুযোগ না পায় সে জন্য পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান।
শনিবার দুপুরে মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে “পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা (ক্যামেলকো) সম্মেলন-২০১৫”এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
ডেপুটি গর্ভনর বলনে, ম্যানুপুলেটরেরা ও কিছু কিছু কোম্পানির অসৎ মালিক অথবা কর্মকর্তারা কোম্পানির সংবেদনশীল তথ্য কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণের অবৈধ অর্থের মালিক হয়ে যায় যা রাষ্ট্র, সমাজ তথা ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে। গ্রাহকের পেশার বিবরণ বিস্তারিতভাবে গ্রহণ না করা ও অর্থের উৎস নিশ্চিত না হয়ে পুঁজি বাজারে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে দিলে মানি লন্ডারিং হতে পারে যা এ মার্কেটের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি বলেন, লো প্রাইস শেয়ার, নতুন শেয়ার, শেল কোম্পানির শেয়ার, দুর্বল আর্থিক অবস্থা সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার, সমাজের অসৎ প্রভাবশালী ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানির শেয়ার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব শেয়ার ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে করে মানি লন্ডাররা বা সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা সন্ত্রাসী সংগঠন কোনোক্রমেই তাদের অর্থ লন্ডারিং করার সুযোগ না পায়। এ ধরনের কার্যক্রম সৃষ্টিতে বাধা প্রদান ও সতর্ক হতে হবে।
আবু হেনা বলেন, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি তাদের সার্ভিস প্রদানের ক্ষেত্রে স্পনসার ডাইরেক্টর, বেনিফিসিয়াল ওনার, আইপিও প্লেসমেন্ট হোল্ডারদের যথাযথভাবে কেওযাইসি সম্পন্ন করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান সিকিউরিটিজ কাস্টোডিয়ান সার্ভিস প্রদান করে থাকে তাদেরকেও আন্ডার লাইং কাস্টমার এর কেওয়াইসি সম্পন্ন করা হয়েছে। কারণ, এ সকল বিষয় এমএল অ্যান্ড টিএফ এর বিবেচনায় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যা দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করতে হবে।
উপস্থিত পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু আইন প্রণয়ন বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়নই শেষ কথা নয়। আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। আইন প্রয়োগে বা বাস্তবায়নে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড প্রণয়নকারী সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স এর প্রণীত ৪০টি রিকমেনডেশনের আলোকে দেশসমূহকে নিজ নিজ অঞ্চলে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং বিএফআইইউ এর ডেপুটি হেড ম. মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিস এক্সচেঞ্জ কমিশনার মো. আমজাদ হোসেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির প্রিন্সিপাল কে.এম. জামশেদুজ্জামান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা।
দিনব্যাপী এ সম্মেলনের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও বিএফআইইউ এর অপারেশনাল হেড মো. নাসিরুজ্জামান। সম্মেলনে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ১৬০টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০০জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।